সৌরভ-যুবরাজে মুগ্ধ ছিলেন সৌম্য

বাংলাদেশের ক্রিকেটে যারা এখনকার তারকা, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে তাদের জীবনেও ছিল অনেক তারকা। তাদের নিয়েই আজকের আয়োজন 'নায়কদের নায়ক।' এই পর্বে সৌম্য শোনাচ্ছেন তার চার নায়কের গল্প।

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
সবেমাত্র ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়েছে সৌম্য সরকারের। বড় ভাই পুষ্পেন সরকার বললেন, 'তুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হবি আর ডানহাতি পেসার, সৌরভ গাঙ্গুলির মতো।' সৌম্য টিভিতে চোখ রাখলেন। সৌরভের সুবাসে মোহিত হলেন দ্রম্নত। সহজাত বাঁহাতি না হয়েও শুরু করলেন বাঁহাতি ব্যাটিং। ক্রমে সৌম্য বেড়ে উঠলেন আর প্রসারিত হলো তার ভালো লাগার জগৎ। সেখানে জায়গা করে নিলেন সৌরভ গাঙ্গুলির দেশের যুবরাজ সিং থেকে শুরু করে নিজ দেশের সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যারা এখনকার তারকা, বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে তাদের জীবনেও ছিল অনেক তারকা। তাদের নিয়েই আজকের আয়োজন 'নায়কদের নায়ক।' এই পর্বে সৌম্য শোনাচ্ছেন তার চার নায়কের গল্প। মুগ্ধতা টিভির পর্দা থেকে বিকেএসপির মাঠে শুরু হয় সৌম্যের, 'আমার জীবনের প্রথম ক্রিকেট নায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। ক্রিকেট ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই সৌরভের ভক্ত হয়েছি। বড় ভাই ছিলেন সৌরভের বড় ভক্ত। একদিন আমাকে বললেন, 'তুই সৌরভ গাঙ্গুলির মতো বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হবি, আর ডানহাতে পেস বোলিং করবি।' আমি ন্যাচারাল বাঁহাতি নই, ভাইয়ের কথা শুনেই শুরু করলাম। আমি সবই ডান হাতে করি, শুধু ব্যাটিংয়েই বাঁহাতি।' সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ প্রসঙ্গে সৌম্য বললেন, 'পরে ভাইয়ের সঙ্গে বসে টিভিতে সৌরভের খেলা দেখলাম। নিজেরও ভালো লেগে গেল। তখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ক্রেজ ছিল অনেক। সৌরভ ভালো করত, আমার ভালো লাগা আরও বাড়ল। বড় হতে হতে বুঝেছি, অফ সাইডে তার ড্রাইভগুলো অসাধারণ। দেখতে ভালো লাগত খুব। স্পিনারদের স্টেপ আউট করে ছক্কাগুলি তো দুর্দান্ত ছিল। পরে অধিনায়ক হিসেবে ভালো করতে থাকলেন। তার সবকিছুই ভালো লাগত। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে কলকাতা সফরে গিয়ে প্রথমবার সৌরভকে সামনাসামনি দেখলাম। একদম সামনেই ছিল। ইচ্ছে করছিল কথা বলতে। কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।' এরপর যুবরাজ সিংয়ের অন্ধ ভক্ত হয়ে গেলেন সৌম্য, 'একটু বড় হওয়ার পর আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটার ছিল যুবরাজ সিং। এসেই দারুণ খেলা শুরু করেছিল। সবচেয়ে ভালো লাগত তার আগ্রাসী ব্যাটিং। মাঠে নেমেই খেলার গতি বদলে দিত। কাউকে পাত্তা দিত না, একদম ভয়ডরহীন ব্যাটিং। আমারও ইচ্ছে হতো তার মতো ভয়ডর ছাড়া খেলতে। যুবরাজের টাইমিং ছিল স্পেশাল, ব্যাটের ছোঁয়া লাগামাত্র বল যেন গুলির বেগে ছুটে যেত। দলের প্রতি তার নিবেদন ভালো লাগত। দারুণ টিম পেস্নয়ার ছিল, সবসময় দলের কথা ভেবে খেলত। স্বার্থপর ব্যাটিং কখনো করেনি। তার বোলিং, দুর্দান্ত ফিল্ডিং, মাঠে তার হাঁটাচলা, স্টাইল, সব ভালো লাগত।' যুবরাজের মুগ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, 'যুবরাজের সঙ্গে পরে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। বলেছি যে তাকে অনেক ভালো লাগে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবি সবসময়। তোর প্রতিভা আছে, শট খেলতে পারিস। যেকোনো সময় ম্যাচের মোড় বদলে দিতে পারিস। এই বিশ্বাসটা রাখবি। কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাস হারাবি না।' এরপর বিকেএপিতে পড়ার সময় তামিমের ব্যাটিংয়ের প্রেমে পড়ে গেলেন সৌম্য, ''বিকেএসপিতে যখন গেলাম, তখন অপেক্ষা করতাম তামিম ভাইয়ের খেলা দেখার জন্য। লিগের খেলা থাকত বিকেএসপিতে। তামিম ভাইয়ের খেলা থাকলেই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মাঠে গিয়ে খেলা দেখতাম। তখন 'ডাউন দ্য উইকেট' গিয়ে খেলতেন অনেক, বোলারদের অবস্থা খারাপ করে দিতেন মেরে। অফসাইডে তার খেলা খুব ভালো লাগত।'' আর বিকেএসপিতে প্রসঙ্গে পড়ার সময় সাকিবের প্রতিও তার ভালোলাগা শুরু হলো বললেন সৌম্য, 'বিকেএসপিতে থাকার সময় সাকিব ভাইয়ের প্রতিও ভালোলাগা বাড়তে থাকে। তার অনেক গল্প শুনতাম বিকেএসপিতে। একবার মনে আছে, আমরা ডাইনিংয়ে খাচ্ছিলাম। সাকিব ভাই এসেছিলেন কোনো কাজে। বিশাল ডাইনিং হলের সবাই তার দিকে তাকিয়ে তখন। সবার মধ্যমণি যেন। আমিও তাকিয়ে ছিলাম। পরে খেতে খেতে আমার মনে হচ্ছিল, আমারও ওরকম হতে হবে যেন সবাই তাকিয়ে থাকে। সত্যিকার অর্থে বড় তারকা হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিল তাকে দেখেই।' জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলার সুবাদে তার ছোটবেলার দুই নায়ককে আরও কাছে থেকে দেখতে পান সৌম্য, 'এখন আমরা (তামিম ভাই-সাতিক ভাই) একসঙ্গে খেলি। কখনই তাদের দুজনকে বলা হয়নি যে তারা আমার ছোটবেলার নায়ক। শুধু খেলা নয়, তাদের সঙ্গে হাসি-মজা হয়, কত কিছুই হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সমীহ এখনো করি। নিজে অনুভব করি তারা কত বড় তারকা। আমার কাছে তারা এখনো নায়ক।'