মনকে মানানোয় তামিমদের বড় চ্যালেঞ্জ

মাঠের ডাক তো আছেই। মন ছুটে যায় সেই টানে। ঘরে পড়ে থাকা ব্যাট-বল যেন আগের চেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে। ক্রিকেটের বাইরে বন্ধু-আড্ডা-ঘোরাফেরা তো আছেই। এই অস্বাভাবিক সময় স্বাভাবিক সবকিছুর টান যেন আরও প্রবলভাবে অনুভব করছেন ক্রিকেটাররা। ঘরবন্দি এই সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনকে মানানো। কঠিন সেই কাজ কে কীভাবে করছেন, যায়যায়দিন পাঠকদের জন্য সেই গল্প শোনালেন ক্রিকেটারদের কয়েকজন।

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল -ফাইল ফটো
বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন,' সত্যি কথা বলতে, এখনো পর্যন্ত আমার খুব একটা সমস্যা হয়নি। সকালে ফিটনেসের কাজ করি। এরপর সারাদিন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে, স্ত্রীর সঙ্গে কাটাই। এমনিতে তো খুব একটা সময় ওদের দেয়া হয় না। খেলার ব্যস্ততার বাইরেও সময় পেলে হয়ত বাইরে যাওয়া, ঘোরাঘুরি, অন্যান্য কাজ থাকে। এভাবে শুধু ঘরে পরিবারের সঙ্গে এতটা সময় কাটানো হয় না। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা, যা আমি খুবই উপভোগ করছি। তবে আরও অনেক দিন এভাবে থাকতে হলে কেমন লাগবে, তা এখনই বলা কঠিন। খারাপ লাগতেও পারে। তবে আমি নিজের মনকে যেভাবে বোঝাচ্ছি যে, ব্যাপারটি শুধু আমার নয়। নিজের ভালো তো দেখতে হবেই, সঙ্গে চারপাশের সবার ভালোও এখানে মিশে আছে। একটা পর্যায়ে খারাপ লাগলেও তাই নিজেকে বোঝাতে হবে, এই খারাপ লাগা ভালো কিছুর জন্য। এই ত্যাগটুকু সবার ভালোর জন্য। মানসিক স্বাস্থ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বটে। আমাদের দেশে যদিও সেভাবে এটির গুরুত্ব পায় কম। তবে এদিকটায় নজর দেয়া উচিত। আমার হয়ত সমস্যা হচ্ছে না, অন্য কারও হতে পারে। নিজেকেই এটি ভালো বুঝতে হবে। কারও লেখা দুটি লাইন পড়ে বা কারও পরামর্শের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজে কিভাবে সামলাতে পারি। নিজেকে ব্যস্ত রাখার ও আনন্দ নিয়ে সময় কাটানোর উপায় বের করতে হবে। বাংলাদেশ দলের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, 'আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ঘরে বসে থাকা। এমনিতে ইনজুরির জন্য জীবনে অনেকটুকু সময় শুয়ে-বসে কাটাতে হয়েছে। সুস্থ থেকে টানা এত লম্বা সময় ঘরে আটকে থাকিনি কখনো। আপনারা প্রায় সবাই জানেন, আমার আড্ডা দিতে, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালো লাগে। ক্রিকেটের বাইরে নানা ব্যস্ততাও আছে এখন। ঘরে থাকার কঠিন কাজটা সহজভাবে করতে পারছি, কারণ, সময়টাই এমন। এখন দুর্যোগ চলছে, বিশ্বজুড়ে বিপর্যয়। সময়ের ডাক শুনতে হবে সবাইকে। আর এই সমাজের মানুষ হিসেবেও আমাদের দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্ব বলছে, এখন আমাদের ঘরে থাকতে হবে। তাই মন অস্থির হয়ে উঠতে চাইলেও তাকে শান্ত রাখতে পারছি। সব ঠিক থাকলে এখন হয়ত ঢাকা লিগে খেলতাম। আপাতত অলস সময়ই কাটছে। বাসায় যতটা ভালো থাকা যায়, চেষ্টা করছি থাকার। বাচ্চাদের সঙ্গে মজায় সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। এলাকার কিছু কাজ তো থাকেই (নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদ্য হিসেবে), ফোনেই যতটা করা সম্ভব চেষ্টা করছি ও নির্দেশনা দিচ্ছি। ঘরে আটকে থেকে অনেকের অবসাদ আসতে পারে। তবে আমাদের এখানে আসলে মানসিক স্বাস্থ্য ততটা গুরুত্ব পায় না। আমাদের সামাজিক বাস্তবতা ভিন্ন। মার্কাস ট্রেসকোথিক বা গেস্নন ম্যাক্সওয়েলরা যেভাবে নিজেদের বিষণ্ন্নতা কথা বলতে পারে, আমাদের এখানে সেই সুযোগ নেই। বাংলাদেশ টি২০ দলের অধিনায়ক মাহমুউলস্নাহ রিয়াদ বলেন, 'পুরোপুরিই ঘরবন্দি আছি, তবে সময় খারাপ কাটছে না। সকালে উঠে নাশতা করেই ছেলের সঙ্গে খেলতে শুরু করি। কখনো ওর হোমওয়ার্ক দেখিয়ে দেই। এমনিতে তো এসবের সুযোগ খুব একটা হয় না! আজকেই যেমন ওর সঙ্গে ড্রয়িং করলাম। কত বছর পর ছবি আঁকলাম, নিজেরও মনে নেই! দুপুরের দিকে ট্রেডমিলে রানিং করি। কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ঘরে বসে ফিটনেসের কাজ যতটা করা যায়, চেষ্টা করছি। মারিওর সঙ্গে কথা বলে (জাতীয় দলে সদ্য সাবেক ট্রেনার মারিও ভিলস্নাভারায়ন) এসব কাজ করছি। ট্রেডমিলে খুব বেশি রানিং করলেও কিছু সমস্যা হয়, মারিও সেসব বলে দিয়েছে। মনকে বশ করা অবশ্যই কঠিন। আমাদের তো এত লম্বা সময় টানা ঘরে থাকার অভ্যাস নেই। নরম্যালি খেলা বা দলের প্র্যাকটিস না থাকলেও দুই-একদিন বিশ্রাম নিয়ে আমরা হয়ত ফিটনেস ট্রেনিং করতে বের হই। ব্যাট নিয়ে হালকা নক করি। কিছু না কিছু করি। এখন কিছুই করার সুযোগ নেই। কঠিন সময়। তবে নিজেকে এটিই বোঝাচ্ছি যে, এটাই আমার দায়িত্ব। মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি এখনো হয়ত ততটা প্রকট হয়ে ওঠেনি। তবে আলস্নাহ না করুক, যদি আরও অনেক দিন, ধরুন এক মাস আমাদের এভাবেই থাকতে হলো, তখন কিন্তু এক ধরনের অবসাদ অনেককে পেয়ে বসতে পারে। এ জন্য এখন থেকেই সবাইকে নিজে থেকেই চেষ্টা করতে হবে ভালো থাকতে। নৈন্দিন কাজে নতুনত্ব আনা, উদ্ভাবনী কিছু করা, এসব ভাবতে হবে। কেউ হয়ত অনেকদিন ছোটদের বই পড়ে না, হুট করে পড়লে ভালো লাগতে পারে। এ ধরনের নানা সময় নানা কিছু করার পথ খুঁজতে হবে।'