ছয় লাখ টাকায় ট্রেক মানবে না ডিএসই

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নানামুখী সমালোচনার পরও মাত্র ছয় লাখ টাকা দিয়েই ট্রেক বা শেয়ারবাজারে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ার সুযোগ রেখে 'ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০' গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সম্প্রতি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র ছয় লাখ টাকা দিয়ে ট্রেকের মালিক হওয়ার যে বিধান রাখা হয়েছে তা না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। বৃহস্পতিবার পর্ষদ সভা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ট্রেক পাওয়ার জন্য গেজেটে নিবন্ধন ফি, আবেদন ফি, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন, জামানতের জন্য যে টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ফি বাড়ানোর জন্য ডিএসই থেকে আবেদন করা হবে। ডিএসইর সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ট্রেক পেতে আবেদন করা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা হতে হবে, যা প্রকাশিত গেজেটে তিন কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেক পেতে আবেদন করা ফরমের মূল্য হবে ১০ লাখ টাকা, যা গেজেটে এক লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর নিবন্ধন ফি হবে দুই কোটি টাকা, যা গেজেটে পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেক হলো শেয়ারবাজারে লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের লেনদেন করবেন। এ হিসেবে ট্রাক অনেকটাই ব্রোকার হাউসের মতো। তবে ট্রেকের মালিকরা ব্রোকারেজ হাউসের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার পাবে না। গত ২৪ মার্চ 'ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০' খসড়া করে তা জনমত যাচাইয়ের জন্য মতামত চায় বিএসইসি। এ খসড়া চূড়ান্ত করতে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়। মতামতে খসড়ার কোনো বিষয়ে আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে তা জানাতে বলা হয়। এ খসড়ায় বলা হয়, এক্সচেঞ্জের প্রত্যেক প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডার ডিমিউচু্যয়ালাইজেশন আইনের আওতায় একটি করে ট্রেক (ব্রোকারেজ হাউস) পাওয়ার অধিকার রাখেন। প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের বাইরে ট্রেক পাওয়ার যোগ্যতার শর্তে বলা হয়েছে-কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কমিশন থেকে অনুমোদন পাওয়া যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন তিন কোটি টাকা বা তার বেশি রয়েছে তারা ট্রেক পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে নিট সম্পদের পরিমাণ সবসময় পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে। ট্রেক পাওয়ার জন্য এক লাখ টাকা ফি দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এই ফি ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ বরাবর জমা দিতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে এক্সচেঞ্জ ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা মঞ্জুর করবে অথবা বাতিল করবে। আবেদন মঞ্জুর হলে নিবন্ধন ফি বাবদ পাঁচ লাখ টাকা এক্সচেঞ্জ বরাবর ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার করতে হবে। অর্থাৎ মাত্র ছয় লাখ টাকা দিয়েই হওয়া যাবে ব্রোকারেজ হাউসের মালিক। এমন বিধান রেখে 'ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০' খসড়া চূড়ান্ত করায় তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ২৯ এপ্রিল কমিশন সভা করে খসড়াটি আবার জনমত জরিপে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ বিষয়ে বিএসইসি থেকে জানানো হয়, 'ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০' এর খসড়া সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে গেজেটে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে জনমত জরিপের সময় শেষ হয়ে গেছে। এজন্য কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পরবর্তীতে অফিস খোলার পর জনমত জরিপের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে। তবে সম্প্রতি খসড়ায় উলেস্নখ করা বিষয়গুলো অপরিবর্তিত রেখে ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট বিধিমালা ২০২০ গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, '?ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সর্বশেষ ১২টি মেম্বারশিপ বিক্রি করেছে ৩২ কোটি ২ লাখ টাকা করে। সেখানে মাত্র ছয় লাখ টাকা দিয়ে মেম্বারশিপ পাওয়ার সুযোগ রাখা কিছুতেই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না।' এদিকে ডিএসইর পর্ষদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন পরিচালক বলেন, 'সম্প্রতি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের বিষয়টি আমাদের নাড়া দিয়ে গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চাই ট্রেক পাওয়া প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী হতে হবে। যাতে বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা থাকে।' তিনি বলেন, 'আমাদের প্রস্তাব হবে ট্রেক পেতে প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা থাকতে হবে। জামানত থাকতে হবে তিন কোটি টাকা। ট্রেক পাওয়ার জন্য যে ফরমে আবেদন করা হবে তার মূল্য হবে ১০ লাখ টাকা। নিবন্ধন ফি হবে দুই কোটি টাকা। আমাদের প্রস্তাব শিগগির বিএসইসিতে পাঠানো হবে।' গেজেটে ট্রেকের বার্ষিক নিবন্ধন নবায়ন ফি এক লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিএসইর অবস্থান কী জানতে চাইলে এই পরিচালক বলেন, 'বিষয়টি আমরা খেয়াল করিনি। এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। আমরা বিষয়টি দেখব এবং অবশ্যই এ ফি বাড়ানোর জন্যও আবেদন করা হবে।' উলেস্নখ্য, সম্প্রতি ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শহিদ উলস্নাহ ব্রোকারেজ হাউসের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে লাপাত্তা আছেন। ফলে হাউসটির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন।