আজকের যায়যায়দিন

ফেডারেশন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পা রেখেছে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানকে ১-০ গোলে হারিয়ে ৩৯ বছরের না পাবার আক্ষেপ ঘুচিয়েছে জায়ান্ট কিলার খ্যাত পুরানো ঢাকার দলটি। এর আগে কোয়ার্টার ফাইনালে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনীকে হারিয়ে সেমি নিশ্চিত করেছিল রহমতগঞ্জ। তাতে দেশের শীর্ষ দুই জনপ্রিয় ক্লাব মৌসুমের প্রথম আসরেই শিরোপার লড়াইয়ে যেতে ব্যর্থ হলো।

ফেডারেশন কাপ ফুটবল হয়ে আসছে ১৯৮০ সাল থেকে। কিন্তু বিগত ৩৯ বছরে কখনো ফাইনালে উঠতে পারেনি রহমতগঞ্জ। সেমিফাইনালে দুই দলের মধ্যে ফেভারিট ছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ফেডারেশন কাপে ঢাকা আবাহনীর পর সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডটি তাদের। এই টুর্নামেন্টের মোট ১০টি শিরোপা আছে সাদা-কালোদের শোকেসে। এছাড়া তারা ৪ বার রানার্সআপও হয়েছে। অন্য দিকে ফাইনালে খেলাটা ছিল রহমতগঞ্জের স্বপ্ন। কারণ টুর্নামেন্ট শুরুর পর কখনো ফাইনালে পা রাখতে পারেনি পুরানো ঢাকার দলটি। পরিসংখ্যান সব সময় মানদন্ড হিসেবে কাজ করে না। ফেভারিট মোহামেডানকেই বৃহস্পতিবার ম্যাচের শুরু থেকে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খাইয়েছে আন্ডারডগ রহমতগঞ্জ।

ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটেই একটি গোলের সুযোগও সৃষ্টি করেছিল তারা। মোহামেডানের বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পেয়ে তাজিক ডিফেন্ডার আসোরোভ ডান পায়ের জোরালো শট নেন। মোহামেডানের গোলরক্ষক হোসেন সুজন কোনোমতে সেটা ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে দলকে এ যাত্রা রক্ষা করেন। তবে ১৫ মিনিটে ঠিকই গোল আদায় করে নিয়েছে কোচ সৈয়দ গোলাম জীলানীর শিষ্যরা। ডান প্রান্ত থেকে প্রতিপক্ষ বক্সের কাছাকাছি থেকে ডান পায়ের উড়ন্ত ক্রস দেন মিডফিল্ডার শাহেদুল আলম। বক্সের ভেতর মোহামেডানের ডিফেন্ডাররা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা ছোট একটি লাফ দিয়ে হেড করেন উজবেক ফরোয়ার্ড তুযারেভ আকোবির। সেই কৌণিক হেডের বল মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগাল পাননি। বল চলে যায় জালে। প্রথম গোলের দেখা পেয়ে উৎসবে মাতে রহমতগঞ্জ শিবির (১-০)। ৩৪ মিনিটে উসাই মং মারমা বল নিয়ে রহমতগঞ্জের বক্সের দিকে যাবার সময় তাকে অবৈধভাবে বাধা দেন সানোয়ার। রেফারি হলুদ কার্ড এবং ফ্রি কিকের নির্দেশ দেন। মিডফিল্ডার হাবিবুর রহমান সোহাগের স্পট কিক বক্সে হেডে ক্লিয়ার করেন রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডাররা। প্রথমার্ধের সংযুক্তি সময়ে (৪৫+১ মিনিটে) সমতায় ফেরার সুযোগ হারায় মোহামেডান। তাদের ফরোয়ার্ড উসাই মং মারমা রহমতগঞ্জের ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের যে জোরালো কোনাকুনি শটটি নেন, সেটা ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। ৭৮ মিনিটে আমিনুর রহমান সজীব একবার রহমতগঞ্জের জালে বল পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বল নিয়ে বক্সে ঢোকার আগেই রেফারি পতাকা উঁচিয়ে অফসাইডের সংকেত দেখিয়ে দিয়েছিলেন। যে কারণে সমতায় ফেরা হয়নি সাদা-কালোদের। ৮১ মিনিটে বক্সের সামান্য দূরে ফ্রি কিক পায় মোহামেডান। কিন্তু মিডফিল্ডার সাহেদ হোসেনের শট বক্সে জটলার মধ্যে ক্লিয়ার করে রহমতগঞ্জের রক্ষণভাগ। ৮৩ মিনিটে টপ ডি থেকে রহমতগঞ্জের এনামুল গাজীর ডান পায়ের বুলেট গতির শট ফিস্ট করেন মোহামেডানের গোলরক্ষক। শেষ পর্যন্ত আর ম্যাচে ফেরা হয়নি দশবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের। তাই সেমিতে জিতে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার স্বপ্ন পূরণ করেছে রহমতগঞ্জ। আজ বিকাল ৪টায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গত আসরের রানার্সআপ বসুন্ধরা কিংসের প্রতিপক্ষ নবাগত বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব। এই ম্যাচের বিজয়ী দল আগামী ৫ জানুয়ারি ফাইনালে মুখোমুখি হবে রহমতগঞ্জের।