স্বপ্নিল অভিষেকের সঙ্গী চোটের ছোবল

বাঁহাতে একটু ব্যথা পেয়েছি। মাসাকাদজা একটা বল সোজা জোরে মেরেছিল, ওইটা আটকাতে গিয়েছিলাম, একটু লেগেছে। ফিল্ডিংয়ের সময়। এখন আলস্নাহর রহমতে ভালোই লাগছে। ব্যথা কমেছে। ফিজিওর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি যা বলবেন, তাই করব। খেলব কি না এটা নির্ভর করছে টিম ম্যানেজমেন্টের ওপর। তারা যেভাবে বলবে, সেভাবেই করব। এখন হাত ভালোই মনে হচ্ছে - আমিনুল ইসলাম বিপস্নব

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
হঠাৎ করেই জাতীয় দলে ডাক মিলেছিল তার। অভিষেকটাও আচমকা হয়ে গেল বুধবার সাগরিকাতয়। স্বপ্নের মতো পথচলা শুরু। উজ্জ্বল অভিষেকের পর ইনজুরিতে পড়েছেন আমিনুল ইসলাম বিপস্নব। আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে মাঠে নামা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে এই লেগ স্পিনারের -বিসিবি
ঘরোয়া ক্রিকেটে তেমন কোনো নামডাক নেই, কিন্তু নেটের বোলিংয়েই নির্বাচকদের তুষ্ট করে জাতীয় দলের ডেরায় চলে এসেছিলেন জুবায়ের হোসেন লিখন। শুরুটাও করেছিলেন ভালো। প্রায় একইভাবে আমিনুল ইসলাম বিপস্নবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছে। এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে পুরোপুরি প্রমাণ করতে পারেননি। টুকটাক যা করেছেন তা ব্যাট হাতে। তবে টি২০ অভিষেকে ২ উইকেট নিয়ে ঝলক দেখিয়েছেন আমিনুল। লেগ স্পিনারের ঘাটতি এবার বুঝি পূরণ হতে চলল বাংলাদেশের। তবে আশার সূর্যের কোণে মেঘের শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। লিখনের মতো আমিনুলও না আবার ধুমকেতুর মতো দেখা দিয়ে হারিয়ে যান! বাংলাদেশের নির্বাচকরা যে পরিমাণ অস্থিরতায় ভোগেন, তাতে সে ভয়ও উড়িয়ে দেয়া যায় না। চলমান ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেই এমন উদাহরণ রেখেছেন নির্বাচকরা। শুরুতে আনকোরা পেসার ইয়াসিন আরাফাত মিশুকে দলে নিলেন তারা। স্কোয়াডে ফেরালেন এক টি২০ খেলা শেখ মেহেদী হাসানকে। কিন্তু কাউকেই খেলানো হলো না। এক ম্যাচ না যেতেই আবার নির্বাচকরা ফেরালেন আবু হায়দার রনিকে। কিন্তু তিনিও বাদ পড়লেন কোনো ম্যাচ না খেলেই। সেদিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন লেগি আমিনুল। আর প্রথম সুযোগের পুরোটাই তিনি কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে, নজর কেড়েছেন আলাদাভাবে। আমিনুলের মতো লিখনও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলেন। তিন সংস্করণেই তার প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। সেগুলো তার অভিষেক লিস্ট এ ও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ম্যাচও ছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব সংস্করণেই ২টি করে উইকেট দিয়ে শুরু করেছিলেন লিখন। হয়তো কিছুটা খরুচে ছিলেন, কিন্তু লেগ স্পিনারদের ঢঙটাই তো এমন। রান আটকানো নয়, উইকেট নেয়াই তাদের মূল কাজ। ঠিক লিখনের মতোই ২টি উইকেট নিয়ে শুরু আমিনুলের। তবে একটা জায়গায় নিজেকে ভিন্ন ভাবতে পারেন ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ। রান দেয়ায় ছিলেন কৃপণ। ৪ ওভারে খরচ করেন মাত্র ১৮ রান, ডট বল ছিল নয়টি। তরুণ আমিনুলের বোলিংয়ে লিগ স্পিনের জাদুকরী শিল্পের পুরো ছাপটা দেখা যায়নি। খুব বেশি টার্ন আদায়ও করে নিতে পারেননি। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এসব শেখার ব্যাপক সুযোগ থাকছে তার। মাত্রই তো শুরু। তাছাড়া এই কদিন আগেও তার পরিচয় ছিল টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান, লেগ স্পিনটা টুকটাক পারেন। সেই আমিনুলকে যখন জাতীয় দলে পাক্কা লেগি হিসেবে ডাকা হলো, তখন বুঝে নিতে হয়, প্রতিভার কমতি নেই তার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার আভাসও মিলেছে। বোলিংয়ে তাকে নড়বড়ে মনে হয়নি। বল ফেলেছেন জায়গামতো। বোঝা গেছে, ডেলিভারির ওপর তার নিয়ন্ত্রণ বেশ, বাংলাদেশের জার্সিতে আগে যারা লেগ স্পিনার হিসেবে খেলেছেন, তাদের মতো ওভারে দুই-তিনটি ফুলটস কিংবা অনেক বাইরে বল ফেলেননি। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলতে পেরেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচে এমন উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পর দলকে শুনতে হচ্ছে দুঃসংবাদ। ইনজুরিতে পড়েছেন আমিনুল। ফিল্ডিংয়ের সময় জিম্বাবুয়ের দলনেতা হ্যামিল্টন মাসাকাদজার একটি শট ফেরাতে গিয়ে বাঁ হাতে ব্যথা পেয়েছেন তিনি। লেগেছে তিনটি সেলাইও। বুধবার বাংলাদেশ ফাইনাল নিশ্চিত করার পর আমিনুলকে নেয়া হয় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম বলেছেন, 'মাসাকাদজার একটি শটে ফিল্ডিং করতে গিয়ে বাঁ হাতের তালুতে আঘাত পেয়েছেন আমিনুল ইসলাম বিপস্নব। ওই আঘাতে তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে খুব একটা গুরুতর মনে হচ্ছে না চোট। ফিজিও পরবর্তী পর্যবেক্ষণ করলে জানা যাবে সম্পূর্ণ বিষয়টি।' বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, 'বুধবার রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তিনটি সেলাই নিয়ে অনেককেই খেলতে দেখেছি আমি। তাছাড়া ওর চোট স্পিনিং হাতেও নয়। অবশ্য পরের ম্যাচ খেলতে পারবে কিনা এটা বলা কঠিন। ফিজিও ও টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে।' বৃহস্পতিবার টিম হোটেলে কথা বলেছেন এই ১৯ বছর বয়সী। এসেছিলেন হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে। কিন্তু মুখভর্তি ছিল হাসি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুতেই বেশ সাফল্য পাওয়া এ ক্রিকেটার ভাসছেন আলাদা রোমাঞ্চে। তাই তিনটি সেলাইয়ের পরও বলছেন সামান্য ব্যথা, 'হঁ্যা, বাঁ হাতে একটু ব্যথা পেয়েছি। মাসাকাদজা একটা বল সোজা জোরে মেরেছিল, ওইটা আটকাতে গিয়েছিলাম, একটু লেগেছে। ফিল্ডিংয়ের সময়।' তবে কি আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলছেন না আমিনুল? এমন শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন এ নবীন। এ ইনজুরিকে পাত্তাই দিচ্ছেন না তিনি, 'এখন আলস্নাহর রহমতে ভালোই লাগছে। ব্যথা কমেছে। ফিজিওর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি যা বলবেন, তাই করব। খেলব কি না এটা নির্ভর করছে টিম ম্যানেজমেন্টের উপর। তারা যেভাবে বলবে, সেভাবেই করব। এখন হাত ভালোই মনে হচ্ছে।'