৮৪ বছরের ক্যামেরা ব্যবসা থেকে বিদায় নিচ্ছে অলিম্পাস

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বের অন্যতম বড় ক্যামেরা ব্র্যান্ড অলিম্পাস। ৮৪ বছর ধরে বেশ সুনামের সঙ্গেই ক্যামেরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল জাপানের এ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু স্মার্টফোনের উত্থান ও সংকুচিত ক্যামেরা বাজারের প্রেক্ষাপটে আর এ ব্যবসায় থাকতে চাইছে না কোম্পানিটি। অলিম্পাস জানিয়েছে, সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তারা ক্যামেরা ব্যবসায় মুনাফা করতে পারছে না। তিন বছর ধরে টানা লোকসান দেখতে হয়েছে। এ অবস্থায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ পুরো ক্যামেরা ব্যবসাই বিক্রি করে দিচ্ছে। খবর বিবিসি। বহু বছর ধরে অনুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরির পর ১৯৩৬ সালে প্রথম ক্যামেরা তৈরি করে অলিম্পাস। তাদের প্রথম ক্যামেরা ছিল দ্য সেমি-অলিম্পাস ওয়ান। এরপর কয়েক দশক ধরে কোম্পানিটি তাদের ক্যামেরা বিভাগের উন্নয়ন অব্যাহত রাখে। এর মধ্য দিয়ে অলিম্পাস ক্যামেরা ব্যবসায় বাজারের অন্যতম বড় কোম্পানিতে পরিণত হয়। অ্যামেচার ফটোগ্রাফার ম্যাগাজিনের সম্পাদক নাইজেল অ্যাথার্টন বলেন, ফটোগ্রাফারদের কাছে বরাবরই অলিম্পাস ক্যামেরার কদর ছিল। বিশেষ করে ১৯৭০-এর দশক ছিল খুবই দারুণ সময়। তখন ডেভিড বেইলি ও লর্ড লিচফিল্ডের মতো বিখ্যাত ফটোগ্রাফাররা টিভিতে প্রচারিত অলিম্পাস ক্যামেরার বিজ্ঞাপনে অংশ নিতেন। অ্যাথার্টনের মতে, আকারে ছোট, খুবই হালকা, সুন্দর ডিজাইন ও ভালো মানের লেন্সের অলিম্পাস ক্যামেরাগুলো ছিল যুগান্তকারী। পরবর্তীতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিলেও অলিম্পাসের ঐতিহ্যে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। তবে ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে ফের আরেকবার নিজের অবস্থানের জানান দেয় কোম্পানিটি। মূলত যেসব ক্যামেরা কোম্পানি প্রথম ফিল্ম থেকে ডিজিটাল পাটফর্মে প্রবেশ করে, তাদের মধ্যে অন্যতম অলিম্পাস। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা তাদের পরবর্তী মিররলেস ক্যমেরাগুলোর জন্য মধ্যম বাজার বেছে নেয়। মূলত অলিম্পাস ধীরে ধীরে এমন ক্রেতাদের লক্ষ্য করে ক্যামেরা তৈরি করা শুরু করে, যারা পেশাদার ফটোগ্রাফার নন। এসব ক্রেতা এমন ক্যামেরা চান, যেগুলো ডিএসএলআর নয়, কিন্তু পয়েন্ট-অ্যান্ড-শুট ক্যামেরার চেয়ে ভালো। কিন্তু সমস্যা হলো, ডিজিটাল ক্যামেরার বাজার খুব দ্রম্নত স্মার্টফোনের দখলে চলে যায়। সত্যি বলতে, সাম্প্রতিক সময়ে একক যন্ত্র হিসেবে ক্যামেরার বাজারের অভাবনীয় পতন হয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এ বাজারের পতন হয়েছে ৮৪ শতাংশ। অ্যাথার্টন দাবি করেন, অলিম্পাসের সমস্যা হলো কোম্পানিটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া গত কয়েক বছরে তারা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার অধিকাংশই ভুল ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো তাদের ক্যামেরার ভিডিও পারফরম্যান্স বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছিল, তখন অলিম্পাস এ বিষয়ে অগ্রগতিতে মনোযোগ দেয়নি। ফলে সব মিলিয়ে অলিম্পাসের মতো একটি কোম্পানি ক্যামেরা ব্যবসায় টানা তিন বছর লোকসানের সম্মুখীন হয়। এ অবস্থায় অলিম্পাস তার ক্যামেরা বিভাগ জাপান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনার্সের (জেআইপি) কাছে বিক্রি করতে যাচ্ছে। এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ক্যামেরা ব্র্যান্ডটির ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে বলে এক বিবৃতিতে জানায় অলিম্পাস।