জাজাইয়ের ফিফটিতে বিধ্বস্ত ঢাকা

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ঢাকা পস্নাটুনের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করার পর ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন রাজশাহী রয়্যালসের ব্যাটসম্যান হজরতউলস্নাহ জাজাই -বিসিবি
টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি তারকায় ঠাসা দল ঢাকা পস্নাটুন। কিন্তু প্রথম ম্যাচে একদমই নিষ্প্রভ সেই তারকারাজি। বোলাররা মামুলি রানে বেঁধে ফেললেন প্রতিপক্ষকে। এরপর সহজ লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতেই জয়ের ভিত পেল রাজশাহী রয়্যালস। ঝড় তোলা লিটন কুমার দাস সাজঘরে ফিরলেও হজরতউলস্নাহ জাজাই একপ্রান্ত আগলে রাখলেন। আফগানিস্তানের ওপেনারের অপরাজিত ফিফটিতে মাশরাফি-তামিমদের দলকে ৯ উইকেটে উড়িয়ে আসরে শুভসূচনা করল আন্দ্রে রাসেলের রাজশাহী রয়্যালস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচে ঢাকাকে ১৩৪ রানে আটকে রেখে রাজশাহী ম্যাচ জিতে নিল ১০ বল হাতে রেখেই। এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রান তোলে মাশরাফি বিন মর্তুজার ঢাকা পস্নাটুন। জবাবে ১৮.২ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে রাজশাহী। উইকেটে ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। রাজশাহীর ইনিংসেই প্রমাণ মেলে সেটির। ঢাকা ডুবেছে ব্যাটসম্যানদের বাজে শটের মহড়ায়। এই ম্যাচ দিয়েই ৫ মাস পর মাঠে ফেরেন মাশরাফি। ব্যাট হাতে খেলেন ক্যামিও। বোলিংয়ে উইকেট না পেলেও একদম খারাপ করেননি। তবে দল বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় ফেরার ম্যাচটি থেকে সব মিলিয়ে পাননি মনে রাখার মতো খুব বেশি কিছু। তামিম ইকবালের জন্যও ছিল একরকম মাঠে ফেরার ম্যাচ। পারিবারিক কারণে কিছুদিন ছিলেন ক্রিকেটের বাইরে। গত বিপিএলের ফাইনালে ১৪৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান এবার বিপিএল শুরু করলেন ৫ রানে আউট হয়ে। এদিন মিরপুর স্টেডিয়ামে জাজাই অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে ৫৬ রানে। যদিও শুরুতে টাইমিং পেতে সংগ্রাম করলেও ধীরে ধীরে খোলস ছাড়েন এই বাঁহাতি। তার ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ৩ ছয়। রাজশাহীর ইনিংসের শুরুতে লিটনের সঙ্গে ৫০ বলে ৬২ রানের জুটি গড়েন তিনি। এরপর শোয়েব মালিককে নিয়ে ৬০ বলে যোগ করেন অবিচ্ছিন্ন ৭৪ রান। লিটন ২৭ বলে ৩৯ রান করেন ৪ চার ও ২ ছয়ে। নবম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারার পর দ্বিতীয় বলেও উড়িয়ে মারতে গিয়ে কুপোকাত হন তিনি। তার উইকেটটি নেন মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদি। মালিক ৩৬ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন। তিনি মারেন ৩ চার ও ১ ছয়। ঢাকার দলনেতা মাশরাফি ১৫৯ দিন পর মাঠে নেমে ৩ ওভারে দেন ১৮ রান। পাননি উইকেট। তবে ১৯তম ওভারে জয় এলেও ম্যাচের উত্তেজনা শেষ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। রান রেটের চাপ ছিল না, দুজনের কাউকেই খুব ঝুঁকি নিতে হয়নি। তুমুল লড়াইয়ের আবহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে ম্যাড়মেড়ে। এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকার ব্যাটসম্যানরা গড়তে পারেননি কোনো ভালো জুটি। কারও কাছ থেকে আসেনি বড় ইনিংস। ফলে ধুঁকতে হয়েছে দলটিকে। শেষ তিন ওভারে ওয়াহাব রিয়াজ-মাশরাফিরা মেরেকেটে ৩৮ রান তোলায় অবশ্য ভদ্রস্থ সংগ্রহ পায় তারা। ইনিংসের শুরুতেই ধাক্কা খায় ঢাকা। দুই মাস পর মাঠে নামা তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল হন ব্যর্থ। ৫ রান করে ফেরেন আবু জায়েদ রাহীর শিকার হয়ে। তিনে নামা লরি ইভান্সকে সাজঘরে পাঠান ফরহাদ রেজা। তৃতীয় উইকেটে ৩৯ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন এনামুল হক বিজয় ও জাকের আলী। তাদের ব্যাটিংয়ে লড়াই করার পুঁজি পাওয়ার আভাস ছিল। তবে ২১ রান করে জাকের রানআউট হয়ে গেলে মড়ক লাগে ঢাকার ইনিংসে। মিডল অর্ডারে হাল ধরতে পারেননি কেউ। ১৩ বলের মধ্যে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৫ রান যোগ করতে ৪ উইকেট হারায় তারা। দ্বাদশ ওভারের শেষ বলে থিসারা পেরেরাকে আন্দ্রে রাসেলের ক্যাচে পরিণত করেন তাইজুল ইসলাম। পরের ওভারের প্রথম বলে আউট হন এনামুল। দলের পক্ষে ৩৩ বলে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১ চার ও ২ ছয়। শহিদ আফ্রিদিকে আসা-যাওয়ার মধ্যে রাখেন রবি বোপারা। ১ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি পাকিস্তানের আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। আর শেষদিকে ওয়াহাব ১২ বলে ১৯ ও ঢাকার অধিনায়ক মাশরাফি ১০ বলে ২ ছক্কায় অপরাজিত ১৮ রান করেন। রাজশাহীর হয়ে ২ উইকেট নেন পেসার আবু জায়েদ। তবে তিনি ছিলেন বেজায় খরুচে। ইনিংসের শেষ ওভারে ২০ রানসহ মোট ৪৩ রান দেন তিনি। সংক্ষিপ্ত স্কোর ঢাকা পস্নাটুন: ২০ ওভারে ১৩৪/৯ (তামিম ৫, এনামুল ৩৮, ইভান্স ১৩, জাকের ২১, থিসারা ১, আরিফুল ৫, আফ্রিদি ০, মেহেদি ৬, ওয়াহাব ১৯, মাশরাফি ১৮*, হাসান; রাসেল ০/৮, আবু জায়েদ ২/৪৩, তাইজুল ১/২৩, ফরহাদ ১/১৪, অলক ১/১৮, মিনহাজুল আফ্রিদি ০/১২, বোপারা ১/১৫)। রাজশাহী রয়্যালস: ১৮.২ ওভারে ১৩৬/১ (জাজাই ৫৬*, লিটন ৩৯, মালিক ৩৬*; মাশরাফি ০/১৮, হাসান ০/৩৫, মেহেদি ১/২৩, ওয়াহাব ০/২৬, আফ্রিদি ০/২৫, থিসারা ০/৬ )। ফল: রাজশাহী রয়্যালস ৯ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা: রবি বোপারা