সংবাদ সম্মেলনে ফিফা সভাপতি

বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে ফুটবল

তিনি বলেন, 'প্রথমবারের মতো এদেশে আসতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। যতটা জানি বাংলাদেশে ফুটবল ছাড়াও আরও অনেক খেলা হয়। কিন্তু এখানে এসে ফুটবল নিয়ে সবার আগ্রহ এবং মিডিয়ার দারুণ কর্মতৎপরতা দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি।'

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা সফরের ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বৃহস্পতিবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের হাতে ফিফার স্মারক তুলে দেন। এ সময় বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন -বাফুফে
ক্রীড়া প্রতিবেদক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) আমন্ত্রণে এক দিনের শুভেচ্ছা সফরে ঢাকা সফরে এসেছিলেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার (ফিফা) সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। এশিয়া অঞ্চলে শুভেচ্ছা সফরের অংশ হিসেবে তার বাংলাদেশ সফর। সংক্ষিপ্ত সফরে মঙ্গোলিয়া থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকায় আসার পর এদিন বিকালেই লাওসের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন ফিফা সভাপতি। তার আগে অবশ্য নিজের সূচি মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সভাপতি। বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন জানান, 'বাফুফে ভবনে সকালে ফিফা সভাপতি আমাদের সাথে সাফ ফুটবল এবং বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে অনেকক্ষণ আলাপ করেছেন।' সংবাদ সম্মেলনে ইনফান্তিনো বলেন, 'প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। যতটা জানি বাংলাদেশে ফুটবল ছাড়াও আরও অনেক খেলা হয়। কিন্তু এখানে এসে ফুটবল নিয়ে সবার আগ্রহ এবং মিডিয়ার দারুণ কর্মতৎপরতা দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। সত্যি বলতে কি এতটা আশা করিনি। এ থেকে একটা ব্যাপার বুঝলাম, তা হলো এদেশের মানুষের হৃদয়ে আছে ফুটবল।' ইনফান্তিনো আরও বলেন,'সত্যি বলতে আমি এমন একটা দেশকে খুঁজে পেয়েছি, যেখানে শুধু ফুটবল খেলাই হয় না, এখানকার লোকদের স্বপ্নই ফুটবল। সকালে আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। আমাদের ঘণ্টাখানেকের আলাপচারিতার পুরোটাই জুড়ে ছিল ফুটবল। যুব ও তৃণমূল ফুটবল এবং গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল আসরে বাংলাদেশের মহিলা ও পুরুষ ফুটবলের ঈর্ষণীয় সাফল্য নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। কথা হয়েছে এদেশের ফুটবলের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েও।' ফুটবলের জনপ্রিয়তা ফেরাতে বাফুফের কী উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করেন ফিফা সভাপতি? এ প্রশ্নের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ইনফান্তিনো। জানান, মূলত সাফল্যের কারণেই ক্রিকেটে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে সেটিও আবার ক্রিকেটে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা কম বলেই। অন্যদিকে ফুটবল খেলাটা অনেক বেশি হৃদয় দিয়ে খেলা যায় বলেই মত দেন ফিফা সভাপতি। সবিস্তারে দেয়া উত্তরে ইনফান্তিনো বলেন, 'আমি মানি না, ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেট তো অনেক কঠিন খেলা। আপনি কীভাবে বলতে পারবেন যে ক্রিকেট সবাই বোঝে? ফুটবল খুবই সহজে বোঝা যায়, খেলা যায়। আপনার কাছে বল আছে, খেলছেন, গোল করছেন, উলস্নাস করছেন। ফুটবল হৃদয় দিয়ে খেলা যায়।' 'ফুটবলে এমন হবেই যে আপনি কখনও ওপরে থাকবেন আবার নিচে পড়ে যাবেন। আপনারা জানেন ২১১টি দেশের মধ্যে ফুটবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কিন্তু ১টি দেশ, যেটা বর্তমানে ফ্রান্স। কিন্তু এর মানে এই না যে বাকি ২১০টি দল খারাপ। এটার মানে এই যে বাকি ২১০ দেশ চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। সেটা হোক বয়সভিত্তিক বা নারী ফুটবলে।' যোগ করেন ফিফা সভাপতি। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল সম্পর্কে ফিফা প্রেসিডেন্ট বলেন, 'জাপান বা কোরিয়ার মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল অতটা শক্তিশালী নয়। এখানে মাত্র আটটা দেশ আছে। তবে এখানকার ফুটবল গত কয়েক বছর ধরে বেশ এগিয়ে গেছে।' বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ইনফান্তিনো বলেন, 'বাংলাদেশের ফুটবল ইদানীং বেশ উন্নতি করেছে; বিশেষ করে আপনাদের নারী ফুটবল। এছাড়া ছেলেরাও সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে ড্র করেছে; যা বেশ ইতিবাচক। ফুটবলের শেষ কথা হলো জাতীয় দল। এর জার্সিটা হচ্ছে একটি আবেগী পোশাক। এটা পড়লেই অন্যরকম অনুভূতি হয়, আমারও হচ্ছে (ফিফা সভাপতির পরনে তখন বাফুফের উপহার দেয়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি)। আমি জানি সম্প্রতি আপনারা প্রবল আবেগে আক্রান্ত হয়েছেন, যখন ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আপনাদের দল ভারতে গিয়ে তাদের বিপক্ষে দারুণ খেলে ১-১ গোলে ড্র করেছিল। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততেও পারত।' ইনফান্তিনো মনে করেন এ দেশের ফুটবল যে ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে তাতে করে ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে ফিফা সভাপতি বলেছেন 'ফুটবল আশা জোগায়, ফুটবলে আসলে সবই সম্ভব। আমি মনে করি বাংলাদেশের ফুটবলের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল। ফিফা এবং ইউয়েফা এ নিয়ে কাজ করছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, নারী ফুটবলে বিনিয়োগ করুন। কারণ, নারী ফুটবলে আপনি খুব সহজেই সাফল্য পাবেন।' রসিকতার সুরে বলেন, 'এতদিন ঢাকার বিখ্যাত ট্রাফিক জ্যামের কথা শুনেছি। আজ স্বচক্ষে দেখলাম। এজন্য আমি ধন্য!'