ক্যাচ নিয়ে আর মশকরা করেন না তামিম

আমি সব সময় নাসিরকে বলতাম, 'নাসির চিন্তা কর, বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা, ১ বলে ২ রান দরকার, বল আকাশে উঠল, তুই ক্যাচ মিস করলি। তোর কেমন লাগবে?' এটা নিয়ে ওর সঙ্গে মজা করতাম। আলস্নাহ মনে হয় বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন, আর আমার সঙ্গেই ঘটে গেছে ঘটনাটা।'

প্রকাশ | ১০ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ফিল্ডিংয়ে খুব নামডাক না থাকলেও আউটফিল্ডে ভালো ভালো অনেক ক্যাচ নেওয়ার ইতিহাস আছে তামিম ইকবালের। আবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া একাধিক ক্যাচ মিসের ঘটনাতেও তার নামটা জড়িয়ে আছে। একসময় সতীর্থ নাসির হোসেনের সঙ্গে খেলার ফাঁকে ক্যাচ হাতছাড়া নিয়ে মশকরা করতেন তামিম। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ম্যাচের ঘটনার পর তা বাদ দিয়েছেন। সেদিন অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তামিমের ভুলে অল্পের জন্য হাতছাড়াই হতে পারত সে সুযোগ। রান তাড়ায় এক পর্যায়ে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১৫ বলে ২০ রান। একমাত্র ভরসা হয়ে খেলা ক্রিস ওকস সহজ ক্যাচ উঠান লং অনে। কিন্তু তামিম তা হাতে জমাতে পারেননি। পরের ওভারেই অবশ্য রুবেল ৩ বলের মধ্যে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে তামিমকে স্বস্তি দিয়েছিলেন। এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত নাসিরকে ক্যাচ মিস নিয়ে মশকরা করতেন তামিম। শুক্রবার রাতে রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদকে নিয়ে লাইভ আড্ডায় তামিম যুক্ত করেন নাসিরকেও। নাসিরই তোলেন প্রসঙ্গটা। তামিম জানান, নাসিরকে করা মশকরাটা তার দিকেই চলে এসেছিল, 'আমি সবসময় নাসিরকে বলতাম, 'নাসির চিন্তা কর, বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা, ১ বলে ২ রান দরকার, বল আকাশে উঠল, তুই ক্যাচ মিস করলি। তোর কেমন লাগবে?' এটা নিয়ে ওর সঙ্গে মজা করতাম। আলস্নাহ মনে হয় বেশি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন, আর আমার সঙ্গেই ঘটে গেছে ঘটনাটা।' সে সময় ক্যাচ ছাড়ার পর তামিমের ইচ্ছা হয়েছিল মাটির ভেতর ঢুকে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে। তবে তাকে সেই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ দেওয়ায় রুবেলের জন্য ভালোবাসা জানান তিনি, '২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমি ওকসের ক্যাচটা ছেড়েছিলাম তাসকিনের বলে, যে সময় খেলাটা খুব ক্লোজ হয়ে গিয়েছিল। ক্যাচটা ছাড়ার পর আমার কাছে মনে হচ্ছিল, মাটি দুই ভাগ হয়ে যাক, আমি ভেতরে ঢুকে যাই, আমাকে কেউ আর দেখার দরকার নাই। আমি ওই মুহূর্তে একসঙ্গে ৩২ কোটি গালি খেয়েছি। ৩২ কোটি কারণ, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ, একটা করে গালি তো দেয়নি, দুইটা করে দিয়েছে সবাই।' 'তারপর রুবেল দুই উইকেট নিয়ে নিল। ওই খেলার হাইলাইটস দেখলে দেখবি সবাই রুবেলের পেছনে দৌড়ায়, সবাই তো রুবেলের পেছনে দৌড়েছে যে ম্যাচ জিতে গেছি বলে, আর আমি রুবেলের পেছনে দৌড়েছি যে, আমি বেঁচে গেছি! যদি ওই ম্যাচ হারতাম, তাহলে আমার আর বাংলাদেশে আসা লাগত না।' বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতা এবারও ছিল তামিমের। সর্বশেষ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ৯ রানে থাকা রোহিত শর্মার ক্যাচ ছেড়ে দেন তামিম। পরে সেঞ্চুরি করে রোহিত বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে বের করে দেন। পরের বিশ্বকাপে ক্যাচ মিসের এসব যন্ত্রণা পুষিয়ে দিতে চান তামিম, 'আলস্নাহই জানে, কেন বিশ্বকাপ আসলেই আমার কাছ থেকে ক্যাচ ছুটে যায়, এই (২০১৯) বিশ্বকাপেও ক্যাচ ছুটে গেছে। আশা করি, ২০২৩ বিশ্বকাপ যদি খেলতে পারি, তাহলে একবারে সব পুষিয়ে দিব।' ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে দেখলেই শরীরে আলাদা ঝাঁজ টের পান রুবেল হোসেন। বাড়তি কিছু করে তাকে আউট করতে চান, এমনকি কোহলির মুখের কাছে গিয়ে বুনো উলস্নাস করতেও তুমুল আগ্রহ তার। কোহলির সঙ্গে রুবেলের এই সাপে-নেউলে সম্পর্কে সূত্রপাত নাকি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসারও বেশ আগে থেকে! শুক্রবার রাতে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম-তাসকিন-রুবেল-নাসিরদের ফেসবুক লাইভে বেরিয়ে আসে কোহলির সঙ্গে রুবেলের উত্তাপময় সম্পর্কের কথা। তামিমই রুবেলের কাছে জানতে চান, 'কোহলিকে দেখলে তুই এত তেতে যাস কেন, কোথা থেকে এই লড়াইয়ের ব্যাপারটা এসেছে?' রুবেল জানান কোহলিকে তিনি চেনেন সেই যুব পর্যায় থেকে। ২০০৮ সালে দুজনেই নিজ নিজ দেশকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকায় যুব বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে দেখা হয়েছিল ভারত ও বাংলাদেশের। তখন থেকেই না কি কোহলির সঙ্গে দ্বন্দ্ব লেগে আছে রুবেলের, 'আমরা এক সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছি। তখন থেকে ওর সঙ্গে একটু দ্বন্দ্ব লেগে আছে। ও তখন অনেক বেশি স্স্নেজিং করত। হয়তো জাতীয় দলে একটু কমেছে, তবে অনূর্ধ্ব-১৯-এ প্রচুর স্স্নেজিং করত। দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা ম্যাচ ছিল, ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। ও প্রচন্ড পরিমাণে স্স্নেজিং করছিল, আমাদের যে ব্যাটসম্যান নামছিল তাকেই গালিগালাজ করছিল উল্টাপাল্টাভাবে। কীভাবে গালিগালাজ করছিল, সেটি আমরা সবাই জানি।' নিরীহ স্স্নেজিংয়েই থেমে ছিল না ঘটনা। এক পর্যায়ে দুজন দুজনের দিকে তেড়েও গিয়েছিলেন, 'ওর সঙ্গে ওখানে খুব খারাপ একটা ঘটনা ঘটে। আমি ওকে আউট করার পর গালিগালাজ করেছিলাম। এরপর ও ব্যাটটা উল্টো করে ধরে ছিল আমার দিকে। আমাকে একটা গালি দিয়েছিল। তখন আমি ওর দিকে যাচ্ছিলাম, ও আমার দিকে তেড়ে আসছিল। যা হয় এরকম সময়ে, আম্পায়ার এসে বিষয়টা সামলান। তখন থেকেই ওর সঙ্গে আমার একটু দ্বন্দ্ব। এরপর থেকে জাতীয় দলে ওর সঙ্গে আমার দুয়েক দিন বেধেছে এরকম। শুরু হয় মূলত অনূর্ধ্ব-১৯ থেকেই।'