অনলাইন আড্ডা

বাংলাদেশেই কোনো সমর্থন পায় না ভারত: রোহিত

মাঠে উপস্থিত বাংলাদেশি দর্শকরা আমাদের সমর্থন দেন। তারা পুরোপুরিভাবে আমাদের সমর্থনে থাকেন। একটা খুব ভালো ব্যাপার আছে আইপিএলে, মূল ক্রিকেটারদের ধরে রাখা হয়। বিপিএলে যা হয় না। প্রতি বছরই বলতে গেলে দল বদলাই আমরা। -তামিম ইকবাল

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২০, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
পৃথিবীর যে প্রান্তেই খেলতে যান না কেন, ভক্তদের সমর্থন পান। একমাত্র বাংলাদেশে এলেই নাকি ভিন্ন পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়। এখানকার মাঠে খেলা হলে ভারত নূ্যনতম কোনো সমর্থন পায় না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এমনটাই বললেন দেশটির তারকা ক্রিকেটার রোহিত শর্মা। শুক্রবার রাতে তামিম ইকবালের সঙ্গে সরাসরি অনলাইন আড্ডায় যোগ দেন এই ভারতীয় ওপেনার। দুজন খোশ মেজাজে ক্রিকেট ও ক্রিকেটের বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেন। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে 'চিরশত্রম্ন' আবহটা ছিল না। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের পর পাল্টে গেছে গোটা চিত্র। ওই ম্যাচে আম্পায়ারদের কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গিয়েছিল ভারতের পক্ষে। সেসব নিয়ে এখনো ক্ষোভ জমা রয়েছে বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর মনে। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেও ভারতের কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে, ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি আর এশিয়া কাপের ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিল একেবারে শেষ বলে। সেই দুঃসহ স্মৃতিগুলোর ক্ষতও বয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশের সমর্থকদের বড় একটি অংশ। সবকিছু মিলিয়ে তাই বাংলাদেশের মাঠে সমর্থন পাওয়ার কথা নয় ভারতের। রোহিতও তা টের পেয়েছেন। ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিকের ভাষায়, 'আমরা যখন (বাংলাদেশের) মাঠে খেলতে নামি, এটা একেবারে অবিশ্বাস্য। কারণ, মাঠে সমর্থন না থাকার সঙ্গে ভারত (জাতীয় ক্রিকেট দল) অভ্যস্ত না। বাংলাদেশই একমাত্র জায়গা, যেখানে আমরা কোনো সমর্থনই পাই না। বিশ্বের যেখানেই আমরা খেলতে যাই না কেন, সমর্থন পাই। অনেক ভক্ত মাঠে আসেন এবং আমাদের খেলা দেখেন। কিন্তু একমাত্র স্থান হিসেবে বাংলাদেশে আমাদের কোনো সমর্থন জোটে না।' তখন হাসতে হাসতে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম বলেন, 'তারা (মাঠে উপস্থিত দর্শকরা) আমাদের সমর্থন দেন। তারা পুরোপুরিভাবে আমাদের সমর্থনে থাকেন।' তবে তামিমের কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করেননি রোহিত, 'তাদের প্রত্যেককে টুপি খোলা সম্মান জানাচ্ছি, যারা মাঠে আসেন এবং খেলা দেখেন। আমি দেখেছি তারা খেলা কতটা উপভোগ করেন আর কী দারুণভাবে তোমাদের জয় কামনা করেন।' আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সমর্থক ভিত্তি বেশ শক্তিশালী। সে তুলনায় বিপিএলের দলগুলোর তেমন কোনো সমর্থক ভিত্তিই নেই। তা গড়ে তুলতে কোনো প্রয়াসও দেখা যায় না। আইপিএলের সফলতম দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মার মতে, দর্শকদের ঘিরেই খেলাটা তৈরি, তাদের সর্বাধিক গুরুত্ব না দিলে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রায় প্রতি আসরেই বদলায় নিয়ম। শীর্ষ ক্রিকেটারদের দেখা যায় কেউ এক বছর এই দলে, তো পরের বছর আরেক দলে খেলছেন। এতে করে দর্শকরা হন বিভ্রান্ত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম বলতে যেমন চেন্নাই সুপার কিংস বোঝায়, রোহিত শর্মা বা কাইরন পোলার্ড বলতে যেমন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, বিরাট কোহলির নাম এলেই আসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর নাম। বিপিএলে এরকম কোনো ভিত নেই। সমর্থক ভিত তৈরি করতে শীর্ষ কয়েকজন ক্রিকেটারকে একই দলে খেলানোর চিন্তা আগেই নিজের লাইভে বলেছিলেন তামিম ইকবাল। রোহিতের সঙ্গে অনলাইন আড্ডায়ও আনেন এই প্রসঙ্গ। রোহিতকে তামিম প্রথমে জিজ্ঞেস করেন বিপিএলের খেলা সরাসরি দেখেছেন কি না- রোহিত জানান কয়েকবার হাইলাইটস দেখেছেন তিনি, 'আমি ইউটিউবে হাইলাইটস দেখেছি। এখানে (ভারতে) একটি চ্যানেলে দেখাত, এখন দেখায় কি না জানি না। তবে ইউটিউবে হাইলাটস দেখেছি।' এরপরই তামিম আসেন মূল প্রসঙ্গে, 'একটা খুব ভালো ব্যাপার আছে আইপিএলে, মূল ক্রিকেটারদের ধরে রাখা হয়। বিপিএলে যা হয় না। প্রতি বছরই বলতে গেলে দল বদলাই আমরা।' রোহিত জানান, একই দলে কয়েকজনের টানা খেলাটা সমর্থক তৈরিতে কতটা দরকার, 'একই ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে থাকা খুব দরকার। তাহলে একটা সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি হয়। বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট পাগল, সত্যি বলতে এতটা ক্রিকেট পাগল দেশ আমি দেখিনি। মূল কয়েকজনকে একই দলে রেখে রোমাঞ্চ তৈরি করতে পারলে, সমর্থকগোষ্ঠী বাড়বে। দেশের মতোই তখন আবেগ নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সমর্থন করবে।' বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যানের মতে দর্শকদের বারবার বিভ্রান্ত করতে থাকলে তারা খেলাটায় আর মজা পাবে না, দর্শকদের দিতে হবে সর্বাধিক গুরুত্ব, 'আইপিএলে এটা খুব ভালোভাবে করা হয়। মূল কয়েকজনকে একই দলে রেখে ফ্যান বেইজ বানানো হয়েছে। সমর্থকদের অনেকে প্রিয় ক্রিকেটারদের জন্যই কোনো দল সমর্থন করে। এখন যদি সেই ক্রিকেটার একবার এই দল, পরের বছর আরেক দলে খেলে তাহলে তাদেরও সমর্থন ঠিক থাকা না। তারা বিভ্রান্ত হয়। আমাদের মনে রাখা দরকার, দর্শকরাই খেলার প্রাণ। তাদেরকে আমরা যদি গুরুত্ব না দেই, তারাও আমাদের গুরুত্ব দেবে না।'