যার হাসিতে মন হারায় সবাই। গস্ন্যামার আর অভিনয়ে তো তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে মাতিয়ে যাচ্ছেন। বয়সের ঘড়িটার কাঁটাগুলো তিনি যেন আটকে রেখেছেন আশ্চর্য জাদুমন্ত্রবলে। বলছি, বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের কথা। মাত্র ৩ বছর বয়সে নাচে হাতেখড়ি, স্কুলে পড়াকালীনই এসেছিল কাজের সুযোগ। চমকে ওঠার মতো তথ্য হলেও এটাই সত্যি, অভিনেত্রী হতে চাননি মাধুরী। নিজের ক্যারিয়ারে হতে চেয়েছিলেন একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট। ভাগ্যিস অভিনেত্রী হয়েছিলেন। না হয়ত মাধুরীর মতো এমন রূপবতীর প্রাণ ভোলানো অভিনয় কোথায় পেত দর্শকরা?
মাধুরী দীক্ষিত এক সময় এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তখনকার সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতাদের থেকেও বেশি পারিশ্রমিক নিতেন তিনি। ১৯৮৪ সালে 'অবোধ' চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল তার। কিন্তু শুরুতেই সাফল্যের মুখ দেখেননি এ নায়িকা। প্রথম দিকের কয়েকটি চলচ্চিত্র ব্যবসাসফল ছিল না। ১৯৮৮ সালে অভিনেতা অনিল কাপুরের সঙ্গে 'তেজাব' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বক্স অফিসে ঝড় তোলেন মাধুরী। এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের মনোনয়ন পান। এই চলচ্চিত্রের 'এক দো তিন' গানে মাধুরীর নাচ এখনো দর্শকদের মনে জায়গা করে আছে।
এরপর তিনি বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে 'রাম-লক্ষ্ণণ' 'পারিন্দা' 'ত্রিদেব' 'কিশেন কানহাইয়া', 'প্রহর' উলেস্নখযোগ্য। পরিচালক ইন্দ্র কুমারের 'দিল' চলচ্চিত্রে মাধুরী অসাধারণ অভিনয় করেন। সেখানে তার সহশিল্পী ছিলেন আমির খান। চলচ্চিত্রটি ভারতে সে বছরের অন্যতম 'বক্স-অফিস হিট' হয়। অনবদ্য অভিনয়ের জন্য মাধুরী তার প্রথম ফিল্মফেয়ারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন।
'দিল' চলচ্চিত্রে সাফল্যের পর 'সাজন', 'বেটা', 'খলনায়ক', 'হাম আপকে হঁ্যায় কৌন' সিনেমাগুলো বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। 'হাম আপকে হঁ্যায় কৌন' চলচ্চিত্রটি হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল সিনেমা। চলচ্চিত্রটি তখনকার সময়ে ভারতে ৬৫ কোটি রুপি এবং ভারতের বাইরে ১৫ কোটি রুপি আয় করে। এর জন্য মাধুরী তৃতীয়বারের মতো ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।
২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'রেডিফ' মাধুরী দীক্ষিতকে বলিউডের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৮ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
বলিউডে মাধুরী অভিনীত 'তেজাব' চলচ্চিত্রের রিমেক হচ্ছে বলে ভারতের গণমাধ্যমগুলো বলছে। চলচ্চিত্রটিতে মাধুরীর ভূমিকায় শ্রদ্ধা কাপুরের অভিনয় করার কথা থাকলেও জাহ্নবী কাপুরকে নেওয়া হচ্ছে। নায়িকার সঙ্গে নায়কও বদলে কার্তিক আরিয়ানের বদলে রণবীর সিংকে নেওয়া হচ্ছে। এটা সত্যি হলে অনীল কাপুর ও মাধুরীর তিন যুগ পর 'তেজাব' জ্বালতে আসছেন রণবীর ও জাহ্নবী।
ইদানীং ওটিটি পস্ন্যাটফর্মেও কাজ করছেন মাধুরী। নেটফ্লিক্সে 'দ্য ফেম গেমে'-এর পর সম্প্রতি আমাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে মাধুরীর নতুন চলচ্চিত্র 'মাজা মা'। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কঠিন সময়ও পার করেছেন মাধুরী। শুটিং সেটেও কখনো কখনো কঠিন সময় পার করতে হয়েছে তাকে। একবার এক গানের শুটিংয়ে ৪০টি রিটেক দিয়েছিলেন তিনি। ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেন মাধুরী।
এক আলাপচারিতায় মাধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সর্বোচ্চ কতটি রিটেক দিয়েছেন? জবাবে মাধুরী দীক্ষিত বলেন, "আমরা 'তাম্মা তাম্মা লোগে' গানের শুটিংয়ে সর্বোচ্চ রিটেক দিয়েছিলাম। আমাদের কোরিওগ্রাফার ছিলেন সরোজজি (সরোজ খান)। আমরা ৪০টি রিটেক দিয়েছিলাম।"
গানের একটি দৃশ্যের কথা উলেস্নখ করে মাধুরী দীক্ষিত বলেন, 'আমাদের মধ্যে কেউ একজন সামান্য ভুল করলেও সেটির রিটেক দিতে হয়েছিল। সর্বশেষ আমরা নিখুঁতভাবে শট শেষ করেছিলাম। গানের শেষের দিকে, ক্যাপটি আমার পায়ের উপরে পড়ে সেখানেই থেকে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পায়ের উপর থেকে ক্যাপটি সরে যায়। যার ফলে, পুনরায় এ দৃশ্যের শুটিং করতে হয়েছিল।' মাধুরী অভিনীত সিনেমা 'থানেদার'। সিনেমাটিতে তার সহশিল্পী ছিলেন সঞ্জয় দত্ত। এ সিনেমায় ব্যবহার করা হয় 'তাম্মা তাম্মা লোগো' গানটি। সিনেমা মুক্তির পর গানটি দারুণ দর্শকপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
ব্যক্তিজীবনে এই নায়িকা একজন তারকা ক্রিকেটারে মুগ্ধ ছিলেন। তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন। সেই ক্রিকেটারের নাম অজয় জাদেজা। ৮ বছরের ক্যারিয়ার ছিল জাদেজার। ভারতের জার্সি গায়ে ১৯৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। দলটির অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন।
সেই অজয় জাদেজার সঙ্গেই প্রেম করেছেন মাধুরী। ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সময় মাধুরীর সঙ্গে জড়িয়েছিল এই ক্রিকেটারের নাম। একটি পত্রিকার ফটোশুটে গিয়েই নাকি সম্পর্কে জড়ান দু'জন। এরপর দীর্ঘদিন চলে সেই প্রেম। শোনা যায়, অজয় জাদেজার খেলার ভক্ত ছিলেন মাধুরী। তার আগে অবশ্য অনিল কাপুর, সঞ্জয় দত্তের সঙ্গেও নায়িকার প্রেমের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তবে জাদেজাতেই ডুবে ছিলেন তিনি। তবে মাধুরীর সঙ্গে প্রেমে নাকি জাদেজার পরিবার বিরোধী ছিল। তারা কোনোভাবেই চাননি, ছেলে কোনো নায়িকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াক। এমনকি মাধুরী-জাদেজার প্রেম যত এগিয়েছে ততই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স তলানিতে নেমেছে। যেই দায় একটা সময় মাধুরীকে দিচ্ছিল তার পরিবার।
এছাড়াও সাধারণ মারাঠি ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে হওয়ায় মাধুরীকে পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ ছিল না জাদেজা পরিবারের। একটা সময় ক্রিকেট থেকে জাদেজার নির্বাসনের কারণে ভেঙে যায় এই দুই তারকার প্রেম। জাদেজার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত হয়ে যায় নিষেধাজ্ঞার কোপে। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ২০০০ সালে ৫ বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট নির্বাসিত হন এই তারকা। এরপর আর ক্রিকেটে ফিরতে পারেননি।
এদিকে জাদেজার সঙ্গে প্রেমে বিচ্ছেদের পর ডাক্তার রাম নেনেকে বিয়ে করে আমেরিকায় পাড়ি জমান মাধুরী। অন্যদিকে, ২০০১ সালের ৩০ মার্চ ভারতনাট্যম শিল্পী অদিতি জেটলিকে বিয়ে করেন জাদেজা।
মাধুরী ২০১৪ সাল থেকে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে শিশুদের অধিকার ও শিশুশ্রম বন্ধের জন্য কাজ করছেন। তিনি ভারত সরকারের 'বেটি বাঁচাও বেটি পাড়াও' ক্যাম্পেইনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন। তিনি একাধিক কনসার্ট সফর ও মঞ্চ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন, সনি টিভির 'কাহি না কাহি কোই হ্যায়' অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন এবং নৃত্যানুষ্ঠান 'ঝলক দিখলা জা', 'সো ইউ থিংক ইউ ক্যান ড্যান্স ও ড্যান্স দিওয়ানে' অনুষ্ঠানের বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।