বাজেট বাস্তবায়নে মানুষ এগিয়ে আসবে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
করোনাভাইরাস মহামারিকালে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরে আগামী অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটা বাস্তবায়নে দেশের সব মানুষ এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সোমবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বাজেটটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব ইনশাআলস্নাহ। এই বাজেটটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে আমাদের দেশের সব মানুষ, যারা আমাদের প্রাণশক্তি।' করোনাভাইরাস মহামারির নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে ১১ জুন অর্থমন্ত্রী মোট পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, এতে ৬৬ শতাংশ অর্থ রাজস্ব আয় থেকে জোগানোর পরিকল্পনা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বরাবরই অনেক পিছিয়ে থাকে। মহামারির কারণে তিন মাস ধরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রায় বন্ধ থাকার পাশাপাশি আগামী দিনের অনিশ্চয়তার মধ্যে বিপুল এই রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্য অর্জন নিয়ে প্রচন্ড সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তিন মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির, শিল্প উৎপাদনও গতিহারা। আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির সব সূচকই বাজে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিদায়ী অর্থবছরেও রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর। এরপরও অর্থমন্ত্রী বাজেটের পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়নির্বাহের জন্য তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হিসাবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন, যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের সেই সংশয় যে অমূলক নয়, সেটা এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে; আদতে বাস্তবতা মাথায় রেখে বিপুল রাজস্ব আদায়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে অর্থমন্ত্রী বাজেটকে 'মানুষ রক্ষা করার' বাজেট হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, 'সেই চিন্তা থেকেই আমরা প্রথমে টাকা খরচ করব; পরে আয় করব। আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। এরপর টাকা জোগাড় করব।' বাজেট বাস্তবায়নে আশাবাদী হওয়ার যুক্তি তুলে ধরে সোমবার অর্থমন্ত্রী বলেন, 'বিগত পাঁচ বছরে আমরা বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম, আমাদের প্রকৃত অর্জন প্রতিবছরই এর চেয়ে বেশি ছিল। বিগত ১০ বছরে জিডিপিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৮ শতাংশ, যা বিশ্বে সবার ওপরে। আমাদের কাছাকাছি ছিল চায়না ১৭৭ শতাংশ নিয়ে এবং ভারত ১১৭ শতাংশ। গত ১১ বছরে আমাদের জিডিপির আকার বেড়েছে তিনগুণ। দ্য ইকোনমিস্ট ২ মে ২০২০ তারিখে গবেষণামূলক একটি প্রতিবেদনে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে, এতে বাংলাদেশ রয়েছে নবম শক্তিশালী অবস্থানে। গত ১১ জুন এই মহান জাতীয় সংসদে আমরা বাজেট ২০২০-২০২১ উপস্থাপন করেছি, এর মাত্র সাত দিনের মাথায় গত ১৮ জুন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশের একেবারে কাছাকাছি। এতেই প্রতীয়মান হয়, আমরা বাজেটটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব ইনশাআলস্নাহ।' অর্থমন্ত্রীর আগে বাজেট আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেটের ওপর বক্তৃতায় আর্থিক প্রস্তাবে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে সাধারণত প্রধানমন্ত্রী কিছু বিষয় বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। পরে সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে কিছু পরিবর্তন আসে। তবে এবার তা ঘটেনি।