ট্রিপল সেঞ্চুরিতে তামিমের ইতিহাস

প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন সর্বোচ্চ ইনিংসটির মালিক তামিম ইকবাল। রোববার তার উইলো থেকে বেরিয়ে এসেছে হার না মানা ৩৩৪ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। যে ইনিংসের সাক্ষী হয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। ট্রিপল সেঞ্চুরির ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কেক কেটে উদযাপন করা হয়েছে -বিসিবি
দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) খেলতে নামা তামিম ইকবালের ব্যাটে আগুন ঝড়ছে। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এ প্রতিযোগিতায় নেমেই ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের জানান দিলেন দেশসেরা এ ব্যাটসম্যান। ১৩ বছর আগে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড গড়েছিলেন রকিবুল হাসান। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনশ পেরোনো ব্যক্তিগত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এতদিন দেশের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে তার নামই উচ্চারিত হতো। তবে সেই কীর্তি আর রকিবুলের একার থাকল না। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন তামিম ইকবাল। অপরাজিত ৩৩৪ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে বাঁহাতি তারকা জায়গা করে নিলেন ইতিহাসের পাতায়। রকিবুলের ৩১৩ রান ছাড়িয়ে ৩৩৪ রান করে দেশের হয়ে প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। একটু মনে করিয়ে দেই- টেস্ট ক্রিকেটে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সর্বোচ্চ রানও কিন্তু ৩৩৪ রান। স্যার ডনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তামিমও কি ঠিক সেখানেই নিজেকে থামিয়ে রাখলেন? রোববার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের প্রথম ত্রিশতক করার অনন্য স্বাদ নিয়েছেন তামিম। ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের হয়ে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে ৪০৭ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন দেশসেরা ওপেনার, ভাগ বসিয়েছেন রকিবুলের কীর্তিতে। তিনশ রানে পৌঁছতে মেরেছেন ৪০টি চার। তামিমের এমন রাজকীয় দিনে ২ উইকেটে ৫৫৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছে পূর্বাঞ্চল। ৪২৬ বলে ৪২ চার আর তিন ছক্কায় তামিম অপরাজিত থেকে গেছেন ৩৩৪ রানে। প্রথম শ্রেণিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের খেলা এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। শুভাগত হোমের করা ১৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি অনসাইডে ঠেলে দিয়ে দৌড়ে এক রান নিয়ে রেকর্ডের মালিক হয়ে যান তামিম। তবে খুব বেশি উদযাপন করেননি তিনি। কেবল ব্যাটটা সামান্য উঁচিয়েছেন। আগের ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান রকিবুল এই ম্যাচে তামিমের প্রতিপক্ষ ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল দলে। অন্যদের সঙ্গে তিনিও ছুটে গিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তামিমকে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তামিমের আগের সর্বোচ্চ ছিল বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৬ রান করেছিলেন তিনি। আর জাতীয় দলের বাইরে প্রথম শ্রেণিতে তার আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল জাতীয় লিগে। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে ১৯২ রান করেছিলেন তিনি। গত শনিবার বিসিএলের দ্বিতীয় দিনে আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে থাকা তামিম ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিকে ট্রিপলে পরিণত করতে খুব একটা সময় নেননি। মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ষোড়শ শতক পূর্ণ করতে তামিম খেলেন ১২৬ বল। ১৪ চারে মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ১০০ থেকে ব্যক্তিগত সংগ্রহকে ২০০তে পরিণত করতে এরপর খেলেন আরও ১১৬ বল। মোট ২৪২ বল মোকাবিলায় ২৯ চারে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। রানের পাহাড়ে ওঠা পূর্বাঞ্চলের পিনাক ঘোষ ফিরেছিলেন ২৬ রানে। দ্বিতীয় দিনে তামিমের ডাবল সেঞ্চুরি (২২২*) আর মুমিনুলের ১১১ রানের ওপর ভর করে ২ উইকেটে ৩৯৫ রান সংগ্রহ করে দিন শেষ করে। তৃতীয় দিনে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন ইয়াসির আলী। আগের দিনের ২৮১ বলে ২২২ রান নিয়ে খেলতে নামেন তামিম, ব্যাটিং শুরু করেন একই রকমের আগ্রাসী মেজাজে। দিনের তৃতীয় বলেই শহিদুল ইসলামকে চার মেরে বুঝিয়ে দেন, মধ্যাঞ্চলের বোলারদের ওপরে ছড়ি ঘোরানো জারি রাখবেন তিনি। পূর্বাঞ্চলের ইনিংসের ১০৭তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে আড়াইশ রানে পৌঁছে যান তামিম। ৩৪ চারের সাহায্যে এই মাইলফলক স্পর্শ করতে তিনি খেলেন ৩১৫ বল। আর মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে তিনি পৌঁছে যান ২৭৯ রানে। আড়াইশ পূরণ করার পর আগ্রাসী মনোভাব সরিয়ে ধীরেসুস্থে ব্যাট করেন তামিম। ট্রিপল সেঞ্চুরি করার দিকে নজর ছিল বলেই হয়তো। তামিম নিজেকে গুটিয়ে নিলেও এ সময়ও শুভাগত, মুস্তাফিজুর রহমান, মুকিদুল ইসলামরা তার স্বচ্ছন্দ গতিতে বাধা দিতে পারেননি। সিঙ্গেল নিয়ে নিয়ে তিনি এগোতে থাকেন ব্যক্তিগত লক্ষ্যের দিকে। শেষ পর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলেন ত্রিশতক। শুরুতে মারমুখী ভঙ্গিতে থাকা তামিম ২৫০ থেকে ৩০০ রানে পৌঁছতে খেলেন ৯২ বল। শেষ পর্যন্ত ৪২৬ বল মোকাবিলা করে ৪২টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৩৩৪ রান সংগ্রহ করে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। এর আগে প্রথম ইনিংসে ২১৩ রানে অলআউট হয় মধ্যাঞ্চল। রোববার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান সংগ্রহ করেছে মধ্যাঞ্চল। সাইফ হাসান ৩৩ ও সৌম্য সরকার ৪ নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৪ রানে ফেরেন। রকিবুল হাসান ১৬ ও শহিদুল ৭* রানে ব্যাট করছেন। দিনশেষে মধ্যাঞ্চল ২২৭ রানে পিছিয়ে। হাতে রয়েছে ৭ উইকেট।