ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ

তৃতীয় পেসারের অভাব টের পাচ্ছেন মুমিনুলরা

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
কাটার বয় মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে অনেক আতঙ্ক ছিল ভারতীয়দের। কিন্তু প্রথম টেস্টের একাদশে রাখা হয়নি বাঁহাতি এ পেসারকে। শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ইন্দোরের হোল্কার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বোলিং অনুশীলন করছেন সফরকারীদের এ পেসার -বিসিবি
সকাল নাকি বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে। ইন্দোরের হোল্কার স্টেডিয়ামে শুক্রবার দিনের শুরুটা তো ছিল বাংলাদেশেরই। আবু জায়েদ রাহির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ইঙ্গিত ছিল লড়াইয়ে ফেরার। চেতেশ্বর পূজারা-বিরাট কোহলিকে দ্রম্নত ফিরাতেই প্রাণ ফিরে এসেছিল ম্যাচে। কিন্তু মধ্য প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে সূর্যের আলো যত বাড়ছিল, ততই যেন ফিকে হচ্ছিল টাইগারদের সম্ভাবনা! আগের দিন মাত্র ১৫০ রানে অলআউটের পর পিছিয়ে পড়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এরপর শুক্রবার টেস্টের দ্বিতীয় দিনে যোগ হয়েছে ভারতের রান পাহাড়ের চাপ! আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অভিষেকটা দুঃস্বপ্নের মতো হতে যাচ্ছে সফরকারীদের। ইন্দোর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষেও স্পষ্ট দাপট কোহলিদের। অধিনায়ক মুমিনুলের নেতৃত্বের দ্বিতীয় দিনটাও ভালো কাটল না। অবশ্য তিনি নিজেও তেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন কোথায়? দিনভর দুই পেসার আর দুই স্পিনারকেই একটানা বল করিয়ে গেলেন। অনিয়মিত বোলারের দ্বারস্থ হলেন শেষ বিকালে। রাহি, এবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুলের বাইরে কাউকে ভাবতে ভাবতেই দিন প্রায় শেষ! যদিও মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ ৩ ওভার বল করলেও সাফল্য পাননি। এরমধ্যে আবু জায়েদ রাহি দুর্দান্ত বল করে আক্ষেপটাই বাড়ালেন। নিশ্চিত করেই এই টেস্টে আরও একজন পেসার বাড়তি নিয়ে খেলতে পারত। এমনিতেই নেই সাকিব, তাতে বোলিং ভারসাম্য হারিয়েছে বাংলাদেশ। তার উপর ভারত যখন হোমে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার বৈশিষ্ট্যের উইকেটে খেলতে অভ্যস্ত তখন একাদশে পেস বোলার মাত্র ২ জন। ইন্দোর টেস্টে ভারতের হাতিয়ার যেখানে পেস, সেখানে নেতিবাচক মানসিকতা বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ পর্যুদস্ত হয়েছে ভারতের পেস বোলিংয়ে, জবাবে ভারতের উপর যেটুকু হামলা চালিয়েছে বাংলাদেশ দল, তা পেস জুটি দিয়েই। দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চ পর্যন্ত যা কিছু অর্জন, তা পেস বোলিংয়েই। প্রথম ঘণ্টায় ৬০ রানে ভারত হারিয়েছে ২ টপ অর্ডারকে। তা রাহির বোলিংয়েই। রাহির একটা স্পেলে (৭-০-৪৩-২) চেতেশ্বর পুজারা চতুর্থ স্স্নিপে দিয়েছেন ক্যাচ। টেস্ট অভিষেকে প্রতীক্ষা বেড়েও অসাধারণ ডাইভিং ক্যাচে চেতেশ্বরকে (৫৪) দিয়েছেন ফিরিয়ে সাইফ হাসান। লেন্থ বলে কোহলি ডিফেন্স করতে গিয়ে এলবিডবিস্নউর ফাঁদে পড়েছেন, তাও আবার ০ রানে। রিভিউ আপিলে জিতে কোহলিকেও পকেটে পুরেছেন এই রাহি। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন টেস্টে ৩ উইকেটে (৩/৯৪) মুগ্ধতা ছড়ানো বোলিংয়ের পরও আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ছিলেন সাইড লাইনে। ফিরতি টেস্টে ভারতের বিপক্ষে চলমান টেস্টে দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চ পর্যন্ত তার শিকার ৩ উইকেট (৩/৫৮)। টেস্টে পেস বোলাররা ছোট-ছোট স্পেলে বল করবেন, তাদের চেয়ে স্পিনারদের বোলিং হবে বেশি। প্রচলিত এই ফর্মূলায় যারা এতদিন দেখেছে বাংলাদেশ দলকে, তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন রাহি-এবাদত। এতকিছুর মধ্যেও বাংলাদেশ পেস জুটি পেয়েছে হাততালি। দুইদিনে ৪৮.১ ওভার বল করেছেন রাহি-এবাদত। ৬ উইকেটের মধ্যে ৫টিই তাদের। তৃতীয় পেস বোলার থাকলে বিশ্রামটা পেতেন পর্যাপ্ত, বলের ধারটাও আরও বাড়ত তাদের। নেটে জাদেজা, অশ্বিনকে খেলতে অভ্যস্ত যারা, তাদের কাছে তাইজুল, মিরাজ-কি এমন ভয়ংকর বোলার? টার্নহীন উইকেটে যে আরও বেশি নির্বিষ দেখাচ্ছে বাংলাদেশের এই স্পিন জুটিকে। দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মায়াঙ্কা আগরওয়ালকে সাজঘরে ফিরিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট জাতীয় লিগের পারফরমেন্স দেখে আল আমিনকে দলে নিয়ে তাকে খেলানো হয়েছে টি২০তে। অথচ চারদিনের ম্যাচের আসর জাতীয় লিগে প্রথম ২ রাউন্ডে ১২.০০ গড়ে ৮ উইকেট পেয়েও ব্রাত্য আল আমিন। মুস্তাফিজের সঙ্গে ড্রেসিং রুমে বসে খেলা দেখা ছাড়া তার যে উপায় নেই ! টেস্টে ইনিংস হারের তেতো স্বাদ নিতে অভ্যস্ত বাংলাদেশ। ইন্দোর টেস্টেও সেই পথে এগোচ্ছে মুমিনুল হকের দল। মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ডাবল সেঞ্চুরির (২৪৩) সঙ্গে চেতেশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানে ও রবীন্দ্র জাদেজার হাফসেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় দিনে শেষেই ৩৪৩ রানের লিড নিয়েছে ভারত। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সূত্র টেনে বলতে হচ্ছে, রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের চোখ রাঙাচ্ছে আরও একটি ইনিংস হার। শুক্রবার হল্কার স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান তুলেছে ভারত। উইকেটে আছেন জাদেজা ৬০ ও উমেশ ২৫ রানে। আগের দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতীয় বোলারদের তোপের মুখে চা বিরতির পরপরই বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৫০ রানে। ভারত দিনের খেলা শেষ করেছিল ২৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৬ রান তুলে। ইন্দোর টেস্টের ভবিষ্যৎটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। ভারত জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে। কে জানে, তৃতীয় দিনেই না আবার ১-০ তে এগিয়ে যায় বিরাট কোহলির দল!