কোয়াবের সংবাদ সম্মেলন

ধর্মঘটে মিরপুরে নীরবতা

দুর্জয় বলেন, 'পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। সেখানে প্রমাণ হবে ক্রিকেটাররা কাকে চায়। আমি পদত্যাগ করব কেন।'

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সংবাদ সম্মেলনে কোয়াবের সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও সম্পাদক দেবব্রত পাল -বিসিবি
দেশের ক্রিকেট ঠিকভাবে চলছে না- এমন অভিযোগ তুলে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন সাকিব আল হাসানরা। দেশের শীর্ষ পর্যায়ে খেলা ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) জানিয়ে দিয়েছেন- এসব দাবি পূরণের নিশ্চয়তা না পেলে জাতীয় দল এবং প্রথম শ্রেণির সব ক্রিকেটার কোনো ধরনের ক্রিকেটে অংশ নেবেন না। ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। বিসিবি বারান্দায় পা দিতেই বোঝা গেল দিনটা একটু অন্যরকম। বিসিবিতে যারা অফিস করেন তারা এসেছেন ঠিকই, কিন্তু প্রায় সবার চোখে মুখে একটু থমথমে ভাব। বারান্দায় তেমন ভিড় নেই। ক্রিকেট একাডেমির প্রবেশদ্বারে নারী ক্রিকেটারদের ভিড়। পাকিস্তান সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। দেখা হলে পরিচিতজনরা হাসছেন। তবে সেই হাসিতে ঠিক যেন প্রাণ নেই! ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ডাকার প্রথমদিনের প্রথম প্রহরে বিসিবির চিত্র এটি। সঙ্কট মোকাবিলার জন্য বিসিবি অবশ্য খুব বেশি অপেক্ষায় থাকার নীতির পথে হাঁটেনি। দুপুরে বিসিবিতে পরিচালকদের তাৎক্ষণিক একটা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যদিও এটাকে জরুরি বৈঠক বলছে বিসিবি। তবে সার্বিক পরিস্থিতি এবং বৈঠকের গুরুত্ব দেখে এটা নিশ্চিত যে চলতি সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য দ্রম্নত একটা উপায় খুঁজছেন বিসিবির পরিচালকরা। কিন্তু বিসিবির সভায় কোনো সুরাহা হয়েছে এমনটা জানা যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে বিসিবির জরুরি সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, ক্রিকেটারদের এই ধর্মঘট পরিকল্পিত, ক্রিকেটকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র। পাপন মনে করছেন দেশের ক্রিকেটের ক্ষতি করতেই কয়েকজন বেশ আগে থেকেই কাজ করছেন। কিন্তু তারা না পেরেই এবার ক্রিকেটারদের দারস্থ হয়েছেন। যে কারণে হঠাৎ করেই ধর্মঘটের ডাক দিয়ে খেলা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন ক্রিকেটাররা। সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালদের এমন আচরণে অসন্তুষ্ট বিসিবি। এদিন সবার আগে দুপুরের বৈঠকে যোগ দিতে বিসিবিতে এসে হাজির হন পরিচালক আকরাম খান। সোমবার তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে। জরুরি ডাক পেয়ে ঢাকায় উড়ে এসেছেন। সেখান থেকেই বিসিবিতে হাজির। বৈঠক শুরুর আগে আকরাম আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলেন না। বললেন-'অপেক্ষা করেন, সব জানতে পারবেন।' সোমবার থেকে ধর্মঘটে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রথম দাবিই ছিল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা কোয়াব- এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া কোয়াবের নতুন নির্বাচন দাবি করেছেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের দাবির প্রেক্ষিতে কোয়াব সভাপতি নাঈমুর রহমানের দুর্জয় ও সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পালের পদত্যাগের কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত সেটি আর হয়নি। মঙ্গলবার ক্রিকেটার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (কোয়াব) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে সভাপতি নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সহ সভাপতি খালেদ মাহমুদ সুজন ও সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে দুর্জয় বলেন, 'পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। সেখানে প্রমাণ হবে ক্রিকেটাররা কাঁকে চায়। আমি পদত্যাগ করব কেন। আমিতো তাদের হয়ে কাজ করছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমিও তাদেরই একজন। আমিও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি।' দুর্জয় আরও বলেন, 'ওরা তো আমাদের কাছে আসেনি কোনও অভিযোগ বা দাবী নিয়ে। এর আগে অনেকে তাদের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও আসছিল আমাদের কাছে। আমি কোনো কাদা ছোঁড়াছুড়ি চাই না। যা দেশের ক্রিকেটের অমঙ্গল বয়ে আনবে।' মিরপুরের শেরেবাংলায় গত সোমবার জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা ১১ দফা দাবি জানান। দাবির মধ্যে আছে চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়ানো। খেলোয়াড়দের বেতন বৃদ্ধি, বিসিবির গ্রাউন্ডসম্যান থেকে শুরু করে অন্যান্য বেতনভুক্ত কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি। ঘরোয়া ক্রিকেট বিশেষ করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান প্রসঙ্গ। চলছে জাতীয় লিগ, সামনে ভারত সফর। ক্রিকেটারদের আকস্মিক ধর্মঘটে সবই এখন হুমকির মুখে। ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার কথা জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ড। কিন্তু ওই রাউন্ডে অংশ নিতে যাননি কোন ক্রিকেটারই। অনেকে টিকিট কেটেও কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার পর তা বাতিল করে দিয়েছেন।