এত সাংবাদিক দেখে অভিভূত ডমিঙ্গো

ক্রিকেট নিয়ে এদেশের মানুষের আগ্রহ এতটাই প্রবল যে, আমাকে এটি ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো প্রেস কনফারেন্সে আপনি সর্বোচ্চ আট-নয়জন সাংবাদিক দেখবেন। আমি আমার জীবনে এত প্রতিবেদক দেখিনি! মঙ্গলবার বিমানবন্দরে প্রায় একশ' সাংবাদিক ছিলেন। এই অঞ্চলের বিষয়টি আমাকে আকর্ষণ করে

প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
রাসেল ডমিঙ্গো বাংলাদেশে প্রথম এসেছিলেন ২০০৪ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ হয়ে। পরেও এসেছেন কয়েকবার। এবার টাইগারদের হেড কোচ হয়ে আসা এ প্রোটিয়া। সঙ্গত কারণেই সংবাদমাধ্যমের প্রবল আগ্রহ তাকে ঘিরেই। যা রীতিমতো অবাক করেছে নতুন হেড কোচকে। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নিজের প্রাথমিক চারটি লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দেন ডেমিঙ্গো। মূলত খেলোয়াড়দের সম্পর্কে ভালো ধারণা নেয়া এবং তাদের আস্থা অর্জনের দিকেই বেশি মনোযোগী তিনি। ডমিঙ্গো বলেন, 'আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো প্রথমত, খেলোয়াড়দের ভালোভাবে দেখা, তাদের সম্পর্কে ধারণা নেয়া, সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি এবং খেলোয়াড়দের আস্থা অর্জন করা।' ডমিঙ্গো নতুন অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ঢাকায় এসেছেন মঙ্গলবার বিকেলে। বিমানবন্দরে নেমে দেখেছেন সাংবাদিকদের ভিড়। বুধবার সকালে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকে দেখেন তার সামনের কোনো আসনই ফাঁকা নেই। উপস্থিত দেশের প্রায় সব মিডিয়া। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গো জানালেন, ক্রিকেট নিয়ে এদেশের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার ব্যাপারটি আগ্রহ তৈরি করেছে বাংলাদেশের কোচ হতে। ডমিঙ্গো বলেন, '২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশে এসেছিলাম, অবশ্য সেটি অনেক আগের কথা। সত্যি বলতে ক্রিকেট নিয়ে এদেশের মানুষের আগ্রহ এতটাই প্রবল যে আমাকে এটি ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো প্রেস কনফারেন্সে আপনি সর্বোচ্চ আট-নয়জন সাংবাদিক দেখবেন। আমি আমার জীবনে এত প্রতিবেদক দেখিনি! গতকাল (মঙ্গলবার) বিমানবন্দরে প্রায় একশ সাংবাদিক ছিল। এই অঞ্চলের এই বিষয়টি আমাকে আকর্ষণ করে।' ডমিঙ্গোর কর্মপরিকল্পনা শুনেই বিসিবি বুঝে গিয়েছিল কোচিং নিয়ে প্রবল আগ্রহের ব্যাপারটি। যে কারণে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে হেড কোচ হিসেবে। সুযোগ পেলেই তাই সাংবাদিকরা সেই কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইছেন নতুন কোচের কাছে। তিনি কিছুটা আগ্রহ মেটালেনও, 'এটা খুবই মজার যে সবাই আমাকে প্রেজেন্টেশন নিয়ে প্রশ্ন করছে। কারণ আমি ক্রিকেটের বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে কাজ করেছি। অনূর্ধ্ব-১৫, ১৯ এবং আন্তর্জাতিক। জানি কীভাবে কোন পদ্ধতিতে কাজ করতে হয়। সত্যি বলতে আমি কোচিংয়ের পদ্ধতির ব্যাপারে খুবই সচেতন এবং মনে করি এটা জাতীয় দলকে গুরুত্ব দিয়েই করতে হবে। প্রেজেন্টেশনটি ছিল কী করে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের উন্নতি করানো যায় এবং একটি টেকশই উন্নয়নের পথে দলকে নিয়ে যাওয়া যায়।' সখ্য গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্রিকেটারদের আস্থা অর্জন করতে চান বাংলাদেশের নতুন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। টাইগার কোচ জানান, সামনের কয়েকদিন তার প্রথম কাজ হবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা, 'আমার প্রথম লক্ষ্য ক্রিকেটারদের কাছাকাছি যাওয়া এবং সামনের এক বা দুই সপ্তাহে তাদের সম্পর্কে জানা, সম্পর্ক তৈরি করা। আমি মনে করি এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করব তাদের আস্থা অর্জনের। প্রথমত তাদের দেখার, কীভাবে তারা তাদের কাজ করে এবং সেখান থেকেও কিছু জানার।' নতুন স্বপ্ন নিয়ে নতুন ভাবে কোচিং স্টাফ সাজিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। প্রধান কোচ স্টিভ রোডসের বিদায়ের সঙ্গে বিদায় দেয়া হয় পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, স্পিন কোচ সুনীল যোশিকেও। তাদের জায়গায় নতুন করে নিয়োগ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়া বিসিবি অবশেষে কোচ সমস্যার সমাধান করেছে। নতুন কোচিং স্টাফের চারজনই দক্ষিণ আফ্রিকান। আগে থেকেই আছেন ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক। নতুন করে যোগ হলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট। ডমিঙ্গো আর ল্যাঙ্গাভেল্ট দুজনই খুশি কোচিং স্টাফে স্বদেশীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। নিজেদের মানিয়ে নিতেও সুবিধা হবে বলে জানান দুই কোচ। নিজেদের মধ্যে ভাষা সমস্যা হবে না ভেবেও স্বস্তি পাচ্ছেন বলে জানান তারা। নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিতে চান দ্রম্নত। শিষ্যদের নিয়ে সেভাবেই এগিয়ে যেতে চান। খেলোয়াড়দেরও বার্তা দিলেন দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হবার। বিসিবি কর্তাদের হস্তেেপর কারণে, অতীতে বেশিরভাগ কোচই মন মতো কাজ করতে না পারলে, সেটা নিয়ে ভাবছেন না ডমিঙ্গো। বরং চাপ না নিয়ে দলের যোগ্যতাকে মাঠে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার দিকে নজর এ প্রোটিয়া কোচের, 'কোচ হিসেবে চাপকে পেছনে ফেলে আমরা সামনে এগোই। উপভোগ করতে চাই সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ। আমরা যদি আগেই জেনে যাই যে আমরা সব ম্যাচ জিতবই, তাহলে সেটা হবে দুনিয়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ। চাপ যখন আসবে, চ্যালেঞ্জ আসে তখন। উপভোগের ব্যাপারটাও তখন বেশি।'