শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় সংকটে এজেন্ট ব্যাংকিং

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৩ জুন ২০২০, ০০:০০

দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং। সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন, রেমিট্যান্স পাঠানোসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা পাওয়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় এক নাম এজেন্ট ব্যাংকিং। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। অচলাবস্থায় অর্থনীতি। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম।

চলমান পরিস্থিতিতে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের আয় সাড়ে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। কার্যক্রম বন্ধ প্রায় ২১ শতাংশের। সশরীরে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে দুই-পঞ্চমাংশের বেশি এজেন্ট। এতে করে এজেন্টদের মাসিক ব্যয়ের চেয়ে আয় তিনগুণ কমে গেছে।

বেসরকারি সংস্থা ইনোভেশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 'ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ আউটব্রেক অন এজেন্ট ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক এ গবেষণা করে সংস্থাটি। সম্প্রতি তা প্রকাশ করা হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জড়িতদের কাছ থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে দেশব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবার অবস্থা ও সেবাটির তারল্য পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় নীতি সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়াদিও উঠে এসেছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ পুরুষ এবং ২ শতাংশ নারী আছে। তাদের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বাইরে ভিন্ন আয়ের উৎস রয়েছে ৭০ শতাংশের।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, লকডাউনের কারণে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাপক ভাটা পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেবাটি ব্যবহার করে ইউটিলিটি বিল প্রদানের হার এ সময় ৩২ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। লকডাউনের আগে সেবাটি ব্যবহার করে সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খোলার হার ছিল ৯১ শতাংশ। এখন তা নেমে এসেছে ৩১ শতাংশে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স গ্রহণের হার ৩০ থেকে ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া ডিপিএস ও এফডিআর অ্যাকাউন্ট খোলা এবং ঋণ বিতরণ কার্যক্রম নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়।

এজেন্টরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সঞ্চয়ী হিসাব খোলার চেয়ে আয় কমে যাওয়ার কারণে সাধারণ জনগণের হাতে নগদ টাকা রাখার আগ্রহ বেশি। মহামারির কারণে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরে আসায় রেমিট্যান্সও হ্রাস পেয়েছে।

গবেষণায় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় তারল্যের বিভিন্ন সূচকের পরিবর্তন নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। সূচকগুলো হলো নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, নগদ টাকার উত্তোলন, আমানত, গ্রাহকের সংখ্যার পার্থক্য ইত্যাদি। বেশির ভাগ এজেন্ট এসব সূচকে নিম্নমুখিতার কথা জানিয়েছেন।

গবেষণায় বলা হয়েছে, এ সংকট মোকাবিলায় এজেন্টরা তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এছাড়া এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের কর্মসংস্থান হারানোরও শঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সঙ্গে এজেন্টদের এ পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য সহায়তা দিতে হবে।

অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকারদের ৯৭ শতাংশ জানিয়েছেন, এ সংকটে টিকে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তারা কোনো সহায়তা পাননি। অন্যদিকে এ সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উলেস্নখ করেছেন ৬০ শতাংশ।

এদিকে গবেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধ আর্থিক কর্মকান্ডের কারণে স্বল্প আয়ের গ্রাহক গোষ্ঠীর আর্থিক সহযোগিতার জন্য এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকে পুনরুদ্ধার করতে অভিভাবক ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রকদের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

জানা যায়, বিশ্বের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসাবে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে ২১টি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যে ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সেগুলো হলো ডাচ্‌বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড, অগ্রণী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মিডল্যান্ড, দি সিটি, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এবি ব্যাংক, এনআরবি, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৬ জন গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। এসব হিসাবে জমাকৃত অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে গ্রাহক বেড়েছে ১১৪.৪৩ শতাংশ এবং আমানত বেড়েছে ১৪১.৫২ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে গ্রাহক ছিল ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮২ জন এবং জমাকৃত অর্থের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ১১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ হাজার ৮৫৬টি এবং আউটলেট সংখ্যা ১১ হাজার ৩২০টি। ডিসেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪৪৬ কোটি টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101055 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1