ঢাকার কাছেই অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর খুব কাছেই একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৮৭৪ একর জমিতে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বেজা ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিস্তারিত প্রকল্প পরিকল্পনা (ডিপিপি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। বেজা বলছে, এ প্রকল্পের দুটি উদ্দেশ্য। প্রথমত, ঢাকা শহরে যত বিপজ্জনক শিল্পকারখানা আছে, সেগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জমির ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা ঢাকার আশপাশে জমি চান, তাদের জন্য জমির ব্যবস্থা করা। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক অনুমোদন আগেই নেওয়া ছিল। এবার প্রকল্পের অনুমোদন পেলে দ্রম্নত কাজ শুরুর আশা করা যায়। নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গত বছরের ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতিগত অনুমোদন পায় বেজা। এরপর বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারসকে (পিডবিস্নউসি) দিয়ে একটি প্রাক্‌?-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করা হয়। প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ঢাকা থেকে ৩৯ কিলোমিটার, কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ২৩ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম থেকে ২৫৬ কিলোমিটার দূরে। এর ৮৭৪ একর জমির মধ্যে ৮৩৪ একরই ব্যক্তিমালিকানাধীন। এসব জমিতে কোনো বসতি নেই, বছরের একটা সময় পানির নিচে থাকে, বাকি সময় কৃষিকাজ হয়। সম্ভাব্য স্থানটির কাছেই ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদী। পিডবিস্নউসির প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিস্নউটিএ) প্রথম শ্রেণির রুট হলো ধলেশ্বরী নদী। এর গভীরতা আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিটার। ফলে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটির নৌপথেও যোগাযোগ সুবিধা থাকবে। পিডবিস্নউসি বলেছে, সফল অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো মূলত রাজধানী অথবা বড় শহরের কাছে অবস্থিত। এই অবস্থানগত সুবিধা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারখানাগুলোর বাজার ধরা, সংযোগশিল্পের সুবিধা ও জনবলের প্রাপ্যতা এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করে। নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেহেতু ঢাকার কাছে, তাই এটিতে বিনিয়োগকারীরা ওই সুবিধাগুলো পাবেন। নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সম্ভাব্য বিনিয়োগের খাত কী কী চান, তা জানতে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করেছে পিডবিস্নউসি। এগুলোর মধ্যে ১২৮টি দেশি প্রতিষ্ঠান, বাকিগুলো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। জরিপে উঠে আসে যে সেখানে মোট ৯টি খাতে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। সেগুলো হলো খাদ্য ও পানীয়, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, নন-মেটালিক মিনারেলস, ওষুধ, বৈদু্যতিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও আসবাব, রাসায়নিক এবং পস্নাস্টিক ও রাবার। ঢাকায় যারা হালকা প্রকৌশল, পস্নাস্টিক ও রাসায়নিকের কারখানা গড়ে তুলেছেন, তারা জমির কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এনায়েত হোসেন বলেন, 'বছরের পর বছর আমরা শুধু জমি পাওয়ার কথা শুনছি। আসলে পাচ্ছি না।' বিভিন্ন সমিতির সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকায় এখন রাসায়নিক ব্যবসা করেন ১ হাজার ২০০ ব্যবসায়ী। সেখানে পস্নাস্টিকের কারখানা ও গুদাম রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০। এ ছাড়া ধোলাইখাল, নারিন্দা ও টিপু সুলতান রোড ঘিরে অনেক হালকা প্রকৌশল শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা রাজধানীকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। চকবাজারে গত বছরের ফেব্রম্নয়ারি মাসে লাগা আগুনে অন্তত ৭০ জনের মৃতু্য হয়। এর আগে ২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে মারা যান ১২৪ জন। পুরান ঢাকায় একেকটি দুর্ঘটনা ঘটে, আর শিল্প সরানোর দাবি জোরালো হয়। পরে আর অগ্রগতি দেখা যায় না। বেজা অবশ্য নবাবগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার কথা বলছে প্রকল্প প্রস্তাবে। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, '২০০৯ সালে মুন্সীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে হালকা প্রকৌশল শিল্পের জন্য একটি শিল্পনগর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখনো শুনছি, কাজ চলছে। আরও কত বছর চলবে, কে জানে।' তিনি বলেন, 'নবাবগঞ্জ ভালো জায়গা। জমি পেলে আমরা সেখানে যাব। তবে শিল্পনগরে সব অবকাঠামো থাকা দরকার। বিসিক শিল্পনগরের মতো হাঁটুসমান কাদা যাতে না হয়।'