৪০ বছর পর ফুটবল মাঠে ইরানের মেয়েরা

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
অনেক বছর পর তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছেন ইরানের নারী ফুটবল সমর্থকরা -ওয়েবসাইট
হাতে পতাকা, গালেও আঁকা। চার দশক পর এ এক অদ্ভুত শিহরণ জাগানিয়া দৃশ্য তেহরানের আজাদি স্টেডিয়ামে। ৮০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারির এক পাশে চার হাজারের মতো নারী, যারা ইরানের কড়া বিধিনিষেধের দেয়াল ভেঙে বৃহস্পতিবার সমর্থন দিতে এসেছিলেন প্রিয় দলকে। টিকিটের জন্য আবেদন পড়েছিল হাজার, হাজার। অনলাইনে ছাড়া মাত্রই কয়েক মিনিটের মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে নির্ধারিত সব টিকিট। ভাগ্যবতী যারা খেলা দেখতে পেয়েছেন তারা যেন প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন। লাল, সবুজ আর সাদা পোশাকের জার্সিও ছিল অনেকের গায়ে। উৎসবমুখর পরিবেশে এই নারীরা সমর্থন জুগিয়েছেন কম্বোডিয়ার বিপক্ষে নিজ দেশ ইরানকে। ১৯৮১ সাল থেকে পুরুষদের ম্যাচে ইরানের নারীদের প্রবেশ নিষেধ। মাঠে নারীদের প্রবেশের এই নিষেধাজ্ঞা যদিও আইনে লিখিত নেই। গত বছর তেহরানের একটি মাঠে বিশ্বকাপ বাছাই দেখার জন্য সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল। তবে গত মাসে সাহার ছদ্মনামের এক নারী ফুটবল ভক্তের নিজ গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতির পর আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। নড়েচড়ে বসে খেলাটির আন্তর্জাতিক অভিভাবক ফিফা। প্রিয় দল এস্তেঘলাল অফ তেহরানের খেলা দেখতে গিয়ে গত মার্চে পুরুষের বেশে মাঠে প্রবেশের চেষ্টাকালে ধরা পড়েন ওই তরুণী। পরে তিন দিনের জেল দেয়া হয় তাকে। জামিনে মুক্তি দেয়া হলেও তরুণীর মামলার রায় পেতে ছয় মাস সময় লেগে যায়। কিন্তু তিনি যখন আদালতে যান তখন পারিবারিক কাজের কারণে বিচারক কোর্ট মুলতবি করে দেন। এরপর আবারও তিনি তার মোবাইল ফোন আনতে আদালতে যান। গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সেদিন তিনি আদালতে গেলে কেউ বলছিলেন যে, দোষী প্রমাণিত হলে তাকে ছয় সপ্তাহ থেকে দুই বছরের জেল দেয়া হতে পারে। ওই তরুণী সেই কথা শুনে আদালত প্রাঙ্গণেই নিজ শরীরে আগুন দেন। পরে হাসপাতালে এক সপ্তাহ জীবনযুদ্ধে লড়ে তার মৃতু্য হয়। সাহারের ওই ঘটনা সারাবিশ্বে থাকা ইরানিরা গুরুত্ব সহকারে নেয়। তার প্রিয় দলের নীল রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইরানিরা হ্যাশট্যাগ 'বস্নু গার্ল' শব্দের প্রচলন ঘটায়। নড়েচড়ে বসে ফিফা। ফুটবল মাঠে নারীদের প্রবেশ বন্ধ করে রাখায় ইরানকে নিষিদ্ধ করারও হুমকি দেয়া হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। ফিফার হুমকি কাজে দিয়েছে। কম্বোডিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে নারীদের জন্য বাধা তুলে নেয় ইরানি কর্তৃপক্ষ। তবে আসনসংখ্যা ছিল সীমিত। ৪,৬০০ এর মতো টিকিট ছাড়া হয়েছিল মেয়েদের জন্য। নারী দর্শকদের জন্য বরাদ্দ করা হয় আলাদা গ্যালারিও।