ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ

ভালো ব্যাটিংয়ে মনোযোগ মুমিনুলের

নেতৃত্ব থাকায় আপনার ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞানটা একটু বাড়ে, দায়িত্বও বাড়ে। আমার মনে হয় এখন আমার ব্যাটিংয়ের পারফরম্যান্সের উন্নতি আরও হবে, ব্যাটিং আরেকটু ভালো হবে -মুমিনুল হক

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ক্রীড়া প্রতিবেদক মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের মতো দুইজন সিনিয়র ক্রিকেটার থাকার পরও বাংলাদেশ টেস্ট দলে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুমিনুল হককে। সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ পরবর্তী কঠিন সময়ে ক্রিকেটের এই বড় সংস্করণের ভার তার উপরই পড়েছে। ছোটখাটো গড়নের মুমিনুল বোঝেন এই দায়িত্বের বাড়তি ওজন। আর তাই তিনি মনে করছেন এই অধিনায়কত্ব পাওয়াটা বদলে দেবে তার ব্যাটিংয়ের পারফরম্যান্সের গ্রাফটাও। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সাদা পোশাকে নিয়মিত পারফর্মার মুমিনুল। এক সময় টেস্ট গড় নিয়ে গিয়েছিলেন অবিশ্বাস্য পর্যায়ে। সাদা পোশাকে দল করার সময় সবার আগে অবধারিতভাবেই আসত তার নাম। মাঝের কিছুটা খারাপ সময় পেরিয়ে টেস্টের এই নিয়মিত পারফর্মারই দলের অধিনায়ক। টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে ৩৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২ হাজার ৬১৩ রান করেছেন। আছে দেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ সেঞ্চুরি আর ১৩ ফিফটি। তার যে প্রতিভা আর সামর্থ্য নিশ্চিতভাবে এই পরিসংখ্যান হতে পারত আরও ঝলমলে। মুমিনুল আশা দেখছেন অধিনায়কত্ব এবার তার পারফরম্যান্স আর ক্রিকেট বোধকে নিয়ে যাবে অনেক উপরে, 'নেতৃত্ব থাকায় আপনার ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞানটা একটু বাড়ে, দায়িত্বও বাড়ে। আমার মনে হয় এখন আমার ব্যাটিংয়ের পারফরম্যান্সের উন্নতি আরও হবে, ব্যাটিং আরেকটু ভালো হবে।' দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে বেশ উপভোগ করছেন মুমিনুল। কোনোরকম চাপ নয়, বরং দেশকে আরও বেশি দেওয়ার তাগিদ অনুভব করছেন তিনি। আজ ইন্দোরে হলকার স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে শুরু হবে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট। এই ম্যাচ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেক হবে দলের। দেশের নতুন অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হবে মুমিনুলের। দেশের ক্রিকেটে ও নিজের ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায় শুরুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে রোমাঞ্চিত বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, 'এটা আমার জন্য অনেক রোমাঞ্চকর। খুব বড় একটা সুযোগ। এই সুযোগ হয়তো সবাই পায় না। সুযোগটা আমি খুব ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাই।' কিন্তু অনেক সময় অধিনায়কত্ব আবার বাড়তি চাপও কিনা? আগে যেমন নির্ভার হয়ে নিজের ব্যাটিং করতে পারতেন, এবার সে সুযোগ আছে তো? মুমিনুল মনে করেন এসব কিছু নয়, ব্যাটিংয়ের সময় কেবল ভাববেন ব্যাটিংয়ের কথাই, 'যখন নেতৃত্ব পেয়েছি তখন থেকে এই ব্যাপারটা কখনও অনুভব করিনি। অধিনায়কত্ব পাওয়ার আগে যেভাবে একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছিলাম এখনও সেভাবে ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলব। আমি সবসময়ই ইতিবাচক ব্যাপারটা ভাবার চেষ্টা করি।' টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউলস্নাহর। তাদের উপস্থিতি মুমিনুলের কাজটা সহজ করে দিয়েছে, 'এটা আমার জন্য ভালো ব্যাপার যে, যাদের কথা বললেন তারা সবসময় আমাকে সহায়তা করে আসছেন। সিনিয়র দুইজনের সাহায্য পাওয়াটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দলের সবাই অনুপ্রাণিত। তারা সবাই পরিণত। ওদের যতটুকু বলা দরকার ততটুকু বললেই যথেষ্ট। খুব বেশি কথা বলিনি, যতটুকু বলা প্রয়োজন ততটুকুই বলেছি।' দেশের মাটিতে ভারতীয় স্পিনারদের রেকর্ড অসাধারণ। তবে সবশেষ সিরিজে কার্যকারিতার দিক থেকে যেন তাদের ছাড়িয়ে গেছেন পেসাররা। উইকেট বলছে বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে উমেশ যাদব-মোহাম্মদ শামিদের আগুনে গোলা। মুমিনুল জানালেন, পেসারদের সঙ্গে রবিচন্দ্রন অশ্বিন-রবীন্দ্র জাদেজাদের স্পিনের জন্যও প্রস্তুত তার দল, 'ভারত এমন একটা দল যারা একেক দলকে একেক চ্যালেঞ্জ দিয়ে থাকে। আমাদের স্পিন দিয়ে চ্যালেঞ্জ দিতে পারে কিংবা পেস দিয়ে চ্যালেঞ্জ দিতে পারে। আমরা দুই দিক দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হবে। সেটা নেওয়ার মনমানসিকতা সবারই আছে।' সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে কোহলির দল। তিন ম্যাচে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান করেন ডাবল সেঞ্চুরি। প্রথমটিতে ২০৩ রানে জেতার পর বাকি দুটিতে স্বাগতিকরা জেতে ইনিংস ব্যবধানে। বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ কি হবে, জানা নেই মুমিনুলের। তবে তারা সব কিছুর জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছেন। ভারতে এসে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। তবে এর জন্য প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি দেখেন না সফরকারী অধিনায়ক, আমার মনে হয় না, প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি আছে। টেস্ট দলের আট খেলোয়াড় দেশে চার দিনের ম্যাচ খেলে এসেছে। আমি পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে আট থেকে ১০টা চার দিনের ম্যাচ খেলেছি। অনেকে 'এ' দলে খেলেছে, মুশফিক ভাই, (মাহমুদউলস্নাহ) রিয়াদ ভাই সবাই প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছে। আমার মনে হয় না, কোনো সমস্যা হবে। সবাই খেলার মধ্যেই ছিল। আশা করি, সবাই ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারবে।' টেস্ট ব্যাটসম্যানদেরর্ যাংকিংয়ে রয়েছে ভারতের চারজন। বোলারদেরর্ যাংকিংয়ের শীর্ষে ২৫-এ আছে দেশটির ছয়জন। স্বাগতিকদের শক্তিমত্তায় ঘাবড়ে যাচ্ছেন না মুমিনুল, 'বিষয়টা হলো পুরোপুরি মানসিক। ব্যাপারটা হলো যে, যখন কোনো দলের বিপক্ষে খেলবেন, আনুষঙ্গিক সব কিছু আপনার লক্ষ্য রাখতে হবে। কোন দিকে কে কতটা শক্তিশালী, কার ব্যাটিং কেমন, বোলিং কেমন সবই লক্ষ্য করতে হবে। আপনার মাইন্ড সেট কেমন হবে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমার কাছে ব্যাপারটা এমন মনে হয়।'