বিমা কর্মীদের নিজেদেরই বিমা নেই

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনার প্রভাবে এ বছরের এপ্রিল থেকে জুনে বিমা খাতে প্রায় ২ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। বিকল্প কাজের সম্ভাবনা খুব একটা না থাকায় অস্তিত্বের সংকটে রয়েছেন চাকরিচু্যতরা। যদিও বিমা সংস্থাগুলো মানুষ ও সম্পদের সুরক্ষিত করার কথা বলে, কিন্তু এখন তারা নিজ নিজ কর্মীদের চাকরির সুরক্ষা দিতে পারছে না। বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এই খাতটিতে। এ কারণেই কোম্পানিগুলো তাদের পরিচালন ব্যয় কমাতে চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশের মোট ৭৯টি কোম্পানির মধ্যে ৩৩টি জীবন বিমা এবং ৪৬টি সাধারণ বিমা কোম্পানি রয়েছে। আর এই খাতে মোট কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। এছাড়াও সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রায় ৪ লাখ এজেন্ট। লকডাউনে এজেন্টের সংশ্লিষ্টদের অবস্থা আরও খারাপ। এ সময়ে তাদের আয় প্রায় শূন্যের কোটায়। প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্সু্যরেন্স লিমিটেড সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অপারেটিং ব্যয় কমানোর জন্য কোম্পানির ৬০০ কর্মচারীর মধ্য থেকে প্রায় ২০০ কর্মচারী ছাঁটাই করেছে। এ বিষয়ে ইন্সু্যরেন্সে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী মো. আপেল মাহমুদ বলেন, 'তাদের অতিরিক্ত জনবল রয়েছে যা আগে অযৌক্তিকভাবে নিয়োগ পেয়েছিল। এখন তারা পলিসিধারীদের স্বার্থ ও অর্থ রক্ষার জন্য সেই লোকবল কমাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বরখাস্ত কর্মীদের সংখ্যা ২০০-এর বেশি হবে না। এছাড়াও যে কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হয়েছে তাদের চাকরির বিধি অনুযায়ী যথাযথ সুবিধা দেওয়া হবে। এক বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, 'যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা অর্ধেকের বেশি কমে যায় তখন তাদের আর কী করার থাকে। তিনি জানান, করোনাকালীন সময়ে নন লাইফ ইন্সু্যরেন্সের ব্যবসা কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। মহামারির মধ্যে বিভিন্ন শিল্পের ব্যবসায়ের প্রবণতা সম্পর্কে রিলায়েন্স ইন্সু্যরেন্সের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার খালেদ মামুন বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে তাদের প্রিমিয়াম আয় ৬৫ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়াও, বিদ্যমান পলিসিগুলো খুবই কম হারে নবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে বিমা সংশ্লিষ্টদের আয় নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, অগ্নিকান্ড ও সামুদ্রিক বিমা থেকে প্রিমিয়াম আয় গত দুই মাসে উলেস্নখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় সাধারণ বিমাকারীদের সামগ্রিক ব্যবসা ৪৫% হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে কোনো মোটর গাড়ি আমদানি না হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। এদিকে লাইফ ইন্সু্যরেন্সের ব্যবসা নতুন বিমা পলিসি পাওয়ার উপর নির্ভর করে। প্রায় ৪ লাখ এজেন্ট তাদের কোম্পানির জন্য নতুন বিমা আনার কাজে জড়িত। যা কোম্পানি ৫০% আয়ের উৎস। তবে গত ৩ মাসে এই আয়ের সুবিধাগুলো ধীরে ধীরে হ্রাস পওয়ায় আয় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। যদিও প্রায় এক মাস আগে এই শাটডাউন প্রত্যাহার করা হয়েছে কিন্তু এজেন্টদের পক্ষে অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। তদুপরি, বিদ্যমান জীবন বিমা পলিসিধারীরা মহামারির এই সময়ে তাদের মৌলিক ব্যয়গুলো মেটাতে তাদের পলিসি বিক্রি করে নগদ আউট নিচ্ছেন জানা যায়। বিআইএ এজেন্টদের সহায়তা বাড়ানোর অনুরোধ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে জানিয়ে বিআইএ-র হোসেন বলেন, 'এজেন্টদের এখনকার আয় খুব কমই হওয়ায় তারা কঠিন সময় পার করছে। তাদের এখন গার্মেন্ট শ্রমিকদের মতো সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।' চাকরি হারানোর বিষয়ে বিআইএ সভাপতি বলেন, তারা সম্প্রতি একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং সদস্য সংস্থাগুলোকে এই মুহূর্তে তা না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিমা শিল্পকে নিয়ন্ত্রণকারী আইডিআর-এর চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, কোনো সংস্থার বোর্ড যদি কর্মচারীদের অবসান করার সিদ্ধান্ত নেয় তবে আইডিআরএ খুব বেশি কিছু করতে পারে না। সাহায্যের জন্য বিআইএর আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, চিঠিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে, এবং সমস্যাগুলো সমাধানের উপায় খুঁজতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।