ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ

গোলাপি বলে টাইগারদের অস্বস্তি

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ইন্দোরে হোল্কার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার থেকে ভারতের বিপক্ষে শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট। এই ম্যাচ সামনে রেখে মঙ্গলবার মাহমুদউলস্নাহ ও মুশফিকদের ব্যাটিংয়ের কিছু কলাকৌশল দেখাচ্ছেন টাইগারদের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি -বিসিবি
ভারত সফরের টাইগারদের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। প্রথম টি২০ ম্যাচটি জিতে সাকিব-তামিমহীন বাংলাদেশ দল সিরিজ জয়ের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। কিন্তু স্বপ্নপূরণ হয়নি। এবার স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। লড়াইটাও এবার ভিন্ন পরিসরের। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ! আগের ১১৫টা টেস্ট ম্যাচ খেললেও এই প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মানে টেস্ট খেলুড়ে দশ দেশের মধ্যে (আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড এই লড়াইয়ে নেই) সেরা হওয়ার লড়াই। দু'বছর ধরে চলবে একে অন্যের সঙ্গে এ প্রতিযোগিতা। সেখানে পয়েন্টের শীর্ষে থাকা দলের হাতেই উঠবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। যে লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ৫ টেস্ট ম্যাচের সবকটিতে জিতে ভারত ২৪০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে। আর এই লড়াইয়ে বাংলাদেশের মাত্র অভিষেক হতে চলেছে ইন্দোর টেস্টে। বলাই বাহুল্য অনেক দেরিতে এ প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তাও আবার কার বিরুদ্ধে? এই সময়ে যারা নাম্বার ওয়ানে আছে সেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। ভারত তাদের মাটিতে শেষ ১০ টেস্টের ৭টিতেই জিতেছে। বাকি তিনটি ম্যাচ ড্র। সর্বশেষ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তারা হারিয়েছে পরিষ্কার ৩-০ ব্যবধানে, প্রায় একতরফা ভঙ্গিতে। তাই ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা যে বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না, টাইগার সদস্যদের মুখে টি২০ সিরিজ চলাকালেই শোনা গেছে। তবে লাল বলের টেস্টের চেয়ে গোলাপি বলের টেস্ট নিয়েই যত অস্বস্তি টাইগারদের। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজেও বিরাট কোহলির ভারত তাই যথারীতি শুধু হট নয়, 'হটেস্ট' ফেভারিট! আর এই লড়াইয়ে বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে তাদের সেরা দুই ক্রিকেটারকে ছাড়া। সাকিব ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্রিকেটে নির্বাসিত। তামিম ইকবাল পারিবারিক কারণে ছুটিতে। সন্দেহ নেই টেস্টে নতুন অধিনায়ক মুমিনুল হকের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টটাই খুব কড়া ধাঁচের হয়ে গেল! ভারতের বর্তমান টেস্ট একাদশ পুরোদুস্তর পরিণত এবং প্রস্তুত হয়ে থাকা একটা দল। অন্যদিকে বাংলাদেশ ১১৫ নম্বর টেস্ট খেলার পরও এখনো একাদশ সাজানো নিয়েই প্রাথমিক চিন্তার বিন্দুতে আটকে থাকা দল। ব্যাটিংয়ের ওপেনিংয়ে, মাঝের পরিকাঠামো সাজাতে হচ্ছে আরেকবার নতুন করে। ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল এবং পুরো একাদশ জুড়ে সাকিবের শূন্যতা-এই দুই ঘাটতি ঢাকতে গিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট দল এখন টানাটানির সংসার! চলতি বছর এখন পর্যন্ত তিনটি টেস্ট ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চট্টগ্রামে সর্বশেষ টেস্টে আফগানিস্তানের কাছে হারও রয়েছে। অন্যদিকে চলতি বছরের টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সময়টা যাচ্ছে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে। সবমিলিয়ে তারা জানুয়ারি থেকে খেলেছে ছয়টি টেস্ট। একটিতে ড্র এবং বাকি পাঁচটিতে সহজ জয় পেয়েছে। জয়ী পাঁচটি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে দুটিতে জিতেছে ইনিংস ব্যবধানে এবং বাকি তিনটির প্রত্যেকটিতে দুশো'র বেশি রানে। এই পরিসংখ্যানই টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। ফর্মের এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ফর্ম খুঁজে বেড়ানো বাংলাদেশ দলকে লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। ইন্দোরে ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সেই মিশন। টেস্টের আগে অন্তত একটি প্রস্তুতি ম্যাচ হলে ভালো হতো বলে জানিয়েছিলেন টাইগার কোচ রাসেল ডমিঙ্গোও। গত রোববার টি২০ সিরিজ শেষে সোমবার ইন্দোর গেছে বাংলাদেশ টেস্ট দল। প্রথমে লাল বলের টেস্ট হলেও টাইগারদের মাথায় শুধুই গোলাপি বল। গোলাপি বল হাতে নিয়ে নানা কৌতূহলের সঙ্গে অনুশীলনের ফাঁকে ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখা গেল অস্বস্তি। টি২০ সিরিজ শেষে মাঝে পাওয়া গেছে তিনদিন সময়। তারপরই শুরু দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট। প্রথম টেস্ট শেষ হওয়ার তিনদিনের মধ্যে শুরু দ্বিতীয় টেস্ট, যেটি আবার হবে গোলাপি বলে। মাঝের এই সময়ের মধ্যে ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ভ্রমণও আছে। টেস্টের মতো কঠিন সংস্করণের জন্য এটা প্রস্তুত হতে সময়টা কি যথেষ্ট পাচ্ছে বাংলাদেশ? উঠেছে এমন প্রশ্ন। বাংলাদেশের কোচ ডমিঙ্গো মনে করেন সিরিজের সূচি অন্যরকম করা হলে এবং গোলাপি বলের টেস্টের আগে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ থাকলে স্বস্তিতে থাকতেন তারা, 'খুব ভালো হতো গোলাপি বলে যদি দুইদিনের একটা ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলা যেত। তবে এই চ্যালেঞ্জটাকে সহজ করে নিতে হবে।' গোলাপি বলে ব্যাটসম্যানদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক সময় সন্ধ্যা। কৃত্রিম আলোয় গোলাপি বলে খেলা কঠিন। আবার নভেম্বরের শেষদিকে টেস্ট হওয়ায় রাত্রি বেলা পড়বে কুয়াশা। সেক্ষেত্রে স্পিনারদের জন্যও বল গ্রিপ করা হবে মুশকিল। এতসব হিসেব নিকেশ সঠিক কম্বিনেশন আর খেলার ধরন বুঝতেও আরেকটু সময় চাইছিল বাংলাদেশ দল, 'আমাদের একেবারে নির্দিষ্ট করে সূর্যাস্ত এবং আঁধার নামার মাঝের সময়টায় ব্যাট করতে হবে। এই সময়টাতে সংগ্রাম করতে হয় বেশি। রিস্ট স্পিনারদের বিপক্ষে খেলোয়াড়দের বেশ লড়তে হয়। কারণ সিম দেখতে সমস্যা হয়। এই বলে লাল বলের সাদা সিম যেমন দৃশ্যমান থাকে তেমনটা হয় না। গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি বলেই অনেক খেলোয়াড় এর মুখোমুখি হতে তেমন আগ্রহ পায় না।'