পাঁচ মাস পর মাঠের লড়াইয়ে মাশরাফি

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শেষে পাঁচ মাস পর বল হাতে মাশরাফি বিন মর্তুজা -বিসিবি
৫ জুলাই থেকে ১২ ডিসেম্বর। মাঝে পেরিয়ে গেছে পাঁচটি মাস। দেশের ক্রিকেটে ঘটেছে বড় বড় ঘটনা। তবে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ছিলেন অনেকটা আড়ালে। লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেমেছিলেন তিনি। মাঠের ক্রিকেটে ওই শেষবার দেখা গিয়েছিল তাকে। বিশ্বকাপের পর শ্রীলংকা সফরে যেতে পারেননি চোটের কারণে। এরপর আর ওয়ানডে ছিল না বাংলাদেশের। ক্রিকেট থেকেও অনেকটাই দূরে সরে মাশরাফি ব্যস্ত ছিলেন রাজনীতির মাঠে। বিশ্বকাপের পারফম্যান্স, অবসর নিয়ে বিতর্কের জেরে নিজেকে গুটিয়েও রেখেছিলেন এই সময়ে। বিশ্বকাপের পর বিপিএল। লম্বা বিরতির পর আবার মাশরাফি ফিরলেন মাঠের ক্রিকেটে। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ম্যাচে ঢাকা পস্নাটুনের হয়ে টস করেছেন এই টুর্নামেন্টের সফলতম অধিনায়ক। রাজশাহী রয়্যালসের আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে টস হেরে তার দল পেয়েছে ব্যাটিং। মাঝের এই সময়টায় মাশরাফি কোনো পর্যায়েই কোনো ম্যাচ খেলেননি, এমনকি অধিকাংশ সময় অনুশীলনেও ছিলেন অনুপস্থিত। তবে তার নেতৃত্বে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। দারুণ শুরুর পর টুর্নামেন্টের শেষ দিকে খেই হারায় বাংলাদেশ। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে অনেকটা জোর করে খেলা চালিয়ে যাওয়া মাশরাফিও ছিলেন বিবর্ণ। দলের হার আর বিবর্ণ মাশরাফি বিশ্বকাপের পর পড়েছিলেন তুমুল সমালোচনায়। গুঞ্জন উঠেছিল তার অবসরের। কিন্তু অবসর নিয়েও নিশ্চুপ থেকেছেন তিনি। বরাবরই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় ইতিবাচক এই সময়ে ক্রিকেট নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি। গত সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার জন্য বিদায়ী একটি ওয়ানডে আয়োজনের চিন্তা করেছিল বিসিবি, তাতেও সায় দেননি তিনি। কেবল তার জন্য ম্যাচ আয়োজনে খরচ না করে হাইপারফরম্যান্স ইউনিটে টাকা খরচ করার কথা বলেছিলেন তিনি। গত পাঁচ মাসে ক্রিকেট নিয়ে ওই একটাই কথা ছিল তার। এই সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঘটেছে বেশ বড় কিছু ঘটনা। ভারত সফরের ঠিক আগে এগারো দাবি দাওয়া নিয়ে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। সেই ধর্মঘটে ক্রিকেটারদের কেউ মাশরাফিকে সম্পৃক্ত করেননি। ফেসবুকে এই আক্ষেপ জানালেও ক্রিকেটারদের দাবিতে সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি। ধর্মঘটের পর পর দেশের ক্রিকেট খায় বিশাল ধাক্কা। তিন তিনবার জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন সাকিব আল হাসান। সাকিব নিষিদ্ধের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অলরাউন্ডার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মাশরাফি। পাঁচ মাস পর ফেরার ম্যাচে দল হারলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে খুব একটা মন্দ করেননি তিনি। ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ রান এসেছে। মূল যে কাজ সেই বোলিংয়ে মাশরাফিকে দেখা গেছে আগের মতোই বুদ্ধি খাটিয়ে আঁটসাঁট বোলিংয়ের ভূমিকায়। তবে উইকেট পাননি তিনি, শেষ করেননি চার ওভারের কোটাও। বৃহস্পতিবার আগে ব্যাটিং পেয়ে মাশরাফির দল ঢাকা পস্নাটুন খুব বেশি রান আনতে পারেনি। ব্যাটিং ব্যর্থতায় তারা থামে ১৩৪ রানে। যাতে দুই ছক্কায় অপরাজিত ১৮ করে অবদান মাশরাফির। ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে এই অল্প রান আটকাতে প্রথম ওভারেই বল হাতে নেন মাশরাফি। পাঁচ মাস কোন রকমের ক্রিকেট না খেলা, অনুশীলনেও অনুপস্থিত থাকার প্রভাব খুব একটা পড়েনি তার বলে। প্রথম ওভারে জায়গায় বল করে দেন মাত্র ৪ রান। প্রথম স্পেলে ছিল ওই এক ওভারই। চতুর্থ ওভারে আবার ফিরে এক বাউন্ডারি খেয়ে দেন ৬ রান। আবারও এক ওভারের স্পেল শেষ করে মাশরাফি ফেরেন দ্বাদশ ওভারে। আবার তার বল থেকে এক চারে ৮ রান তুলে নেন শোয়েব মালিক আর হজরতুলস্নাহ জাজাই। মাশরাফি আর অফ স্পিনার মেহেদী হাসান ভালো করলেও বাকিরা ছিলেন মলিন। রান তাড়ায় তাই কোনো বেগ পেতে হয়নি রাজশাহী রয়্যালসের। ১০ বল বাকি রেখে তারা জিতে যায় ৯ উইকেটে। রাজশাহীর অনায়াসে জেতার পরিস্থিতি তৈরি হলে নিজের শেষ ওভারটি আর করতে পারেননি ঢাকার অধিনায়ক।