চার শতাংশ সুদে ঋণ চায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
চলমান মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটিতে ছিল দেশ। এ সময় দেশের শেয়ারবাজারও বন্ধ ছিল। তাই মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো চরম ক্ষতিতে পড়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছ থেকে চার শতাংশ সুদে ঋণ চায় তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রাইসিস মোমেন্টে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শেয়ারবাজারকে প্রণোদনা দেওয়ার নজির রয়েছে। তাই সরকার চাইলে শেয়ারবাজারে প্রণোদনা দিতেই পারে। তবে আরও একটা ভালো অপশন হচ্ছে ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) উঠিয়ে দেওয়া। এটা উঠিয়ে দিলেই বাজারে কেনা-বেচা বাড়বে, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ইনকামও আগের মতো হয়ে যাবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) অর্থ সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ সুবিধা চাওয়া হয়েছে। বিএমবিএ'র সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ মতিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে পুঁজিবাজার খুব খারাপ সময় পার করছে। এবার করোনাভাইরাসের কারণে বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। করোনা রোধে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটিতে ছিল দেশ। এ সময় পুঁজিবাজারও বন্ধ ছিল। ফলে কোনো আয় করতে না পারায় বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো খুব কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্টাফদের বেতন, অফিস ভাড়া, ইউটিলিটি বিল এবং ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে পারছে না। তাই সরকারের কাছে তারা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় অফিস স্টাফদের বেতন, অফিস ভাড়া এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধের জন্য ৪ শতাংশ সুদে ঋণ চায়। সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে অন্যদের যেমন ৬ মাসের গ্রেস প্রিয়ড দেওয়া হয়েছে তারাও ৬ মাস গ্রেস প্রিয়ড চায়। একই সঙ্গে পরবর্তী ২৪ কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, 'চার শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা থাকলে সরকার দেবে। তবে তার থেকে ভালো অপশন হচ্ছে এখন ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) থাকার কারণে বেচা-কেনা কম। তাই ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ইনকাম কমে গেছে। আমি মনে করি এটা উঠিয়ে দেওয়া উচিত'। তিনি বলেন, 'ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা ট্রেডিং হলে তারা আগের মতো অবস্থানে পৌঁছবে। এ নিয়ম মার্কেটের সিস্টেমের বাইরে। এ নিয়ম পৃথিবীর কোথাও নাই বলেও জানান তিনি। শেয়ারবাজারের সূচক শুধু নিম্নমুখী তাই বাংলাদেশে এ নিয়ম করা হয়েছিল। কিন্তু এতে যে টোটাল বেচা- কেনা বন্ধ হয়ে গেছে এটা কেউ দেখে না'। ফ্লোর প্রাইস কি এ বিষয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, 'আগের কমিশন একটা নিয়ম করেছে যে, পাঁচ দিনের এভারেজ করে নিচের দিতে যেতে পারবে না এটাই হচ্ছে ফ্লোর প্রাইস। এখন নিচের দিকে না যাওয়ার কারণে শেয়ার বিক্রি হয় না। কারণ মানুষতো ওই দামে কিনতে চায় না। বিক্রেতা থাকে কিন্তু ক্রেতা থাকে না। ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে ডিম্যান্ড-সাপস্নাইয়ের ওপর ছেড়ে দিলে প্রথমে কয়েক দিন শেয়ার পড়তেও পারে। তখন ক্রেতা এসে যাবে। শেয়ারবাজার আবার উঠতে শুরু করবে'। এ বিষয়ে ফিনান্সিয়াল কনসালটেন্ট শফি রহমান বলেন, 'এতদিনেও বাংলাদেশে শেয়ারবাজার সেভাবে ডেভেলপ করেনি। ক্রাইসিস মোমেন্টে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শেয়ারবাজারকে প্রণোদনা দেওয়ার নজির রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের যে অবস্থা তাতে সরকার প্রণোদনা দিয়ে বাজারকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে'। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েক দফায় এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এসব প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস নেই।