বড় ইনিংসের অপেক্ষায় ছিলেন সাকিব

রান পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমার কখনোই মনে হয়নি যে আমি ফর্মে নেই। জানতাম, উইকেটে কিছু সময় কাটালেই চলবে। সেটিও ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। আজকে কাউকে না কাউকে ইনিংস টেনে নিতে হতো। সৌভাগ্যবশত, দলের জন্য কাজটি আমি করতে পেরেছি

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাকিব আল হাসান
বল হাতে সময়টা বেশ কাটছিল। কিন্তু ব্যাট হাতে দেখা মিলছিল না সেই সাকিব আল হাসানকে। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন, হারিয়ে যাননি। শুধু বড় ইনিংস খেলতে সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে জেতানোর পর দেশসেরা এই বাঁহাতি এমনটাই জানিয়েছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গেল একমাত্র টেস্টেও সাকিবের ব্যাট তেমন কথা বলেনি। এদিকে চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেও এই বাঁহাতি ছিলেন ব্যাট হাতে বিবর্ণ। অবশেষে শনিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফেরেন স্বরূপে। শুরুতে একটু ধীরে খেললেও সময় যত গড়িয়েছে ঠিক ততটাই এই বাঁহাতির ব্যাট চড়াও হয়েছে আফগান বোলারদের ওপর। শেষ পর্যন্ত ৪৫ বলে ৭০ রানের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই ফেরেন দেশসেরা এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। রান পাচ্ছিলেন না বলে সাকিবের একবারও নাকি মনে হয়নি তিনি ফর্মে নেই। শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন ভালো সময় আসছে, 'রান পাচ্ছিলাম না। কিন্তু আমার কখনোই মনে হয়নি যে আমি ফর্মে নেই। জানতাম, উইকেটে কিছু সময় কাটালেই চলবে। সেটিও ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। আজকে কাউকে না কাউকে ইনিংস টেনে নিতে হতো। সৌভাগ্যবশত, দলের জন্য কাজটি আমি করতে পেরেছি।' শনিবার আফগানদের দেওয়া ১৩৯ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনার লিটন ও শান্তকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে সাকিব ও মুশফিক দলের হাল ধরেন। এক পর্যায়ে দ্রম্নত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়েছিল টিম টাইগার্স। তবে এক প্রান্ত আগলে ছিলেন সাকিব। এই বাঁহাতি শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেককে নিয়ে জয়ের বাকি কাজটুকু সারেন ৬ বল হাতে রেখেই। ম্যাচ শেষে সাকিব জানান, এ ইনিংসে তিনি টিকে থাকতে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, 'টুর্নামেন্টজুড়েই আমাদের বোলিং দারুণ হয়েছে, ফিল্ডাররা সহায়তা করেছে। কিন্তু ব্যাটিংই বারবার দলকে ভুগিয়েছে। টি২০তে সবাই একসঙ্গে রান করবে না। কিন্তু যেদিন যে রান করবে, তাকে দলের জন্য শেষ পর্যন্ত টিকতে হবে। চেষ্টা করেছি সেটি করতে।' ব্যাটে জ্বলে ওঠার আগে সাকিব শনিবার বল হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত। ওইদিন ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রানে এ বাঁহাতি পকেটে পুরেন ১টি উইকেট। তাতে চতুর্থ বোলার হিসেবে এ ফরম্যাটের ক্রিকেটে ৩৫০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। তার অনন্য এ মাইলফলকের দিনে টাইগারও নিরাশ করেননি দেশকে। এনে দিয়েছেন দারুণ এক জয়। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় তুলে আবার মোমেন্টাম ফেরানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা হয় উল্টো পথে। টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণ। ফের ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুতেও একই অবস্থা। নানা টানাপোড়েনে থাকা দুর্বল জিম্বাবুয়েও চোখ রাঙিয়েছিল প্রথম ম্যাচে। তরুণ আফিফ হোসেনে মান রক্ষা। অন্যথায় তখন তো 'জাত গেল, জাত গেল' রব উঠে যেত। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে হারতেই হয়। আত্মবিশ্বাস তখন তলানিতে। মোমেন্টাম তখন দূরের বাতিঘর। ভাগ্য ফেরাতে টাইগাররা ফিরে আসে সাগরিকায়। বিপর্যস্ত অবস্থায় বহু সুখস্মৃতি দিয়েছে যে মাঠ। একসময় যাকে 'পয়া' মাঠই বলত সবাই। যদিও আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হারে সে নামে কিছুটা হলেও কালি লেপেছে। ব্যকফুটে থাকা দলটি শুরুতেই মুখোমুখি হয় জিম্বাবুয়ের। আর শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে কি দারুণ জয়ই না এনে দিলেন মাহমুদউলস্নাহরা। সেদিনের ম্যাচের চিত্রই পাল্টে দিল বাংলাদেশকে। মনে করিয়ে দিল এমন বহুবারই তারা বাংলাদেশের কাছে হেরে মোমেন্টাম দিয়ে গেছে টাইগারদের। \হ২০১৪ সালে আগে যখন বাংলাদেশ একের পর এক হারে ক্লান্ত, তখনই দেশে ডেকে আনা হয় জিম্বাবুয়েকে। সেবার ওয়ানডে ও টেস্ট দুই সিরিজেই তাদের হোয়াইটওয়াশ করে আত্মবিশ্বাস মেলে বাংলাদেশের। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যায় ২০১৫ বিশ্বকাপে। পায় সর্বোচ্চ সাফল্য। এরপর সে ধারা টিকে ছিল অনেক দিন। মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে হারলেও জয় কখনোই অধরা হয়ে ওঠেনি। এর আগেও এমন অনেকবারই হয়েছে।