আছেন শুধু সেই সাকিব ও মুশফিক

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই দুজনই এখন সিনিয়রিটির শীর্ষে। তাদের শুরুর সময় থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক উত্থান-পতন দেখেছে। তারা দুজনও ক্যারিয়ারের এপিঠ-ওপিঠ দেখেছেন। সাফল্যের আনন্দে হেসেছেন। আবার সময়ের কশাঘাত-যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু কখনো হাল ছাড়েননি

প্রকাশ | ০৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান (বাঁ থেকে)
ক্রীড়া প্রতিবেদক পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটা ততদিনে জিতে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে ৩-১ ব্যবধানে। সিরিজের পঞ্চম এবং শেষ ওয়ানডে ম্যাচ কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! সেই আনুষ্ঠানিকতার সুযোগে দলে দুজন নতুন ক্রিকেটারকে সুযোগ দিলো বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিক রহিম। ভেনু্য হারারে। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। তারিখ ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। এখন ২০১৯ সালের আরেকটি ৬ আগস্ট। ১৩ বছর আগের সেই দলের একজন ক্রিকেটারও এখন জাতীয় দলে নেই। আছেন শুধু সেই দুজন-সাকিব ও মুশফিক। মুশফিকের অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয়টা আরো একটু আগের। ওয়ানডে খেলার আগেই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক তার। ২০০৫ সালের লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বয়সে মুশফিকের চেয়ে সাকিব মাস কয়েকের সিনিয়র। কিন্তু বিকেএসপিতে সাকিবের চেয়ে কিছুটা সিনিয়র মুশফিক। আর তাই সেই সিনিয়রিটির সূত্রে সাকিব ডাকেন-মুশফিক ভাই! বাংলাদেশ ক্রিকেটে এই দুজনই এখন সিনিয়রিটির শীর্ষে। তাদের শুরুর সময় থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক উত্থান-পতন দেখেছে। তারা দুজনও ক্যারিয়ারের এপিঠ- ওপিঠ দেখেছেন। সাফল্যের আনন্দে হেসেছেন। আবার সময়ের কষাঘাত-যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু কখনো হাল ছাড়েননি। আর সেজন্যই তারা এখনো শীর্ষে। তারা এখনো লড়াইয়ে। সঙ্গের অনেকে বিচু্যত। হারিয়ে যাওয়ার স্মৃতির অতলে! ৬ আগস্ট সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের 'জন্মদিন'। এদিন কোনো কেক-টেক কাটেন না। তবে ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট হারারের মাঠের সেই ম্যাচ, সেই স্মৃতি, সেই পারফরমেন্স নিশ্চয়ই তার মনে আছে। বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৩৯ রানে ১ উইকেট। আর চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ বলে অপরাজিত ৩০ রান। জীবনের প্রথম ম্যাচেই অলরাউন্ড পারফরমেন্স। সাফল্যের সেই শুরু। এখন ক্যারিয়ারের ২০৬টি ওয়ানডের পরও সাকিব আল হাসানই বাংলাদেশ একাদশের সবচেয়ে প্রভাবী ক্রিকেটার। বিশ্ব ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবের্ যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান পেয়েছেন। তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই একসময় নাম্বার ওয়ানের মর্যাদা পেয়েছিলেন সাকিব। নিজের ক্রিকেটকে কিভাবে সাধারণ স্তর থেকে উচ্চতার শীর্ষে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হয়-সাকিব সেটা করে দেখিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট পেছনের ৩৩ বছরের ইতিহাসে এখনো 'সর্বোচ্ছ শ্রেষ্ঠত্বের' কাতারে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু সেই দলের ক্রিকেটার সাকিব ঠিকই নিজের ক্রিকেট এবং নিজস্ব ক্রিকেট সত্তাকে তুলে এনেছেন নাম্বার ওয়ানের মর্যাদায়। সাকিবের ক্রিকেট দার্শনিকতা এবং তার যথাযথ পরিস্ফুটনে বাকিদের সঙ্গে বড়ো পার্থক্যটা এখানেই! জয়ে শুরু তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার। এখনো জিতে চলেছেন ম্যাচ-মন-হৃদয়, আরো অনেক কিছু। মাঝে যে সঙ্কট আসেনি, তা নয়। এসেছে। কিন্তু কঠিন পথ এবং সঙ্কট কাটিয়ে যে জিততে জানে-সেই তো আসল বিজয়ী। অধিনায়কত্বের প্রথম ধাপে যে ধাক্কা খেয়েছিলেন সেখান থেকে অনেককিছু শিখেছেন বলেই এখন আবার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৩ বছর পরে সাকিবই ফের অধিনায়ক। তাকে নিয়ে, তাকে ঘিরেই আবর্তিত স্বপ্ন ছড়ানো বাংলাদেশের সামনের দিনের ক্রিকেট।