বিপিএল বর্জনের হুমকি রংপুরের!

বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় চলে। নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। এখানে বিশেষ একটি দলের জন্য গত তিন বছরে তিনবার নতুন নতুন নিয়ম করা হয়েছে। -ইশতিয়াক সাদেক

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিতর্ক ছাড়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)! সেটা বোধহয় দুঃস্বপ্ন। বিপিএলের কোন আসরটা বিতর্কিত হয়নি? এই ঝামেলা নইলে ওই ঝামেলা। ঝামেলার শেষ নেই দেশের সবচেয়ে বড় এই টুর্নামেন্টে। ষষ্ঠ আসরেও বিতর্ক কম হয়নি। সেসব বিতর্ক পেছনে ফেলে অপেক্ষা এবার সপ্তম আসরের। কিন্তু না। সপ্তম আসর শুরু হতে বাকি এখনো চার মাস। তার আগেই শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক। ২০১২ সালে বিপিএলের শুরুর সময় বিপিএল বাইলজের নিয়ম অনুযায়ী বলা হয়েছিল ষষ্ঠ আসর পর্যন্ত এক নিয়মে চলবে বিপিএল। সপ্তম আসর থেকে শুরু হবে নতুন নিয়মে। নতুন আসর মানেই নতুন নিয়ম। আর তাই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অভিযোগ, নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দিতে যখন যা করা প্রয়োজন তাই করে আসছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল! বিগ বাজেটের দল রংপুর রাইডার্সের কাছে এরকম ভূরি ভূরি অভিযোগ আছে। তবে সেসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই তাদের। মাঠ তাদের কাছে জবাব দেয়ার মঞ্চ। তাই মাঠেই পারফর্ম করতে চায় রংপুর। কিন্তু বিপিএলের পরবর্তী আসর থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন তারা! বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, রংপুর রাইডার্স ও সাকিব আল হাসানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তা 'অবৈধ'। কয়েকদিন আগে বেশ ঘটা করেই বিপিএলের দল বদলেছেন সাকিব। ওয়ানডের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ঢাকা ডায়নামাইটস থেকে নাম লিখিয়েছেন রংপুর রাইডার্সে। কিন্তু বিসিবি স্পষ্টভাবেই জানিয়েছে, দলগুলোর সঙ্গে বিপিএলের এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি না হওয়ায় সাকিবের এই দলবদলের গ্রহণযোগ্যতা নেই তাদের কাছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য মাহবুব আনাম বলেছেন, তারা সাকিব ও রংপুর রাইডার্সের মধ্যে চুক্তির ব্যাপারটি আমলে নেয়নি। বিপিএলের সপ্তম আসরের নতুন করে খেলোয়াড় নিলাম হবে, যা আগামী চার বছরের চক্র থাকবে এবং বহাল রাখার নীতি কার্যকর হবে। মাহবুব আনাম স্পষ্ট বলে দেন, আগামী বিপিএলের জন্য নতুন করে খেলোয়াড় নিলাম হবে। আগের যত চুক্তি ছিল সেসব আর কার্যকর থাকছে না। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এমন ঘোষণার পর বেঁকে বসেছে রংপুর রাইডার্স কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বিসিবি তাদেরকে মৌখিক ও লিখিতভাবে আগেই জানিয়েছে, টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিতে। শুধু রংপুর নয়, এমন দাবি করেছে কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্স, খুলনা টাইটান্স ও রাজশাহী কিংস। গত ১১ মে বিসিবির অফিসিয়াল প্যাডে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনের স্বাক্ষরসহ একটি চিঠি দেয়া হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। তাতে স্পষ্ট করে বলা হয়, আগামী আসরের প্রস্তুতি নিতে এবং যদি কোনো বকেয়া থাকে তা পরিশোধ করতে। রংপুর রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক সাদেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'প্রতি বছর একটা না একটা নতুন নিয়ম নিয়ে আসে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। প্রথম বছর আমরা যখন এলাম তখন আনলিমিটেড বিদেশি খেলোয়াড়। এ পস্নস কিংবা আইকন যেকোনো টপ খেলোয়াড়কে বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল। পরের বছর দেশি-বিদেশি মিলিয়ে চার রিটেইন। চার বিদেশির বেশি খেলানো যাবে না। এবার বলছে, কোনো রিটেইন নেই। সব নতুন করে। আমার প্রশ্ন- যদি সব শুরু থেকেই শুরু করতে হয় তাহলে ওরকম চিঠি পাঠানোর দরকার কী ছিল? আর এত লম্বা প্রসেস কেন হুটহাট করা হচ্ছে? বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনায় চলে। নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। এখানে বিশেষ একটি দলের জন্য গত তিন বছরে তিনবার নতুন নতুন নিয়ম করা হয়েছে।' রংপুর রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী ইশতিয়াক সাদিক বলেন, প্রতি আসরে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ করে দল চালাই। বিসিবির আরও অনেক দল রয়েছে, তাদের খেলানো হোক। তবে মাহবুব আনাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, খুব শিগগিরই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চিঠি দেয়া হবে। তাদের সঙ্গে বসবে বিপিএল গভর্নিং কমিটি। এবারের বিপিএলে অংশ নিচ্ছে না পুরানো মালিকানায় চিটাগং ভাইকিংস। শঙ্কা আছে সিলেট সিক্সার্স ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েও। তবে এই দুদলের মালিকানা সমস্যা হলেও, বিপিএল গভর্নিং কমিটি জানায়, দল বাড়তে পারে বিপিএলের সপ্তম আসরে। সেটা সর্বোচ্চ আট দল। বিপিএলের শুরুর আসরে অংশ নিয়েছিল ৬টি দল। ২০১৩ সালে বিপিএলে দল বেড়ে সাত হয়। সেবার বিপিএলে যোগ দেয় রংপুর রাইডার্স। তাদেরও পরিবর্তন হয় মালিকানার। ঢাকা গস্ন্যাডিয়েটর্সের নামের সঙ্গে পরিবর্তন আসে মালিকানায়ও। এমনটা অনেক দলেরই পরিবর্তন হয় দলের নামের মালিকানার। বরিশাল বুলস তো শৃঙ্খলাজনিত ঝামেলায় পড়ে বাদ হয়েছে বিপিএল থেকেই। খেলতে পারেনি ষষ্ঠ আসরে। তবে মালিকানা বদলে সপ্তম আসরে যোগ দিতে পারে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি। গুঞ্জন আছে নোয়াখালী নামেও সপ্তম আসরে যোগ হতে পারে একটি দল। বিপিএলের এই দ্বিতীয় সাইকেলে আগামী চার বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হবে সপ্তম আসরে অংশ নেয়া দলগুলো। সাকিবের সঙ্গে এবার মুশফিক ও তামিমও দল পাল্টাচ্ছেন। মুশফিক চিটাগং ছেড়ে যাচ্ছেন কুমিলস্নায়। তামিম কুমিলস্না ছেড়ে খুলনায়। মনে হচ্ছে, সাকিবের দলবদলের কারণে বাতিল হচ্ছে তাদের ট্রান্সফারও।