মাশরাফির কাছে মাসাকাদজার চাওয়া

ক্লাব ক্রিকেটে মাশরাফির সঙ্গে খেলতে পারাটা দারুণ ব্যাপার ছিল। অনেক মানুষই জানে না তার গল্পটা। অনেক মানুষই জানে না সেকিসের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। আমার মনে আছে আমি একবার তাকে বলেছি, শোন তোমার অবশ্যই নিজের জীবন নিয়ে একটা বই লেখা উচিত।' তার জীবনের অভিজ্ঞতা অবশ্যই অনেক প্রেরণাদায়ক। - হ্যামিল্টন মাসাকাদজা

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে খেলে চলেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার হাত ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ পেয়েছে সফল্য। ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন এই দেশসেরা পেসার। আর তাই হ্যামিল্টন মাসাকাদজার চাওয়া জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে যেন বই লেখেন মাশরাফি ফটো
ক্রীড়া প্রতিবেদক দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচার। ছোট বড় মিলিয়ে ১৩বার ছুরিকাঁচির নিচে যাওয়া। মাশরাফির এমন জীবনযুদ্ধের গল্পটা প্রায় সব বাংলাদেশিই জানেন। কিন্তু আরও এমন অনেক গল্প, অনেক কষ্টই লুকিয়ে আছে তার মনে। কাছের লোকেরা হয়তো অল্প কিছু জানেন। কিন্তু ক্রিকেট ভক্তদের কাছে প্রায় সবটাই অজানা। আর সেই গল্পটা মাশরাফিকে বই আকারে লিখতে অনুরোধ করেছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে শুক্রবার শেষ ম্যাচ খেলতে নামা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের বিশ্বরেকর্ড গড়ে। দীর্ঘ পথচলায় শুক্রবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন মাসাকাদজা। ১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ, কখনো ঘরোয়া লিগ, কখনোবা বিপিএল খেলতে। এতবার আসা-যাওয়ার কারণে বাংলাদেশকে 'সেকেন্ড হোম' বলতে আপত্তি নেই তার। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে বিদায়টা বেশ ভালোভাবেই রাঙিয়ে নিয়েছেন মাসাকাদজা। বাংলাদেশে মাশরাফির সঙ্গে কাটানো সময়কেই 'সেরা স্মৃতি' হিসেবে সামনে আনলেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের সফল ওয়ানডে অধিনায়কের অজানা অনেক কিছু জানতে মাশরাফিকে বই লেখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। মাশরাফি ও মাসাকাদজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকটা প্রায় একই সময়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন মাশরাফির অভিষেক হয় তার অল্প কিছু দিন আগে হারারেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল মাসাকাদজার। আর সে ম্যাচেই নতুন ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি। অভিষেকে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন। পরে সে রেকর্ড অবশ্য ভেঙেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশে অবশ্য প্রথমবার এসেছিলেন ২০০৫ সালে। তখন মাশরাফি দলে নবীন হলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তখন থেকেই চেনা জানা। এরপর আরও আটবার জাতীয় দলের জার্সি গায়েই বাংলাদেশে এসেছেন মাসাকাদজা। আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তো খেলেছেন অনেকবারই। খেলেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল)। টাইগার অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গটা ভালোই পেয়েছেন। আর কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে তো একই তাঁবুতে থেকেছেন। সুখ-দুঃখের অনেক গল্পই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। তাই মাশরাফি সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন এই জিম্বাবুইয়ান। আর তাইতো বিদায় বেলায় বাংলাদেশের সুখস্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে মাসাকাদজা বললেন, 'ক্লাব ক্রিকেটে মাশরাফির সঙ্গে খেলতে পারাটা দারুণ ব্যাপার ছিল। অনেক মানুষই জানে না তার গল্পটা। অনেক মানুষই জানে না সে কিসের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। আমার মনে আছে আমি একবার তাকে বলেছি, শোন তোমার অবশ্যই নিজের জীবন নিয়ে একটা বই লেখা উচিত।' তার জীবনের অভিজ্ঞতা অবশ্যই অনেক প্রেরণাদায়ক। সে এমন একজন, লোকজন জানে না সে কী দিয়েছে? সে বাংলাদেশকে কী দিয়েছে এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটকে? আমার মনে হয় আমি সৌভাগ্যবান। সত্যিই খুব ভালো সময় যা আমি তার সঙ্গে অতিবাহিত করেছি।' সাগরিকায় শুক্রবার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেললেন মাসাকাদজা। ম্যাচ শেষে জানালেন, 'বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় বাড়ি।' আর দ্বিতীয় বাড়িতে অবশ্যই দারুণ কিছু মুহূর্ত রয়েছে তার। বেশ কিছু মুহূর্তের মধ্যে মাশরাফির সঙ্গে অতিবাহিত করা সময়কেই উলেস্নখ করলেন জিম্বাবুয়ের এই বিদায়ী অধিনায়ক। তবে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। জিম্বাবুয়ের হয়ে বাংলাদেশের কাছে প্রথম টেস্টের হারকে সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা হিসেবে চিহ্নিত করলেন তিনি, 'তিক্ত অভিজ্ঞতা বলতে গেলে... আমি সে দলের সদস্য যে প্রথমবার বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট হেরেছি। এর আগে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে খুবই শক্তিশালী এক দলই ছিল। এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা।' ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করলেও মাসাকাদজা বাংলাদের প্রথম আসেন ২০০৫ সালে। সেবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে জয়ের পর ঢাকা টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। ওই সিরিজের স্মৃতি আজও মনে আছে মাসাকাদজার, 'বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারটা ছিল কঠিন স্মৃতি। বাংলাদেশ তখন উন্নতি করছে, এখনকার মতো শক্তিশালী দল হয়ে ওঠেনি। এরপরও তারা আমাদের হারিয়েছিল। আর এখন তো অনেক প্রতিষ্ঠিত এক দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।'