বিপিএলের সব দলেই বিদেশি কোচ!

আজ নিজ দেশে আমরা পরবাসী যেন! এখন পর্যন্ত একটাও আন্তর্জাতিক মানের কোচিং স্টাফ বের করতে পারেন না- এটাই তো তাদের জন্য অনেক বড় লজ্জার ব্যাপার! আমরা কোচিং করাই, ট্রেনার, ফিজিও এমনকি গ্রাউন্ডসম্যানদের জন্যও আমার দুঃখ হয়- সারাজীবন এরা সাপোর্টিং রোলই করে যাবে, হিরোর রোল আর পাবে না! -মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
দেশি পণ্য কিনে হও ধন্য! স্বদেশি পণ্যের প্রচারে বেশ আবেগি এই স্স্নোগান। তবে সমস্যা হলো বাজারে গিয়ে সবাই বেশি উৎসাহ দেখান বিদেশি পণ্যে। পণ্যের প্রতি এই বিদেশপ্রীতি তো আমাদের আগে থেকেই ছিল, পণ্যের সেই তালিকায় এখন যোগ হয়েছে ক্রিকেট কোচ! ক্রিকেট কোচও এখন আর দেশি দিয়ে চলে না। বিদেশি ইম্পোর্টেড ক্রিকেট কোচ চাই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বিপিএলের প্রতিটি দলেই। জাতীয় দলের হেড কোচ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের কোচের পদেই এখন বিদেশিদের ভিড়। সর্বশেষ আরেকটি ফরমান জারি করেছে বিসিবি; জানিয়ে দিয়েছে সামনের বিপিএলেও সাত দলের সবাইকে বিদেশি কোচ রাখতে হবে। যারা প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। শুধু তাই নয়, বিপিএলের এবারের প্রতিটি দলে একজন করে বিদেশি ফাস্ট বোলারও রাখতে হবে। বিসিবির এই বিদেশি কোচ নিয়োগের প্রতি এত প্রীতি কেন? তাহলে কি স্বদেশি দক্ষ কোচ ক্রিকেট কোচ নেই বাংলাদেশে? না কি নিজ দেশের কোচের ওপর আস্থা নেই বিসিবির? এমন অনেক প্রশ্ন কেবল আজ থেকে নয়, অনেকদিন থেকেই উষ্মা ছড়াচ্ছে। অভিযোগ, অনুযোগ আছে, প্রচুর ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে ক্রিকেট কোচ আনে বিসিবি, অথচ স্বদেশি কোচদের দক্ষতা তাদের চোখে পড়ে না। এমন অবহেলার শিকার হয়ে বেশ কয়েকজন দেশি কোচ বিসিবির চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। যে তালিকায় সর্বশেষ উদাহরণ নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও সারোয়ার ইমরান। যথাযোগ্য মর্যাদা না পাওয়ায় এই দুই সিনিয়র ক্রিকেট কোচ বিসিবির চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। দেশি কোচদের প্রতি বিসিবির এহেন আস্থাহীনতা ও দীনহীন দৃষ্টিভঙ্গির কড়া সমালোচনা করেছেন দেশের আরেক নামি কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। জাতীয় দলের সাবেক এই ফিল্ডিং কোচ দাবি তুলেছেন- 'কোচ, ট্রেনার, ফিজিওসহ সবই যদি বিদেশি আনা হয়, তাহলে বিসিবির তো উচিত বিদেশি পরিচালক দিয়ে বোর্ড পরিচালনা করা!' গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে মোহাম্মদ সালাউদ্দিন লেখেন- 'আজ একটা ব্যাপার উপলব্ধি করলাম, দেশের কোচদের মান ভালো না, ট্রেনাররা চলে না, ফিজিওরা তো ফাজলামি করছে এতদিন। সব বিদেশি আসবে, ভালো কথা। কিন্তু তাহলে কেন কোন বিদেশি ডিরেক্টর (পরিচালক) আনবেন না? কারণ কোচ, ট্রেনার, ফিজিও, খেলোয়াড়ও যখন আন্তর্জাতিক মানের না, তাহলে আপনারা (বিসিবির পরিচালকরা) নিজেদের আন্তর্জাতিক মানের ভাবেন কেমন? আপনারাও তো আমাদের মতোই। আপনাদেরও (বিসিবির) উচিত বিদেশি ডিরেক্টর নিয়ে আসা।' বোঝাই যাচ্ছে ক্রমশ স্বদেশি কোচদের প্রতি বিসিবির নিদারুণ অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেই কৃতী এই কোচ এমন মন্তব্য করেছেন। বিপিএলে দু'বারের চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। নামিদামি বিদেশি কোচদের বিপক্ষে লড়ে দু'বার কুমিলস্না ভিক্টোরিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এনে দিয়েছেন তিনি। এমন স্বদেশি কোচরা যখন নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছে যথাযোগ্য মর্যাদা পান না তখন সেটা তাদের সম্মানে বড় আঘাত করে। সালাউদ্দিন মন্তব্য করেন- 'ভাই, আজ নিজ দেশে আমরা পরবাসী যেন! অনেক বোর্ড পরিচালক ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বোর্ডে আছেন, এরা এখন পর্যন্ত একটাও আন্তর্জাতিক মানের কোচিং স্টাফ বের করতে পারেন না- এটাই তো তাদের জন্য অনেক বড় লজ্জার ব্যাপার! বোর্ডে দেশি যারা আমরা কোচিং করাই, ট্রেনার, ফিজিও এমনকি গ্রাউন্ডসম্যানদের জন্যও আমার দুঃখ হয়- সারাজীবন এরা সাপোর্টিং রোলই করে যাবে, হিরোর রোল আর পাবে না!' দেশি কোচদের নিয়ে বিসিবির অবহেলা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের এই ফেসবুকের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম ঠাট্টার মেজাজে লেখেন- 'শুধু বিদেশি নির্বাচকদের আনা এখন বাকি! আমি তো হাথুরেসিংহের সময় থেকেই বলে আসছি শ্রীলংকান নির্বাচকদেরও নিয়ে আসা হোক।' এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের সভা শেষে মাহবুবুল আনাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, 'আমরা প্রতিটি দলে আন্তর্জাতিক মানের কোচ নিয়োগ দেব। যে যে কোচ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছেন তারা নাম পাঠিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে ফিজিও, ট্রেনার এবং বিদেশি খেলোয়াড় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। লোকাল কোচ সম্পৃক্ত থাকতে পারে এবং প্রতিটি দলে একজন করে টিম ডিরেক্টর থাকবেন।' এতে করে দেশি কোচরা উপেক্ষিত থাকবেন? মাহবুবুল আনাম জানান, 'দেশি কোচরা থাকতে পারেন। তবে আমরা যেসব আন্তর্জাকি কোচের নাম পেয়েছি সত্যিই আশাব্যঞ্জক, তারা সবাই নামিদামি কোচ। এখনই তাদের নাম বলতে চাই না। কারণ কাউকে আমরা এমনিই কোয়ালিফাই করতে চাই না। আমরা যদি কারও নাম বলি তাহলে হয়তো তারা হয়ে যাবে ফ্রি কোয়ালিফায়েড।' দলের মাঝে সমতা আনা প্রসঙ্গে ওই পরিচালক বলেন, 'আমরা দলগুলোর জন্য কোচ, ফিজিও, ট্রেনার নিয়োগ আলোচনার মাধ্যমে আনতে চাই। কেননা সব দল যেন বলতে পারে সমমানের ম্যানেজমেন্ট পেয়েছি। কোনো অসমতা রাখতে চাই না। প্রতিটি দলে বিসিবি থেকে একজন করে টিম ডিরেক্টর থাকবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে তিনি সম্পৃক্ত থাকবেন।'