যেভাবে সময় কাটছে ক্রিকেট কোচদের

করোনাভাইরাসের ছোবল না থাকলে এখন তারা ব্যস্ত থাকতেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (পিপিএল) নিয়ে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে সবাই পেয়ে গেছেন লম্বা অবসর। আর এই লম্বা সময়টা কীভাবে কাটছে তাদের সে সব কথা সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন দেশের শীর্ষ ক্রিকেটকোচরা

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
নিজের ছেলের খেলা নিয়ে সেভাবে কাজ করতে পারিনি। এখন বাসার পাশের মাঠে ওকে একটু সময় দিচ্ছি। দোয়া করবেন যেন ওর ইচ্ছা টিকে থাকে আর ভালো করতে পারে। -মোহাম্মদ সালাউদ্দিন
'এই জীবন যে কবে শেষ হবে, আর ভালো লাগছে না', ক্রিকেটবিহীন সময়ে এভাবেই হাঁপিয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। বাস্তবতার কাছে তবু অসহায় সবাই। করোনাভাইরাসের প্রকোপের এই অস্থির সময়ে নিজের ভেতরের অস্থিরতা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন দেশের অন্যতম সফল এই কোচ। আরেক ক্রিকেট কোচ মিজানুর রহমান বাবুল ভিডিওতে পরামর্শ দিচ্ছেন ক্রিকেটারদের অনেককে। কোচ সোহেল ইসলাম পড়ছেন কোচিং সম্পর্কিত বিভিন্ন জার্নাল ও লেখা। দেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেট কোচ সরওয়ার ইমরান এই সময় থাকতে চাইছেন ফুরফুরে মেজাজে। করোনাভাইরাসের ছোবল না থাকলে এখন তারা ব্যস্ত থাকতেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (পিপিএল) নিয়ে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে সবাই পেয়ে গেছেন লম্বা অবসর। আর এই লম্বা সময়টা কীভাবে কাটছে তাদের সে সব কথা সংবাদমাধ্যমকে জানালেন দেশের শীর্ষ ক্রিকেটকোচরা। কোচ সালাউদ্দিন পুরোপুরি ঘরবন্দি নন। তিনি থাকেন বিকেএসপিতে। প্রতিষ্ঠানের মূল ফটক বন্ধ। লোকজনের-যাওয়া আসা নেই। নির্জন মাঠগুলোতে খানিকটা হাঁটাহাঁটির সুযোগ তাই নিচ্ছেন তিনি। এমনিতে বাড়ির কাজ করার সুযোগ হয় না খুব একটা। এখন টুকটাক করছেন। সময় দিচ্ছেন স্ত্রী ও দুই ছেলেকে। তবে তার পারিবারিক সময় কাটানোতেও থাকছে ক্রিকেট! সালাউদ্দিনের ১৩ বছর বয়সী ছেলে নুহায়েল সানদিদ এবার সুযোগ পেয়েছেন বিকেএসপিতে। সেভাবে ছেলের ক্রিকেট দেখভালের সুযোগ হয় না তার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রম্নপ ক্রিকেটার্সের কোচ সালাউদ্দিন। এছাড়াও দেশের শীর্ষ অনেক ক্রিকেটারের তিনি 'মেন্টর। দেশের অন্যতম সেরা কোচ এই সুযোগে আপাতত নিজের ছেলের কোচ, 'কোচিংয়ের ব্যস্ততায় নিজের ছেলের খেলা নিয়ে সেভাবে কাজ করতে পারিনি। এখন বাসার পাশের মাঠে ওকে একটু সময় দিচ্ছি। ও ডানহাতি ব্যাটসম্যান আর চায়নাম্যান বোলার। এই সুযোগে কিছু জিনিস দেখিয়ে দিচ্ছি। দেখলাম, ও বেশ দ্রম্নত শিখতে পারে। দোয়া করবেন যেন ওর ইচ্ছা টিকে থাকে আর ভালো করতে পারে। আর ৫-৬ বছর ধরেই আমি চেষ্টা করছি একটি বই লেখার। নিজের জানাশোনা, প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা, সবকিছু থেকে কোচিংয়ে টেকনিক্যাল-ট্যাকটিক্যাল ও মানসিক দিকগুলো নিয়ে বই। অনেকটাই গুছিয়ে এনেছিলাম। এখন পড়তে গিয়ে দেখছি, অনেক কিছুই বাদ পড়ে গেছে। এই সুযোগে বইটি শেষ করার চেষ্টা করছি।' অখন্ড এই অবসরে বইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন সোহেল ইসলামও। নানা সময়ে জাতীয় দলের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করা বিসিবির এই কোচ নানা লেখা পড়ছেন কোচিং নিয়ে। দেখছেন ভিডিও তিনি বললেন, 'এমনিতে পড়াশোনার সময় খুব একটা হয় না। এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছি। বিভিন্ন জার্নাল ও আর্টিকেল পড়ছি। বিশেষ করে স্পিন বোলিং আর ফিল্ডিং নিয়ে। স্কিলের ব্যাপারগুলো মোটামুটি আমাদের জানাই আছে। মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপারগুলো নিয়েই পড়ছি। কোচিং সম্পর্কিত ভিডিও দেখছি। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের সবাইকে নিয়ে মোহামেডানের একটি গ্রম্নপ আছে। সেখানেই টুকটাক পরামর্শ দিচ্ছি। ক্রিকেটারদের যার যেটা জানার থাকে, গ্রম্নপে বললেই সমাধানের চেষ্টা করছি।' অনলাইন গ্রম্নপে সক্রিয় মিজানুর রহমান বাবুলও। ২০১৬ সালে তার কোচিংয়েই দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ, এবারের আগ পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপে যা ছিল দেশের সেরা সাফল্য। ঘরোয়া ক্রিকেটে এবার নিয়ে টানা সাত মৌসুম তিনি প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের কোচ। জাতীয় দলের সাবেক এই পেসার জানালেন, অনলাইনেই চলছে তার কোচিং, 'আমাদের দলের একটা অনলাইন গ্রম্নপ আছে। দলের ট্রেনার তুষার সেখানেই সবাইকে নিয়মিত ফিটনেস নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি কোচিংয়ের পরামর্শ দিচ্ছি। ঘরে বসে যেসব ড্রিল করা যায়, করতে বলছি। অনেকে ভিডিও করে পাঠাচ্ছে। সেসব দেখে কোনো কিছু ঠিক করতে হলে বলে দিচ্ছি। ওরা শুধরে আবার ভিডিও পাঠাচ্ছে। এভাবেই চেষ্টা করছি। এমনিতে মাঠের বাইরে থাকতে খারাপ তো লাগছেই। তবে পরিবারকে সময় দিচ্ছি, সচরাচর এতটা সুযোগ হয় না। আর চেষ্টা করছি, আশপাশের অসহায় মানুষদের সাধ্যমতো সহায়তা করার।' জাতীয় দলের সাবেক কোচ সরওয়ার ইমরানও চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে নিজের জন্য বিনোদনের খোরাক জোগানোর চেষ্টা করছেন বললেন তিনি, 'এমনিতে আমি সারা বছরই কোচিং নিয়ে পড়াশোনা করি। এর বাইরেও প্রচুর বই-প্রবন্ধ পড়ি। এই অবসরে বরং চেষ্টা করছি কম পড়তে। টিভি দেখছি, ফেসবুক দেখছি, সারা দুনিয়ার খোঁজ রাখছি। চেষ্টা করছি, অবসর সময়ে নানাভাবে বিনোদন নেয়ার। ঢাকা ক্রিকেট লিগে এবার প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেটার্সের কোচের দায়িত্বে আছি। লিগ কবে হবে কিংবা হবে কিনা এবার, ঠিক নেই। ছেলেদের কিছু প্রাথমিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। আর শুধু আমার দলের নয়, আরও অনেকেই অনেক কিছু জানতে চায়। চেষ্টা করি প্রয়োজন মেটানোর। ভিডিও করে পাঠায় অনেকে। নানা ড্রিল বলে দেই। এভাবেই কাটছে আমার সময়।'