অনেক প্রশ্ন তুলে অসহায় আত্মসমর্পণ

টেস্টে ফল পক্ষে আনতে না পারলেও আশা ছিল চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা দেখাবে বাংলাদেশ। কিন্তু মুমিনুল হকের দল জানান দিল তারা পড়ে আছে সেই তিমিরেই। টেস্ট আঙিনায় ১৯ বছর পেরিয়েও বাংলাদেশ আসলে এখনো ঠিকমতো দাঁড়াতেই শেখেনি।

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ম্যাচটা প্রথম ইনিংসেই খুইয়ে বসেছিল বাংলাদেশ। এরপর দেখার ছিল কোনো লড়াই আসে কিনা, কেউ দেখাতে পারেন কিনা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। শেষপর্যন্ত বলার মতো তেমন কিছুই হয়নি। বরং ফের অনেকগুলো প্রশ্ন উঠিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচটা হারল দুঃস্বপ্নের মতো। দেখাল টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের রূঢ় বাস্তবতার আরেকটি ছবি। ইন্দোরে প্রথম টেস্টে ভারতের কাছে ইনিংস ও ১৩০ রানে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রান করার পর ভারত ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪৩ রানে পিছিয়ে শুরু করে বাংলাদেশ করতে পেরেছে ২১৩ রান। এই হারে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ভুলে যাওয়ার মতো শুরুর পাশে বিরাট কোহলিরা নিজেদের পয়েন্ট নিয়ে গেলেন আরও চূড়ায়। এই ইনিংসে মুশফিকুর রহিম কিছুটা লড়াই করেছেন, কিন্তু পাঁচে নেমে তার ৬৪ রান এসেছে বড্ড দেরিতে। খানিকটা দু্যতি ছিল লিটন দাস আর মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটেও। কিন্তু ওসব কেবলই হারের ব্যবধান কমানোর সংখ্যা। প্রথম টি২০তে দারুণ জয়ে শুরুর পর লড়াই হয়েছিল সিরিজ জুড়ে। টেস্টে ফল পক্ষে আনতে না পারলেও আশা ছিল চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তা দেখাবে বাংলাদেশ। কিন্তু মুমিনুল হকের দল জানান দিল তারা পড়ে আছে সেই তিমিরেই। টেস্ট আঙিনায় ১৯ বছর পেরিয়েও বাংলাদেশ আসলে এখনো ঠিকমতো দাঁড়াতেই শেখেনি। প্রস্তুতি থেকে একাদশ নির্বাচন, পরিকল্পনা থেকে প্রয়োগ। সবখানেই মার খেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের সঙ্গে খেলতে নেমে কোন জায়গাতেই থই খুঁজে পায়নি রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। বাজে টেকনিক, ভুল অ্যাপ্রোচ, টেম্পারমেন্টের ঘাটতি- বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বহুবার বলা এসব কথা আবারও কোনো দ্বিধা না করেই এই টেস্টেও বসিয়ে দেওয়া যায়। টস জিতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে দেড়শ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইনিংসের ভুল পরের ইনিংসেও শোধরাতে পারেননি তারা। জায়গায় গিয়ে খেলতে না পারা, বলের লাইন বুঝতে না পারায়, মুভমেন্ট বুঝে না খেলা, ফুটওয়ার্কের ব্যবহার না করে জড়সড় থাকা। অনেক টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি বেরিয়েছে দৃষ্টিকটুভাবে। বেসিক জায়গাগুলোই ছিল নড়বড়ে। বাংলাদেশ কেন খেলছে, কি লক্ষ্যে এগুচ্ছে কোনো পরিকল্পনাই বোঝা যায়নি খেলার ধরনে। ব্যাটসম্যানদের ডুবিয়ে দেওয়ার পর এক পেসার ঝাঁজ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় শক্ত ব্যাটিং লাইনআপকে বাকিরা মিলে নাড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। প্রতিপক্ষ তাই আনতে পেরেছে বড় রান। উইকেট বুঝতে না পারা, ভুল কৌশল আর ভুল পরিকল্পনায় খেলতে নামার সঙ্গে সবচেয়ে প্রকট হয়ে ধরা দিল টেস্ট খেলার মানসিকতার অভাবও। দেশে আফগানিস্তানের সঙ্গে হারের পর অনেক সমালোচনায় পড়া দল ভারতে এসে নিজেদের অন্য ছবি দেখাতে পারল না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতি নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠলে তা অযৌক্তিক বলেও উড়িয়ে দেওয়ার উপায় থাকবে না। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে দুই টেস্টই তিনদিনে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার আবার দেখা গেল তিনদিনে হারের দৃশ্য। লড়াইবিহীন, বিবর্ণ বাংলাদেশ দেখাল কতটা অপ্রস্তুত তারা।