করপোরেট কর কমানোর দাবি

প্রকাশ | ০৫ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আগামী তিন বছরে করপোরেট কর কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটি মনে করে, করপোরেট কর কমানো হলে তা দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখবে। করপোরেট কর কমানো ছাড়াও সংগঠনটি ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, অগ্রিম আয়করের হার কমানো, শিল্পের কাঁচামাল থেকে অগ্রিম কর তুলে নেওয়া, রেয়াতযোগ্য মূল্য সংযোজন করের হার ১০ শতাংশে নামানো এবং আমদানি শুল্ক নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এফবিসিসিআই নিজস্ব ও সদস্য সংগঠনগুলো থেকে পাওয়া প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিয়েছে। আবার গত ১১ মে বাজেট প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে একটি চিঠিও অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, এনবিআরের চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগের সচিবকে দেওয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। চিঠিতে করপোরেট কর আগামী তিন বছরে ২৫ শতাংশে নামানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিস্তারিত প্রস্তাবে এ বছর করপোরেট কর ৫ শতাংশ কমানোর অনুরোধ করা হয়। অগ্রিম আয়করের বিষয়ে সংগঠনটির প্রস্তাব হলো, এটা ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। শিল্পের কাঁচামালের ওপর থেকে অগ্রিম কর (এটি) পুরোপুরি তুলে নেওয়ার পক্ষে এফবিসিসিআই। আর অন্যদের ক্ষেত্রে এটি দ্রম্নত সমন্বয়ের তাগিদ দেয় এই সংগঠন। করোনার মহামারিতে জীবনযাত্রার মানে অবনতির যুক্তি দেখিয়ে এফবিসিসিআই ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর দাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটির মতে, তিন কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ৪ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা দরকার। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় বিলাস পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো যেতে পারে। করপোরেট কর কমানোর পক্ষে যুক্তি কী জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, করোনাভাইরাসজনিত ক্ষতি মোকাবিলা ও দেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়া ত্বরান্বিত করতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। এ জন্য বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থের প্রবাহ বাড়াতে করপোরেট কর কমানো জরুরি। এটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে করপোরেট কর কমানো একটি উপায়। এর সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করার কার্যক্রম, সহজে ঋণ পাওয়া, বিনিয়োগ সহায়ক শুল্ক কাঠামো নিশ্চিত করার চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি। \হদেশে সাধারণভাবে কোম্পানিগুলোর করপোরেট করহার ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি ১০০ টাকা মুনাফা করলে তাকে ৩৫ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয়। অবশ্য কোম্পানিটি যদি পুঁজিবাজারের নিবন্ধিত হয়, সে ক্ষেত্রে করহার ২৫ শতাংশ। কয়েকটি ক্ষেত্রে এই হার ৪০-৪৫ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা বিভিন্ন সময় করপোরেট কর কমানোর তাগিদ দিয়েছেন। সরকারও কয়েকবার বাজেটের আগে করপোরেট কর কমানোর ইঙ্গিত দিয়ে পরে সেখান থেকে সরে এসেছে। ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) এক আলোচনা সভায় তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, করপোরেট কর কমানোর বিষয়টি যৌক্তিক। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরপর কয়েকটি বাজেট গেলেও করপোরেট কর কমেনি। কিন্তু বিভিন্ন খাত নানাভাবে অনেক কম হারের করপোরেট কর কাঠামো আদায় করে নিয়েছে। যেমন পোশাক খাতে করপোরেট কর ১০-১২ শতাংশ। এমন আরও খাত রয়েছে, যারা ১৫ শতাংশের নিচে করপোরেট কর দেয়। যেমন পাটকলে করপোরেট কর ১০ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ১৫ শতাংশ।