কমতির দিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চলতি বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ২ শতাংশ কমে আসতে পারে। নরওয়েভিত্তিক জ্বালানি গবেষণা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রাইস্টার্ড এনার্জি সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব এর পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রানঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে লকডাউনসহ নানা ধরনের সরকারি বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য ও শিল্প খাতগুলো কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে, যা জ্বালানি পণ্যটির সামগ্রিক চাহিদা কমিয়ে আনতে পারে। খবর অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ৩৬০ ও সৌদি গ্যাজেট। রাইস্টার্ড এনার্জির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্মিলিত চাহিদা দাঁড়াতে পারে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮০০ কোটি ঘনমিটারে। ২০১৯ সালে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা দাঁড়িয়েছিল ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি ঘনমিটারে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এবার পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা কমে যেতে পারে ৭ হাজার ৩০০ কোটি ঘনমিটার। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আগে ধারণা করা হচ্ছিল প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদায় রেকর্ডের বছর হতে যাচ্ছে ২০২০ সাল। নোভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে রাইস্টার্ড পূর্বাভাস করেছিল, ২০২০ সালে জ্বালানিটির বৈশ্বিক চাহিদা বেড়ে ৪ লাখ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ঘনমিটারের রেকর্ড ছুঁতে পারে। তবে ভাইরাসটি সংক্রমণের পর বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। এর সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে জ্বালানি পণ্যের বাজারে। মহামারির প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথতা জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক গ্যাসসহ সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের বাজারে মন্দা টেনে এনেছে। চাহিদার অপ্রত্যাশিত পতনের সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের জ্বালানি বাজারে ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে। তবে জ্বালানি পণ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গে দামে বেশি প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক ব্যবহার রেকর্ড হ্রাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে বলে মনে করছে রাইস্টার্ড এনার্জি। বিশেষত বিদু্যৎ উৎপাদন খাতে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের বিদু্যৎ খাতে এখনো প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। রাইস্টার্ড এনার্জির গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার মার্কেটের প্রধান কার্লোস টরেস-ডিয়াজ বলেন, কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদায় ধারাবাহিক প্রাবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। তবে চলতি বছর ভিন্ন। বছরের শুরুতেই পৃথিবী মহামারির কবলে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি কমে গেছে। ২০০৯ সালের পর এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম বছর, যেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদায় কোনো প্রবৃদ্ধি নেই। বিশেষত শিল্প খাতের জন্য সময়টা বেশ কঠোর। চলতি বছর বিশ্বজুরে শিল্প খাতে পণ্যটির চাহিদা ৩ শতাংশের বেশি কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, লকডাউন ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, বিদু্যৎ খাতে জ্বালানির হিস্যা ও শিল্প খাতের কর্মতৎপরতার মতো বিষয়গুলোর কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে দেশে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনৈতিক শ্লথতা পরিবেশ ইসু্যকে কেন্দ্র করে কয়লা তুলনায় প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধিতে সক্ষম দেশগুলোর ক্রিয়াকলাপ কমিয়ে আনতে পারে, যা পণ্যটির সামগ্রিক বৈশ্বিক চাহিদায় বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ইতালির কথা। কোভিড-১৯ দ্বারা সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ইতালি অন্যতম। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে মার্চের শুরু থেকেই দেশটি লকডাউনে চলে যায়। দীর্ঘ লকডাউন দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বেশ চাপে পড়েছে। লকডাউন চলাকালে দেশটির বিদু্যৎ ও শিল্প খাতে জ্বালানিটির চাহিদা ২৩ শতাংশ কমে গেছে। ইতালির কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বেশ কম। অর্থাৎ যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে দেশটিতে বিদু্যতের চাহিদা কমে এলে তা প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কমিয়ে আনতে প্রভাব ফেলবে। ইউরোপী ইউরিয়নের দেশগুলোরও একই অবস্থা। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর পরিবেশের সমন্বয় ইসু্যতে ফ্রান্সে প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্মিলিত চাহিদা এক-চতুর্থাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ শতাংশ কমে আসতে পারে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। রাইস্টার্ড এনার্জিও মতে, মহামারিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মোটামুটি স্থির থাকতে পারে। দেশটির বিদু্যৎ খাতে জ্বালানি পণ্যটির ক্রমবর্ধমান চাহিদা অন্যান্য খাতে চাহিদা হ্রাসের পরিমাণ কমিয়ে আনতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। সর্বশেষ দুই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিদু্যৎ খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়িয়েছে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার কোটি ঘনফুট (৭০ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার), আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা অপরিবর্তিত। এছাড়া বিশ্বের আরও অনেক দেশেরই কয়লার পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধির সক্ষমতা রয়েছে। বিশেষত অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও উত্তর কোরিয়া এ দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। রাইস্টার্ড এনার্জি ধারণা করছে, চলতি বছর এ দেশগুলোতেও পণ্যটির ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রের মতো স্থিতিশীল পর্যায়ে থাকতে পারে, যা পণ্যটির বৈশ্বক চাহিদাকে বড় ধরনের পতন থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে চলতি বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে এখনো অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি, নতুন লকডাউন জারির সম্ভাবনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দা এবং বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতের পুনরায় সক্রিয়করণে সরকারের উদ্দীপনা প্যাকেজগুলোর প্রভাব এ সবগুলোই জ্বালানিটির বৈশ্বিক চাহিদার মাপকাঠি হয়ে উঠতে পারে।