বাথরুমের পানি দিয়ে বানানো হতো লেবুর শরবত

দেড়-দুই দশক আগেও এমন অবস্থা ছিল না দেশের ক্রিকেটে। ছিল সুযোগ সুবিধার অভাব, আর্থিক অনটন। সেসময় অনেক কষ্ট করেই ক্রিকেট খেলতেন সবাই। নিজেদের সময়ের এসব কষ্টের কথা রোববার লাইভ আড্ডায় তুলে ধরেছেন। যেখানে গল্পে গল্পে জানা যাচ্ছে অজানা অনেক কথা। সেখানেই কথাপ্রসঙ্গে নিজেদের সময়ে এনার্জি ড্রিংকের ধরন জানান দুর্জয়।

প্রকাশ | ১২ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
নাঈমুর রহমান দুর্জয়
বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। শীর্ষ পর্যায়ে যেসব ক্রিকেটার খেলেন তাদের এখন কাড়ি কাড়ি টাকা। অথচ দেড়-দুই দশক আগেও এমন অবস্থা ছিল না দেশের ক্রিকেটে। ছিল সুযোগ-সুবিধার অভাব, আর্থিক অনটন। সে সময় প্রচুর কষ্ট করেই ক্রিকেট খেলতেন সবাই। নিজেদের সময়ের এসব কষ্টের কথা রোববার লাইভ আড্ডায় তুলে ধরেছেন। যেখানে গল্পে গল্পে জানা যাচ্ছে অজানা অনেক কথা। সেখানেই কথা প্রসঙ্গে নিজেদের সময়ে এনার্জি ড্রিংকের ধরন জানান দুর্জয়। বর্তমানে ম্যাচের মাঝে বা অনুশীলনেও দামিদামি এনার্জি ড্রিংক খেয়ে থাকেন ক্রিকেটাররা। কিন্তু আগে এই সুযোগ ছিল না। তখনকার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে দুর্জয় বলেন, 'বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অপু (বিসিবি কর্মকর্তা) ভাইয়ের রুমের পাশে মোটামুটি পরিষ্কার একটা বাথরুম ছিল। ওখান থেকে খোকন ও জয়নাল ভাই বালতিতে পানি নিত। বাজার থেকে আনত লেবু আর চিনি। গস্নাস থাকত ৫-৬টা। এরপর সবকিছু হাত দিয়েই গুলত। লবণ দিত না। কারণ হাতের ঘাম দিয়ে লবণের কাজ হয়ে যেত। সত্যি বলতে সেটাই ছিল আমাদের এনার্জি ড্রিংক। আমাদের পেটও খারাপ হতো না আসলে। দিব্যি হজম হয়ে যেত।' এছাড়া এখনকার ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে খেলে প্রচুর টাকা পেলেও তখনকার কথা শুনলে অবাক না হয়ে উপায় নেই। এমনকি বিদেশ সফরে নিজের খরচে চলতে হতো ক্রিকেটারদের। শুধুমাত্র প্রিমিয়ার লিগ থেকেই যা একটু আয় হতো, তাও সেটা বড় দলগুলোতে সুযোগ পেলে! এ বিষয়ে দুর্জয় বলেন, 'বিমানে সবচেয়ে ভালো পারিশ্রমিক ছিল। দল খারাপ খেললে তো আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের অফিসিয়ালদের খুঁজে পাওয়া যেত না। জাতীয় দলে খেলার সময় বিদেশ সফরে আমাদের দৈনিক ভাতা ছিল ৫-৬ ডলার। আইসিসির চাপে পরে আইসিসি ট্রফির পর ধাপে ধাপে সেটা ৩০-৪০ ডলারে উঠে আসে।' কথাপ্রসঙ্গে উঠে আসে সেসময় দলবদলের কথা। বর্তমানে উঠে আসা নতুন দলগুলো ক্রিকেট মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ালেও প্রিমিয়ার লিগে বড় দলগুলোর মধ্যে আগের সেই দ্বৈরথ যেন নেই। অথচ আগে দলবদলের সময় ক্রিকেটারদের কিডন্যাপ করা হতো বলে দাবি করেন দুর্জয়। এ বিষয়ে দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক বলেন, '৭ লাখ টাকা তখন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক। কেউ এত টাকায় চুক্তি পেলে পত্রিকায় বড় খবর হতো। দলবদলে তো কত নাটক হতো। নান্নু ভাই, সুজন ভাই, সুমনকে কিডন্যাপ করা হতো।' দুর্জয় আরও যোগ করেন, 'আমি থাকি মোহামেডানের আখড়ায়। তখন আমার মামা গোলাম সারোয়ার টিপু মোহামেডানের কোচ-খেলোয়াড় ছিলেন। আমি তার বাসাতেই থাকতাম। কিন্তু আবাহনী থেকে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে কামাল ভাইয়ের (বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল) অফিসে রাখত। দলবদলের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমায় ওখানেই রেখে দিত। এরপর তিন দিন বন্ধুবান্ধবের বাসায় ঘোরাফেরা করে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে বাসায় আসতাম।' ক্লাব ক্রিকেটই তখন ক্রিকেটারদের অর্থ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম ছিল। তবে সেই টাকাও নিয়মিত পেতেন না তারা। দুর্জয় যোগ করেন, 'যে টাকায় আমাদের চুক্তি হতো ওই টাকাটাও সবসময় দেয়া হতো না। আমার এমনও মৌসুম গেছে যে এক টাকাও পাইনি। আমি একবার ডাউন পেমেন্ট দিয়ে একটা ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে সেটা বিক্রি করে দিতে হয়েছিল।' ক্রিকেটাররা খাবারের অভাবে ভুগতেন বলে জানান আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। তিনি জানান, ক্ষুধা লাগলে পেটে বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমানোর বিষয়ে রসিকতা করতেন ক্রিকেটাররা। তিনি বলেন, 'আমাদের ভাত খেতে ইচ্ছা করত কিন্তু খেতে পারতাম না। কারণ ভাত খাওয়ার পয়সা ছিল না। আমাদের দলে তখন পেটে বালিশ- এই কথা প্রচলিত ছিল।' বিদেশ সফরে গেলে প্রবাসীরাই হতেন ক্রিকেটারদের সুখস্মৃতির কারণ। কারণ ব্যাখ্যা করে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, 'তখন বাঙালিরা দাওয়াত দিলে খুব খুশি হতাম। এখন তো তামিমরা দাওয়াত পেলে সেখানে যেতে চায় না। কিন্তু আমরা খুশি হতাম। বিদেশ গেলে আমাদের নিজেদের খরচে চলতে হতো। আমরা ভাত খেতে পারতাম আর এক বেলা খাবারের টাকা বেঁচে যেত।'