ঘুচবে কি দুই যুগের আক্ষেপ?

শিরোপা জয়ের স্বপ্ন থাকলে কঠিন প্রতিপক্ষের ভিড়ে আপাতত সেমিতেই চোখ বাংলাদেশের। তারুণ্যনির্ভর জাতীয় দলটি কি পারবে শিরোপা জিতে দুই যুগের না পাবার আক্ষেপ ঘোচাতে?

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে সেই ২৪ বছর আগে। এ পর্যন্ত মাঠে গড়িয়েছে মোট ৫টি আসর। আয়োজক বাংলাদেশ। কিন্তু এই দুই যুগে একবারের জন্যও শিরোপা ঘরে তুলতে পারেনি লাল-সবুজরা। আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরটি। এবারের বিশেষত্ব হচ্ছে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হচ্ছে এবারের আসর। শিরোপা জয়ের স্বপ্ন থাকলে কঠিন প্রতিপক্ষের ভিড়ে আপাতত সেমিতেই চোখ বাংলাদেশের। তারুণ্য নির্ভর জাতীয় দলটি কি পারবে শিরোপা জিতে দুই যুগের না পাবার আক্ষেপ ঘোচাতে? বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। প্রথম আসরের শিরোপা জিতেছিল মালয়েশিয়ার অনূর্ধ্ব ২৩ দল। পরের আসরটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। যেখানে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট জিতেও গ্রম্নপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল লাল-সবুজদের। কারণ সেবার চার গ্রম্নপের সেরা চার দল খেলেছিল সেমিফাইনাল। মাঝে প্রায় ১৬টি বছর মাঠে গড়ায়নি বঙ্গবন্ধুর নামের এই টুর্নামেন্টটি। গোল্ডকাপের তৃতীয় আসরটি হয় ২০১৫ সালে। ওই আসরে কিছুটা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। সেবার গ্রম্নপ পর্বে মালয়েশিয়া এবং শ্রীলংকার অনূর্ধ্ব ২৩ দলকে সঙ্গী হিসেবে পায় স্বাগতিকরা। মালয়েশিয়ার কাছে ১-০ গোলে হারলেও চেনা প্রতিপক্ষ শ্রীলংকার বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ২৩ দলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে নাম লেখায় আয়োজক বাংলাদেশ। কিন্তু শিরোপা লড়াইয়ে আবারও প্রতিপক্ষ হিসেবে মালয়েশিয়াকে পায়। গ্রম্নপ পর্বের মতোই জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হয় ফাইনালেও। তবে তুমুল লড়াই করেই শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে হেরে টুর্নামেন্টের রানার্স আপ হয়েছিল লাল-সবুজরা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ২৪ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের বড় সাফল্য বলতে ছিল এই রানার্সআপ হওয়াটাই। এরপর ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অংশ নেয় বাংলাদেশের দুটি দল। এর একটি সিনিয়র জাতীয় দল, অন্যটি ছিল অনূর্ধ্ব ২৩ দল। দুই দলের একটি শিরোপা জিততে পারলেও বাংলাদেশের নামটা থাকতো ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু সিনিয়র জাতীয় দল শেষ চার পর্যন্ত পৌঁছালেও হতাশ করেছিল অনূর্ধ্ব ২৩ দল। অনূর্ধ্ব ২৩ দল গ্রম্নপ পর্বে ১-১ গোলের ড্র করে বাহরাইন অনূর্ধ্ব ২৩ দলের সঙ্গে। অন্য দুই ম্যাচে তারা ৩ পয়েন্ট খুইয়ে মাঠ ছাড়ে। মালদ্বীপ জাতীয় দলের কাছে ২-০ গোলে আর কম্বোডিয়া জাতীয় দলের কাছে ১-০ গোলের হারে গ্রম্নপ থেকেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় জুনিয়রদের। আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল সিনিয়ররা। গ্রম্নপ পর্বে শ্রীলংকাকে ৪-২ গোলে হারানোর পর মালয়েশিয়ান ক্লাব ফেলদা ইউনাইটেডের সঙ্গে ১-১ গোলে এবং নেপালের সঙ্গে গোলশূন্য (০-০) ড্র করে গ্রম্নপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ সিনিয়র জাতীয় দল। তবে সেমিতে বাহরাইন অনূর্ধ্ব ২৩ দলের কাছে ১-০ গোলে হেরে এখানেই যাত্রা শেষ হয় বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সর্বশেষ আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। সেই আসরে গ্রম্নপ পর্বে প্রথম ম্যাচে লাওসকে ১-০ গোলে হারালেও পরের ম্যাচে ফিলিপাইনের কাছে একই ব্যবধানে হেরে যায়। তবে গ্রম্নপে দল কম থাকাতে কিছুটা সুবিধা হয়। গ্রম্নপ রানার্সআপ হয়ে শেষ চারের জন্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। সেমিতে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় ফিলিস্তিনকে। ওই ম্যাচে ২-০ গোলে হেরে আবারও সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। পরে ফাইনালে তাজিকিস্তানকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ফিলিস্তিন। সেই চ্যাম্পিয়ন দলটিকে দিয়েই এবারের মিশন শুরু হবে জামাল ভুঁইয়াদের। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন। তাই শিরোপা জিতে আসরটি স্মরণীয় করে রাখতে নানান উদ্যোগ নিচ্ছে বাফুফে। ইতোমধ্যে খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে বড় অঙ্কের অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু মাঠের লড়াইটা তো করতে হবে জামাল ভুঁইয়াদেরই। কোচ জেমি ডে ও দলের ফুটবলাররা বলছেন তারা প্রস্তুত আছেন লড়াই করতে। তবে সেই লড়াইয়ে নিজেদের কতভাগ দিতে পারবেন দেশের ফুটবলাররা- সেটি দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র একটি দিন। এবারের আসরে অংশ নিচ্ছে ৬টি দল। এর মধ্যে গ্রম্নপ 'এ'-তে অংশ নিচ্ছে এশিয়ার তিন দল স্বাগতিক বাংলাদেশ, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিন এবং শ্রীলংকা। 'বি' গ্রম্নপে আফ্রিকার তিন দল সিসিলিস, বুরুন্দি এবং মরিসাস।