আরও তিন মাসের বেতন-ভাতা চান পোশাকশিল্প মালিকরা

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলমান সংকটে শ্রমিক-কর্মচারীদের আরও তিন মাসের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা। এই বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে চিঠি দেয় রফতনিমুখী পোশাক মালিকদের বড় দু?টি সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। বিজিএমইএ'র সভাপতি রুবানা হক ও বিকেএমইএ'র সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমানের স্বাক্ষরিত যৌথ এই চিঠিতে দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি পোশাক রফতানির সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শ্রমিক-কর্মচারীদের আগামী জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য 'আগের মতো' সহজ শর্তে অর্থ বরাদ্দ দিতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিসচার্জ দিয়ে ঋণ নিতে পারছেন ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন দিয়েছেন অনেক পোশাক কারখানার মালিক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, চলমান সংকটে রফতানিমুখী শিল্পের ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্ব-ইচ্ছায় বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য ৫,০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দেন। ওই টাকায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পোশাক কারখানা তিন মাসের মজুরি দিচ্ছে। তিনি বলেন, প্যাকেজের ঋণের অর্থে আমরা এপ্রিল, মে ও জুন এ তিন মাসের মজুরি দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। এখন আগামী জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য 'আগের মতো' সহজ শর্তে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছি। কারণ, আজ থেকে তিন চার মাস পরে আমাদের যে কাজ প্রোডাকশন লাইনে যাবে বা শিপমেন্ট হবে সেটা এখনই কনর্ফাম হওয়া দরকার। কিন্তু আমাদের কাছে এ মুহূর্তে কোনো অর্ডার আসছে না। তাই আগামী তিনমাস শ্রশিকদের বেতন দেয়ার মতো পরিস্থিতি কারখানাগুলোর নেই। এমন অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি বেতন দেয়ার জন্য ঋণের সুবিধা আরও তিন মাস যেন দেয়া হয়। ৫০০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ থেকে ৫০ শতাংশ ঋণ পাওয়া গেছে জানিয়ে বিকেএমইএর এ নেতা জানান, ৮৩৮টি সদস্যের মধ্যে ১৯ জন আবেদন করেছি। কিন্তু ব্যাংক বিভিন্ন অজুহাতে ৯৯ জনকে ঋণ দেয়নি। বাকিরা পেয়েছে। করোনাভাইরাসের ক্ষতি বিবেচনায় গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। পরে অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২ এপ্রিল সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারে বলা হয়, ৫,০০০ টাকার বিশেষ প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবে উৎপাদনের নূ্যনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থ দিয়ে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। সুদবিহীন এ ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিসচার্জ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। জানা যায়, তহবিল থেকে ঋণ পেতে বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৩৭০ ও বিকেএমইএর সদস্য ৫১৯টি কারখানা আবেদন করেছিল। বিভিন্ন কারণে বিকেএমইএর ৯৯ সদস্য কারখানাসহ বেশি কিছু আবেদন বাতিল হয়। তবে এরপরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থই ঋণ হিসেবে পেয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। ফলে দুই মাস ধরে পোশাকশ্রমিকদের একটি বড় অংশের মজুরি হচ্ছে প্রণোদনার টাকায়।