বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়ীদের সমঝোতা

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২০, ০০:০০ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০, ১৩:৫১

যাযাদি রিপোর্ট

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সঙ্গে সমঝোতা করেছে কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)। গতকাল এফবিসিসিআই থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মহামারির সময়ে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ ও উদীয়মান ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভার্চুয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে সম্প্রতি 'অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস' শিরোনামে একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)। যার মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধাসহ অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে বক্তারা। ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র ও সংসদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী ভি মুরলীধরনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, 'যুগ যুগ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মানবতার একটি সম্পর্ক রয়ে গেছে। আর এই মানবিকতার অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাদের নেতৃত্বে আমরা উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করতে পারছি। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়নে একটি নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। যার ইতিবাচক ও উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়াকে বলতে পারি। ফলশ্রম্নতিতে, ২০১৯ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মাধ্যমে ৯.৭৫ বিলিয়ন আয়।' সার্কের কোভিড-১৯-এর জরুরি তহবিল থেকে বাংলাদেশের জন্য ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করায় উভয় দেশের নেতাদের প্রশংসা করে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি বলেন, 'আমরা এই নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ও দেশের অর্থনৈতিক সংকট পুনরুদ্ধারের জন্য ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। একইসঙ্গে এই সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য তাদের সহযোগিতাও কামনা করছি। উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাইলাটেরাল ভ্যালু চেন ইনিশিয়েটিভের (বিভিসি) উদ্যোগে এফবিসিসিআই বেশ কিছু শক্তিশালী খাত চিহ্নিত করেছে। তার মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশি পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল, অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্ষেত্রে এফকিউএফ পণ্য প্রবেশাধিকার বন্ধসহ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রো-প্রসেসিং, কেমিক্যাল, পোশাক ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে বলে বক্তব্যে তুলে ধরেন এফবিসিসিআই-এর সভাপতি। সহযোগিতার কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'স্থলবন্দর সংক্রান্ত নানা সমস্যা রয়েছে, যা আমরা সরকারি-বেসরকারিভাবেও কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে পারি। এছাড়া উদ্ভাবনী উদ্যোগ, দক্ষতা, নলেজ ট্রান্সফার, জেভি ইন-৪ আইআর, ফিনটেক, আইওটি, রোবোটিকস, বিগ ডাটা, ডাটা অ্যানালিটিকস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম ইন্টারনেট ইত্যাদির ক্ষেত্রে আমরা যৌথভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারি।' তিনি বলেন, 'সিআইআইয়ের মধ্যে আমাদের একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে সর্বোচ্চ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আমার বিভিসিআইয়ের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করে যাব। যার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন এক দিগন্ত তৈরি হবে।' বাংলাদেশে মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি বলেন, 'আমাদের বন্ধুদের প্রতি এফবিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে অতি শিগগিরই আমাদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা পৌঁছে যাবে।' ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, 'সুস্পষ্ট আমদানি ও রপ্তানি নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেই উন্নয়ন কাঠামোকে কেন্দ্র করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের কাছে আরও বিকল্প মাধ্যম রয়েছে। তার একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে, দুই দেশের মধ্যে রেল নেটওয়ার্ক সৃষ্টি। রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি ও আমদানিতে উভয় দেশই ব্যাপক লাভবান হবে।' ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, 'বাণিজ্যিকভাবে দু'দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এতে উভয় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। যার ফলে আমরা আরও অনেক কিছু পেতে পারি।' বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ভারত ও বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যারা সাধারণ বিষয়গুলো একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়। আমাদের সবচেয়ে নিকটতম ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এটি। আমরা দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য আমাদের একাত্মতা আরও বাড়াতে চাই।' ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র ও সংসদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী ভি মুরলীধরন বলেন, 'দক্ষিণ-এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। উভয় দেশের নেতারা বেশ কয়েকটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা দু'দেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ সম্পর্ক ধরে রাখতে পেরেছি। যার মাধ্যমে উভয় দেশের উন্নয়নে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।' এছাড়া যুক্ত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান, সিআইআই-এর মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি এবং এক্সিম ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাসকুইনহা।