নিজেকে উজাড় করে দেবেন সাইফউদ্দিন

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
টেস্ট মিশন শেষ। টাইগারদের লক্ষ্য এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এই সিরিজ সামনে রেখে শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সাত মাস পর জাতীয় দলের সঙ্গে বোলিং অনুশীলন করছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। পেছনে দাঁড়িয়ে তা পর্যবেক্ষণ করছেন রাহি-আলআমিন-শফিউল-মুস্তাফিজরা -বিসিবি
দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে ঢুকেছেন ডানহাতি পেস অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তবে অভিষেকের পর কয়েক দফা বাদ পড়েছেন তিনি। কখনো বাজে পারফরম্যান্সের কারণে, আবার কখনো চোটে পড়ায়। তবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবার। তেমনি আরও এক চোট কাটিয়ে পাঁচ মাস পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিরছেন তিনি। দীর্ঘদিন পর হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরার আগে কোনো চাপ অনুভব করছেন না জানিয়ে সাইফউদ্দিন বলেছেন, এসব খারাপ অভিজ্ঞতার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তাই এবার চোট জয় করে নিজেকে উজাড় করে খেলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। সাইফউদ্দিনের মনে ছিল অনিশ্চয়তার মেঘ। সেটির প্রতিফলন থাকত চেহারাতেও। মন ভার করে থাকতেন। দিন গুনতেন ফেরার অপেক্ষায়। অবশেষে সেই সময় এলো বলে। চোট জয় করে আবার বাংলাদেশের জার্সিতে ফেরার অপেক্ষায় তরুণ এই অলরাউন্ডার। পিঠের চোট সাইফকে ভুগিয়েছে দীর্ঘদিন। ক্যারিয়ারঘাতিও হতে পারত সেই চোট। তাই সময় নিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পুনর্বাসনের পর অবশেষে খেলার মতো অবস্থায় ফিরেছেন। জায়গা পেয়েছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের বাংলাদেশ দলে। শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দলের সঙ্গে অনুশীলন শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন সাইফউদ্দিন। লম্বা সময় পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সবসময়ই কঠিন। তার ওপর সাইফউদ্দিন ঘরোয়া ক্রিকেটেও ফিরেছেন মাত্র সপ্তাহ দুয়েক হলো। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মানিয়ে নিতে তার কিছুটা অস্বস্তি কাজ করতে পারে। কিন্তু শুক্রবার তিনি জানিয়েছেন ভিন্ন কথা, 'চাপ না। উপভোগ করা দরকার। চোটের কারণে হয়তো পাঁচ মাস বাইরে ছিলাম। কিন্তু আমি বাজে পারফরম্যান্সের কারণেও দলের বাইরে ছিলাম আট মাস। আমি এসবে অভ্যস্ত। এখন হয়তো চোট থেকে ফিরছি। আগেও এমন হয়েছে। এসব আসলে চাপ না। পেশাদার হিসেবে এটাই সত্যি। ভালো খেললে থাকব। খারাপ খেলবে আবার বাইরে চলে যাব।' বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ খেলেছেন গত ২১ সেপ্টেম্বর, ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এরপর চোটের সঙ্গে লড়াই। পুনর্বাসনের ক্লান্তিকর ও কষ্টকর প্রক্রিয়া। সতীর্থরা খেলতেন, তিনি অসহায় তাকিয়ে থাকতেন। কখনো টিভি পর্দায়, কখনো গ্যালারি থেকে। পুনর্বাসনের নানা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে দুই সপ্তাহ আগে ফিরেছেন মাঠে। কক্সবাজারে খেলেছেন বিসিএলের ম্যাচ। পারফরম্যান্স অবশ্য খুব ভালো ছিল না। ব্যাটিংয়ে রান পাননি সেভাবে, বোলিংয়ে পাননি উইকেট। তবে দুই ইনিংসে বোলিং করেছেন ২০ ওভার। নির্বাচকদের সেটিই দেখার ছিল। ফিটনেস নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে ফেরানো হয়েছে দলে। আর তাই পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে উত্থান-পতন নিয়েই খেলতে হবে বলে মত সাইফউদ্দিনের, 'সব পেসারই চোট থেকে সেরে মাঠে ফেরে। এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। এটা আমার জন্য প্রথম না। অভ্যাস হয়ে গেছে। চোটের তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমার পিঠের ব্যথা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ঠিক করেছি। এটা তো আসলে বলা যায় না। আর চোট তো আসলে শুধু পিঠে না, হ্যামস্ট্রিং, গ্রোয়েন, হাঁটুতেও হতে পারে। সব জায়গায় হতে পারে। গত পাঁচ-ছয় মাস যা করে এসেছি, সেগুলো করলে হয়তো এড়ানো যাবে। তবে কখন চোট হবে সেটা কিন্তু বলা কঠিন। ফিল্ডিং করতে গেলেও হতে পারে।' পাঁচ মাস বাইরে থাকার সময় মাঠে ফিরতে তার মন কেঁদেছে। তবে ভেঙে পড়েননি। হাল ছাড়েননি। বরং বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখেছেন। তাইতো এবার চোট কাটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল) দিয়ে মাঠে ফিরেছেন সাইফউদ্দিন। সেখানে অবশ্য নিজের সেরাটা দিয়ে খেলতে পারেননি। ফিজিও-চিকিৎসকদের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট ওভারের বেশি বল করতে পারেননি। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠায় পুরো উদ্যমে মাঠে নামতে তিনি মুখিয়ে, 'আমি সম্পূর্ণ ছাড়পত্র পেয়েছি মেডিক্যাল টিম থেকে। এখন আমার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিসিএল খেলেছিলাম, সেখানে একটু বাঁধাধরা নিয়ম ছিল। এক ইনিংসে ৮ ওভারের বেশি বোলিং করতে পারিনি। সেটা দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। এখন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আশা করি, শতভাগ দিয়ে খেলতে পারব।' পেস বোলিং অলরাউন্ডারের বাস্তবতাও তিনি জানেন। চোট হানা দিতে পারে আবার যেকোনো সময়। তেমন কিছু হলে লড়াই করতেও তিনি প্রস্তুত, 'ইনজুরির তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমার পিঠের ব্যথা পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ঠিক করেছি। এটা তো আসলে বলা যায় না। আর চোট তো আসলে শুধু পিঠে না, হ্যামস্ট্রিং, গ্রোয়েন, হাঁটুতেও হতে পারে। সব জায়গায় হতে পারে। গত পাঁচ ছয় মাস যা করে এসেছি, সেগুলো করলে হয়তো এড়ানো যাবে। তবে কখন চোট হবে সেটা কিন্তু বলা কঠিন। ফিল্ডিং করতে গেলেও হয়ে যেতে পারে। ইনজুরি অধ্যায় ভুলে আপাতত সাইফউদ্দিন তাকিয়ে সামনে। নিজের লক্ষ্যের চেয়ে বড় চাওয়া দলের জয়। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করতে চান জিম্বাবুয়েকে বললেন তিনি, 'তুলনামূলকভাবে আমরা জিম্বাবুয়ের থেকে অনেক এগিয়ে। মাঠের পারফরম্যান্সের দিক থেকে, টেস্টে ভালো করেছি। ওয়ানডেতেও শেষ কয়েকবারের দেখায় হোয়াইটওয়াশ করেছি। আমরা আশাবাদী। যদিও ক্রিকেট খেলা, কিছুই বলা যায় না।'