সাকিবকে ছাড় দেবে না বিসিবি

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
সাকিব আল হাসানের স্পন্সরশিপ চুক্তিকে সম্পূর্ণ বেআইনি বলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। চুক্তির শর্ত ভাঙার জন্য টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ককে বোর্ড চিঠি পাঠাচ্ছে বলে শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন -বিসিবি
পারফরমেন্স দিয়েই সাকিব আল হাসান সবসময় শিরোনামে থাকেন। তবে সাম্প্রতিক সময়টা তার কাটছে মাঠের বাইরের পারফরমেন্স নিয়েই! ক্রিকেটারদের তিন দিনের ধর্মঘটের সময়ে প্রতিদিনই আলোচনায় ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেই ধর্মঘট শেষ। তবে মাঠের বাইরে বিসিবি-ক্রিকেটার লড়াই এখনো শেষ হয়নি! সর্বশেষ সমস্যা বেঁধেছে সাকিবের গ্রামীণফোনের সঙ্গে বাণিজ্যিক একটি চুক্তি নিয়ে। গ্রামীণফোন সাকিবকে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিসিবি বলছে বাণিজ্যিক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাকিব যে চুক্তি করেছেন সেটা ঠিক নিয়ম মেনে হয়নি। নিয়ম ভাঙায় সাকিবকে এবং গ্রামীণফোনকে আইনি নোটিশ দিচ্ছে বিসিবি। সাকিব আল হাসানকে ছাড় দেবে না বিসিবি। নিয়মবহির্ভূত চুক্তি করায় সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বোর্ড। বিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটারদের যে চুক্তি রয়েছে, সে অনুসারে, জাতীয় দলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকা অবস্থায় কোনো খেলোয়াড় টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। গত ২২ অক্টোবর টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণফোনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে যুক্ত হন টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ভারত সফরের প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরুর দিন ছিলেন না সাকিব আল হাসান। তবে অনুশীলনের দ্বিতীয় দিন ফিরেছেন টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ক। শনিবার বিকাল ৩টায় অনুশীলন শুরুর কথা থাকলেও এ অলরাউন্ডার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলে আসেন ঘণ্টাখানেক আগেই। ড্রেসিংরুমে কিটস রেখেই চলে যান বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কক্ষে। শনিবার দুপুরে মিরপুরের বিসিবি কার্যালয়ে সিইও নিজামউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেছেন সাকিব। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের টেস্ট ও টি২০ দলনেতা সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন তারা, 'চুক্তি করার আগে সাকিব আমাদের অফিসিয়ালি জানিয়েছে বলে আমাদের রেকর্ডে নাই। প্রথমত, যেকোনো চুক্তির আগে আমাদের জানাতে হয়। দ্বিতীয়ত, টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো চুক্তি করা যায় না। সভাপতি (নাজমুল হাসান পাপন) এটা নিয়ে কথা বলেছেন। আমরাও দেখছি, ব্যবস্থা নেব।' সিইও আরও বলেন, 'এখন আমাদের জাতীয় দলের স্পন্সর ইউনিলিভার। কিছুদিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তিটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় যদি কোনো খেলোয়াড় কোনো টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করে তাহলে জাতীয় দলের সঙ্গে সামনের সময়ের জন্য স্পন্সর চুক্তিতে অন্যান্য টেলিকম প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে আগ্রহী হবে না।' শনিবার সংস্কারের অপেক্ষায় থাকা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোর পরিদর্শন করেন বিসিবি প্রধান। এরপর সাকিবের চুক্তিতে যাওয়ার ব্যাপারে গণমাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান তিনি, 'আমি তো বলেছিই আমাদের আইন অনুযায়ী সে এটা করতে পারে না। এটা টেলিকম কোম্পানিও জানে, সেও (সাকিব) জানে। ওদের (ক্রিকেটারদের) সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি আছে। সে চুক্তি অনুযায়ী এটা করা যায় না। এখন আমরা তাকে (সাকিবকে) চিঠি দিচ্ছি। তাকে তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে, কেন সে এটা করল।' বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ক্রিকেটারদের আন্দোলন ও এরপর সমঝোতার মাধ্যমে খেলায় ফিরে আসায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনুরোধ করলে সাকিব কোনো ছাড় পাবেন কিনা- জানতে চাইলে বোর্ড প্রধানের স্পষ্ট জবাব, 'প্রশ্নই ওঠে না।' এদিন দেশের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বিসিবি সভাপতি নাজমুলের একটি সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, সাকিব কোনোভাবেই গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তি করতে পারেন না। কেন পারেন না- সে বিষয়টি বোর্ডের সঙ্গে তার চুক্তিতে লেখা রয়েছে। সাক্ষাৎকারে বোর্ড প্রধান সাকিবের এমন আচরণকে 'ঔদ্ধত্যপূর্ণ' বলে উলেস্নখ করেছেন। সেই সঙ্গে গ্রামীণফোনকে আইনি নোটিশ পাঠানোর এবং তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করার প্রক্রিয়া শুরু করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে শনিবার প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, 'হঁ্যা। এই চুক্তি কোনোভাবেই করতে পারে না। কেন পারে না, চুক্তিতে সব লেখা আছে। লিখিতভাবে ওদের বলে দেয়া আছে। রবি আমাদের টাইটেল স্পন্সর হলো। গ্রামীণ বিডই করল না। না করে এক-দুই কোটি দিয়ে খেলোয়াড়দের নিয়ে ফেলল। এতে শেষ পর্যন্ত কী হলো? তিন বছরে বোর্ডের ৯০ কোটি টাকা লস হলো। খেলোয়াড় লাভবান হলো। কিন্তু বোর্ডের তো ১২টা বেজে গেল। এটি তো হতে পারে না। তাই লিখিতভাবে ওদের জানিয়ে রাখা আছে।' তিনি আরও বলেন, 'এমনকি আমার জানা মতে মন্ত্রণালয় থেকেও ওদের বলা আছে যে, না জানিয়ে টেলিকোর সঙ্গে চুক্তি করা যাবে না। আমাদের সঙ্গে চুক্তি তো আছেই। তারপরও আমাদের না জানিয়ে কী করে চুক্তি করে? টাইমিংটা দেখুন। খেলা বন্ধ করে চুক্তি! এগুলো তো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ।' এটি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন? জবাবে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'আমরা লিগ্যাল অ্যাকশনে যাচ্ছি। কাউকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করব এখন। সেটি কোম্পানির কাছেও দাবি করব, দাবি করব খেলোয়াড়ের কাছেও। আমরা কি ছেড়ে দেব নাকি? বৃহস্পতিবার আমি শুনেছি। আমি বলে দিয়েছি, গ্রামীণফোনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাও। বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাও। বলেছি, চিঠি পাঠাও সাকিবকেও। আমাদের ব্যাখ্যা চাই। আমাদের কাছে ব্যাপারটিকে মনে হয়েছে, 'বোর্ডের কোনো নিয়মকানুন মানি না।' এরকম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবই।'