জীবনে একবারই ভয় পেয়েছিলেন তামিম

প্রকাশ | ১২ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
শোয়েব আখতারের তখন পড়তি সময় আর ক্যারিয়ার শুরু করা তামিম ইকবাল ফুটছেন টগবগিয়ে। ততদিনে ২০০৭ বিশ্বকাপে জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে নামও কুড়িয়ে ফেলেছেন। কিন্তু ভয়ডরহীন তামিমেরও প্রথমবার শোয়েবকে মোকাবিলা করতে গিয়ে ভয়ে বুক কেঁপে উঠেছিল। তামিমের মনে হয়েছিল শোয়েব বোধহয় তাকে মেরেই ফেলবেন! রোববার বাংলাদেশ দলের সাবেক তিন অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, হাবিবুল বাশার সুমন ও খালেদ মাহমুদ সুজনকে সরাসরি অনলাইন আড্ডায় নিয়ে এসেছিলেন তামিম ইকবাল। চারজনের আড্ডায় উঠে আসে তাদের খেলোয়াড়ি জীবনের নানান গল্প। খালেদ মাহমুদের নেতৃত্বে মুলতান টেস্টে বাংলাদেশের জিততে জিততে হারতে যাওয়া টেস্টের আক্ষেপ দিয়ে শুরু। সেই সিরিজে শোয়েব ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। বিশ্বের দ্রম্নততম বোলার হিসেবে যেকোনো দলের জন্যই আতঙ্ক। মুলতানে শোয়েব খেলেননি। তার আগের পেশোয়ার টেস্টে দুই ইনিংসে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। তার তোপে ভালো খেলতে থাকা বাংলাদেশের ইনিংসে নেমেছিল ব্যাটিং ধস। শেষদিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে টেল এন্ডারে লড়েছিলেন সুজন। শোয়েবের গোলার সামনে ২৫ রানের একটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন তিনি। শোয়েবকে খেলার ভীতিকর সেই অভিজ্ঞতা স্মরণ করে সুজন বলেন, 'আমি অনেককেই বিশ্বাস করাতে পারি না, শোয়েবের প্রথম বল আসলে আমি চোখেই দেখিনি।' এরপর তামিম জানান শোয়েবকে খেলার তার অভিজ্ঞতার কথা। ২০০৭ সালে সেপ্টেম্বরে কেনিয়ায় একটি টি২০ ম্যাচে শোয়েবকে প্রথম খেলেন তিনি। শোয়েবের বলেই আউট হন ৪ বলে ১ রান করে। ২০১০ সালে এশিয়া কাপে আরেকবার শোয়েবকে সামনে পান তামিম, সেটাই শেষ দেখা। সেই দুই সাক্ষাতেই তামিমের ভীতি জাগানিয়া স্মৃতি, 'আমি সবসময়ই বলি, অনেক ফাস্ট বোলারকে খেলেছি, ১৫০ কিলোমিটার গতির বল খেলেছি অনেক, কিন্তু ব্যাটিং করতে গিয়ে একবারই ভয় পেয়েছি, যখন শোয়েব আখতারকে প্রথম খেলেছি। ওইদিন মনে হয়েছে, সে আমাকে মেরে ফেলবে। এতটাই ভীতি জাগানিয়া ছিল তার বোলিং।' অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য ছিল অভাবনীয়। এক ঝাঁক তরুণদের নিয়ে সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ প্রতাপশালী ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়ে দেয়। তারুণ্যে ভরা সেই দলের ফিল্ডাররাও ছিলেন ক্ষিপ্র। বয়সের কারণে তরুণদের সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে তাল মেলাতে বেগ পাওয়া হাবিবুল তাই নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে নেন ভিন্ন তরিকা। হাবিবুলের নেতৃত্বেই তখনকার ১৭ বছরের তরুণ তামিমের প্রথম বিশ্বকাপ খেলা। সেই বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ টেনেই তামিম শুরু করেন স্মৃতিচারণ, 'সুমন ভাইয়ের অন্য আরেকটা ডাক নাম আছে সবাই জানেন? ২০০৭ বিশ্বকাপে উনি বলতেন, উনি চিতার মতো ফিল্ডিং করেন। মানে অনেক দ্রম্নতগতি।' তামিম হাবিবুলকে জিজ্ঞেস করেন আপনি নিজেকে চিতা বলতেন কেন, একটু যদি বলেন। তখনকার সময়ে ৩৪ পেরুনো হাবিবুল না কি ছিলেন দলের সবচেয়ে ধীরগতির ফিল্ডার। নিজেকে গতিশীল করতেই তাই নেন বিশেষ তরিকা, 'আমি নিজে নিজেকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করতাম। কারণ তখন আমাদের দলে অনেক তরুণ। তামিম, সাকিব। এমনকি অভিজ্ঞ রফিকও তখন ভালো ফিল্ডিং করে। মাশরাফি ছিল, রাসেল ছিল। আমি সবচেয়ে ধীরগতির ফিল্ডার ছিলাম। বল ধরলেই তাই নিজেকে বুক চাপড়ে 'চিতা চিতা' বলে অনুপ্রাণিত করতাম।' সেই বিশ্বকাপে পয়েন্টে আফতাব আহমেদকে দেখা যেত নজরকাড়া ফিল্ডিং করতে। দারুণ উদ্দীপ্ত ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল, মাশরাফি বিন মর্তুজারা। তারুণ্যের শক্তিতে তারকায় ভরা হট ফেভারিট ভারতকে বিদায় করে সুপার এইটে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেখানে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েও পেয়েছিল আরেক জয়।