নিলাম আয়োজনে গতি ফিরছে দেশে চা কেনাবেচায়

প্রকাশ | ০৭ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দেশে যখন নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, তখন চায়ের বিপণন মৌসুম একেবারে শেষের দিকে। হঠাৎ করে টানা সরকারি ছুটি ঘোষণা ও প্রকাশ্য জমায়েতের ওপর ভীতি ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ওই সময় চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম আয়োজন কঠিন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে মৌসুমের শেষ দিকে নির্ধারিত দুটি নিলাম আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এরপর নতুন মৌসুম শুরু হয়। নতুন মৌসুমের নিলাম নিয়েও তৈরি হয় আশঙ্কা। সংকট নিরসনে বড় হলরুম ভাড়া করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম আয়োজনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ চা বোর্ড। এরই মধ্যে কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়া তিনটি নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা এসব নিলাম ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। চট্টগ্রামে গত ১৮ মে অনুষ্ঠিত হয় চলতি মৌসুমের প্রথম চায়ের নিলাম। এ সময় শুধু চট্টগ্রামের ক্রেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে ১ জুন আয়োজিত মৌসুমের দ্বিতীয় নিলামে ঢাকা থেকেও সাতজন ক্রেতা চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। ৩ জুন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে চলতি মৌসুমের তৃতীয় নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ক্রেতাদের ভালো সাড়া মিলেছে। সর্বশেষ নিলামে সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ৭০০ কেজি চা বিক্রি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ সময় দেশে চায়ের দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রে পানীয় পণ্যটির কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ২৩০ টাকা। চলতি মৌসুমের পরবর্তী নিলামগুলোয় সারাদেশ থেকে ক্রেতারা অংশ নেবেন বলে আশা করছে চা বোর্ড। আর দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি না কমায় নিলাম আয়োজনে বিশেষ সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে বলে জানিয়েছে চা উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাত নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্রীয় এ সংস্থা। বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে চা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে চায়ের জোগান নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি জাতীয় অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও চা বোর্ড ২০২০-২১ নিলাম বর্ষের পূর্ণাঙ্গ নিলাম শিডিউল ঘোষণা করেছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিটিটিএ) নির্ধারিত নিলাম কেন্দ্রের পরিবর্তে দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিসিআই) মালিকানাধীন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সুপরিসর বঙ্গবন্ধু হলরুমে নিলাম আয়োজন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি এখানেই মৌসুমের পরবর্তী নিলামগুলো আয়োজন করা হবে। চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গলের ২০টি নিলামও সুপরিসর হলরুমে আয়োজনের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে নিলামের সময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে সুবিধা হবে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (বাণিজ্য) মুহাম্মদ মদহুল কবির চৌধুরী বলেন, চা দেশের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো একটি অর্থনৈতিক খাত। এক সময় রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল চা। রপ্তানি কমে এলেও বর্তমানে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়ের ১৬৭টি বাগানে চা উৎপাদন হয়। দেশে প্রায় পাঁচ হাজার ক্ষুদ্র চা চাষি রয়েছেন। তিন লক্ষাধিক চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস এ খাত। বর্তমানে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিভিন্ন খাত বন্ধ থাকলেও সরকারি নির্দেশনায় চা বাগানগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এটা করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পক্ষ থেকে গত ১৪ মে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। এতে চায়ের নিলাম কেন্দ্র, ব্রোকার হাউজ ও ওয়্যারহাউজে হাত ধোয়ার জন্য সাবান কিংবা স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়। একই সঙ্গে এসব জায়গায় মাস্ক ও হ্যান্ড গস্নাভসের ব্যবহার নিশ্চিত করে সরকার কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণে চায়ের নিলামকারী সংস্থা ও বিপণনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সুপরিসর স্থানে নিলাম শুরুর আগে ও পরে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে চট্টগ্রামের টিটিএবি ও শ্রীমঙ্গলের টি পস্নান্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (টিপিটিএবি) আহ্বান জানায় টি বোর্ড। নিলাম কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নূ্যনতম ৭ ফুট পরপর বসার ব্যবস্থা এবং নিলাম কেন্দ্রে প্রবেশের আগে ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। উলেস্নখ্য, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়। উৎপাদিত চায়ের প্রায় পুরোটাই দেশের চাহিদা পূরণে ব্যবহার হয়। এজন্য চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের দুটি কেন্দ্রে আয়োজন করা হয় নিলাম। নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও ২০২০-২১ বিপণন মৌসুমে চট্টগ্রামে ৪২টি ও শ্রীমঙ্গলে ২০টি চায়ের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি প্রতি বছর অল্প কিছু চা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় রপ্তানি হয়। গুণগত মান বজায় রাখা ছাড়াও প্রতিযোগিতামূলক বাজারের প্রয়োজনে দেশের কোম্পানিগুলো কিছু পরিমাণ চা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে চা আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে চা বোর্ড।