ইয়াসিরের সেঞ্চুরিতে পূর্বাঞ্চলের জয়

বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ বিসিএলের তিন রাউন্ডের লিগ পর্ব শেষে ফাইনালে উঠেছে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ও বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরিতে উচ্ছ্বসিত ইয়াসির আলী
জোড়া সেঞ্চুরিতে জাতীয় দলে ফেরা উদযাপন করলেন ইয়াসির আলী। আগেও একবার ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি টাইগার জার্সিতে। বছরখানেক পর আবারও যখন ডাক মিলল, বিসিএলের তৃতীয় রাউন্ডে দুই ইনিংসে ১৬৫ ও ১১০ রানে ভরসা জোগালেন পূর্বাঞ্চলের ব্যাটসম্যান। সোমবার কক্সবাজারে উত্তরাঞ্চলকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল। দলকে জেতাতে ৮৮ বলে ১১০ রানের ইনিংস খেলেন ইয়াসির। তার আগে ৭৮ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন। আশরাফুল অপরাজিত থাকেন ৭০ রান করে। আরেক ম্যাচে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এক ড্রয়ে টেবিলের দুইয়ে থেকে ফাইনালের টিকিট কেটেছে দক্ষিণাঞ্চল। বিসিএলের ফাইনাল ২২ ফেব্রম্নয়ারি মাঠে গড়াবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তিন রাউন্ডের লিগপর্ব শেষে ফাইনালে যাওয়া পূবাঞ্চলের পয়েন্ট ২৩.৪৭, আর তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণাঞ্চলের পয়েন্ট ১৯.৮৯। টেবিলের তিনে থাকা মধ্যাঞ্চলের পয়েন্ট ১১.৫ এবং উত্তরাঞ্চলের ৬.২২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে। প্রথম ইনিংসে দেড়শ পার করা ইয়াসির ব্যাট করেছিলেন চার নম্বরে। এদিন নেমেছেন ওয়ানডাউনে। নেমেই ঝলক দেখিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কদিন পরেই শুরু হতে যাওয়া টেস্টের স্কোয়াডে ডাক পাওয়া ব্যাটসম্যান। ইয়াসির জাতীয় দলের আশপাশে ছিলেন গত বছরটা ধরেই। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে তাকে নিয়ে আয়ারল্যান্ডে যায় বাংলাদেশ। যদিও একাদশে নামার সুযোগ হয়নি। ২৩ বছর বয়সি ডানহাতি ব্যাটসম্যান নির্বাচকদের টনক নড়ান প্রথম শ্রেণিতে গত বারোমাসে ৬০-এর উপর গড়ে রান তুলে। প্রথম শ্রেণিতে চলতি ম্যাচটাসহ ৫১ ম্যাচে সাড়ে তিন হাজারের মতো রান তার নামের পাশে, ২২ ফিফটির সঙ্গে ৮ সেঞ্চুরি, সেরা এই ম্যাচেই প্রথম ইনিংসে খেলা ১৬৫ রানের ইনিংসটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টের একাদশে এই ফর্মটা টেনে নিতে পারলে স্বস্তি মিলবে বাংলাদেশ দলেরও। শেষদিনে লক্ষ্য ২১১ রান। কিন্তু এই রান তুলতে হবে এক সেশনের কিছু বেশি সময়ে। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে বেশ কঠিন সমীকরণ। বেশির ভাগ দলই এই অবস্থায় হয়তো হাঁটত নিরাপদ পথে। কিন্তু ইয়াসির আলি রাব্বি ভাবলেন ভিন্ন। এই ব্যাটসম্যান তেতে উঠলেন। সঙ্গী হিসেবে মোহাম্মদ আশরাফুলও মেলালেন তাল। তাদের ব্যাটে ওভারপ্রতি ছয়ের উপর রান তুলে দারুণ এক ম্যাচ জিতে নিল পূর্বাঞ্চল। উঠে গেল বিসিএলের ফাইনালেও। উত্তরাঞ্চল নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ২১১ রানের লক্ষ্য ছিল পূর্বাঞ্চলের। রান তাড়ায় নেমে শুরুতেই রান আউটে কাটা পড়েন পিনাক ঘোষ। কিন্তু আশরাফুলকে নিয়ে এরপর খেলার গতি বদলে দেন ইয়াসির। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সানজামুল ইসলামদের পিটিয়ে রান বাড়াতে থাকেন তারা। তাদের জুটি ভাঙতে মুশফিকুর রহিমের হাতেও ওঠে বল। কোনো লাভ হয়নি। ৮৮ বলে ৮ চার, ৫ ছক্কায় সেঞ্চুরি তুলে দলকে জেতার কাছে নিয়ে ২৩ রান বাকি থাকতেই আউট হন ইয়াসির। পরে ইমরুল কায়েসকে নিয়ে কাজ সারেন আশরাফুল। তৃতীয় রাউন্ডের দুই ম্যাচের মধ্যে কক্সবাজারের এই ম্যাচটি রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে বাঁকে বাঁকে। শেষে ড্র, তাতে লাভ হয়েছে আব্দুর রাজ্জাকের দল দক্ষিণের। রাজ্জাকের একটি সিদ্ধান্তের কারণেই শুরু থেকে আলোচনায় ম্যাচটি। মধ্যাঞ্চলকে প্রথম ইনিংসে ২৩৫ রানে অলআউট করে দেয়ার পর রাজ্জাক নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেন মাত্র ১১৪ রানে, সেটিও ৬ উইকেট হাতে রেখেই। প্রতিপক্ষের বোনাস পয়েন্ট ঠেকাতেই এই ফন্দি! সেটি ফাঁস হতে বসেছিল মধ্যাঞ্চলের নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ২৫৩ রানের ইনিংসে। ৮ উইকেটে ৩৮৫ রান তুলে মধ্যাঞ্চল ইনিংস ঘোষণা করার পর জয়ের জন্য দক্ষিণের ৫০৭ রানের লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে হয়। হাতে আবার দেড়দিনেরও বেশি। জবাব দিতে নেমে তৃতীয় দিনে ৪ উইকেটে ১৫৯ সংগ্রহ দক্ষিণের। এনামুল হক বিজয় ৮৩ করেন। শেষদিনে তাই চাপে থেকেই নামে দক্ষিণ। শামসুর ১৩৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলে মিরাজের বলে এলবিডবিস্নউ হন। নাসুম করেন ৮৫ রান। দুজনের জমে যাওয়া ১৪১ রানের জুটিটা ভাঙতেই বিপদ চেপে ধরে দক্ষিণদের। ফরহাদ অপরাজিত ২৭ খেলে ম্যাচ ড্র করে ফেরেন। চোট কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা মিরাজের ৪ উইকেট, শুভাগত হোমের ৩ উইকেট মধ্যাঞ্চলকে লড়াইয়ে রাখলেও আর একটি উইকেট তুলে নিতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ফিরেছেন তারা। দক্ষিণরা ড্র করে আসার সময় ৯ উইকেটে ৩৮৬ রানে ছিল।