মুশফিকের প্রশ্নে দারুণ জবাব আকবরের

প্রকাশ | ১১ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলীর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ গোটা দেশ ও জাতি। এতটুকু বয়সে কী অসীম সাহস নিয়ে প্রাণপণ লড়াইটাই না করেছিলেন আকবর! তার ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ম্যাচ জিতিয়ে দেশকে যুব ক্রিকেটে বিশ্বসেরার মর্যাদা ও গৌরবের আসনে বসানো দেখে সবাই পুলকিত। আর সবার মতো অনুজপ্রতিম আকবর আলীর সেই ব্যাটিং এবং ফিনিশিং দেখে মুগ্ধ, অবাক হয়েছিলেন অগ্রজ মুশফিকুর রহিমও। শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে আকবর আলীর সেই অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর অকুণ্ঠ প্রশংসা মুশফিকের মুখে। দুজনই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দুজনারই নার্ভ খুব শক্ত। অনুকূল-প্রতিকূল যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতাও বেশ। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির পাশাপাশি অনুজপ্রতিম আকবর আলীরও জার্সি এবং ব্যাটিং গস্নাভসও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য নিলামে উঠেছে। পাঁচদিনব্যাপী সে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে শনিবার রাত থেকেই। ফেসবুক লাইভে অগ্রজপ্রতিম মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ছিলেন যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপাজয়ী যুবদলের অধিনায়ক আকবর আলী। অনুজপ্রতিম আকবরের মাঝে কি নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন? সঞ্চালক এমন প্রশ্ন করেন মুশফিককে। জবাবে মুশফিক বলেন, 'আমি আসলে অত ছোট বয়সে এত প্রতিভাধর ছিলাম না। আকবর আলীর পারফরমেন্স, তার ধৈয্য দেখে আমি আসলে বিস্মিত হয়েছিলাম।' যুব বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রতিটি বল দেখেছেন মুশফিক। তখন জাতীয় লিগের ম্যাচের জন্য ছিলেন সিলেটে। টিম হোটেলের রুমে বসে দেখা সেই ফাইনালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আকবর আলীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ মুশফিক। তার মূল্যায়ন আকবর এক অসাধারণ ইনিংস খেলেছে। মুশফিকের ভাষ্য, 'আমরা তখন জাতীয় লিগের এক ম্যাচ খেলতে সিলেটে ছিলাম। বল বাই বল দেখেছি পুরোটা ম্যাচ। আকবর যে ইনিংস খেলেছে, সেটা আউটস্ট্যান্ডিং। ও যাই বলুক না কেন, আমি বলব অসাধারণ এক ইনিংস।' আকবরের খেলা আগে কখনো সরাসরি দেখার সুযোগ হয়নি। বিশ্বকাপের ফাইনালেই প্রথম দেখা। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে মুশফিক বলেন, 'সেদিনের আগে আকবরের খেলা আমি লাইভে দেখিনি। সেই ফাইনালে দেখলাম একদম কমপ্যাক্ট ইনিংস। একজন পাকা ব্যাটসম্যানের মতো খেলেছে। এতটুকু চাপ না নিয়ে ভারতের ওই লেগস্পিনারের ভয়ংকর টার্ন সামলেও একদিক আগলে রেখেছিল। ওর ওপর প্রচন্ড চাপ ছিল। কিন্তু দারুণভাবে সে চাপ সামলে দল জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছেড়েছে। সত্যিই দেখে খুব ভালো লেগেছে।' অনুজপ্রতিম আকবরের প্রশংসার পাশাপাশি কথোপকথনের একপর্যায়ে কঠিন এক প্রশ্ন ছুড়ে প্রকারান্তরে আকবরের পরীক্ষাও নিয়ে নেন মুশফিক। এমনিতে উইকেটরক্ষক হলেও, মুশফিকের প্রশ্নটি যেন ছিল রীতিমতো শরীর ধেয়ে আসা বাউন্সার। তিনি বলে ওঠেন, 'আমি আকবরকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। তা হলো, ভারতের সঙ্গে ফাইনালে উইকেটে যাওয়ার অল্প কিছুক্ষণ পর হঠাৎ এক স্পিনারকে স্স্নগ সুইপ করে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাল আকবর। ওই সময় দল চাপে এবং ওই শট ছক্কা না হয়ে সীমানার আশপাশে ক্যাচও হয়ে যেতে পারত। কাজেই আমার প্রশ্ন তখন ওই শট খেলা কেন? ওই শট খেলা কি পূর্বপরিকল্পিত? না কি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। কারণ ওটা টপ এজ হয়ে ক্যাচও হয়ে যেতে পারত!' অগ্রজপ্রতিম মুশফিকের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে পুরো পরিবেশ-প্রেক্ষাপট মেলে ধরে সাহসী এক পুল শটই করেন আকবর, 'আমরা ৪ উইকেট হারানোর পরপরই ভারতীয়রা বেশির ভাগ ফিল্ডার ৩০ গজের ভেতরে নিয়ে এসেছিল, যাতে আমরা স্বচ্ছন্দে সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে খেলতে না পেরে ওভার দ্য টপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেলি। আমি দেখেছি ফিল্ডাররা আশপাশে ৩০ গজের ভেতরেই বেশি। তাই তুলে মারা।' 'আমার ধারণা ছিল, যেহেতু ভারতীয়দের পুঁজি ছোট, রান কম ছিল। তাই এক-দুটি বাউন্ডারি মারতে পারলে হয়তো ফিল্ডারদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেবে। সিঙ্গেলস নেওয়া সহজ হবে। সেই ভাবনা থেকেই মেরেছিলাম। ওই ছয়ের পর তারা ফিল্ডারদের ওপেন করে দেয়।'