শিল্প খাতের দক্ষ শ্রমিকের অভাব প্রকট

শিক্ষা কারিকুলামের সংস্কার দাবি ডিসিসিআইয়ের

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে শ্রমশক্তির কোনো ঘাটতি না থাকলেও রয়েছে দক্ষ শ্রমিকের অভাব। এ অবস্থায় শিক্ষা কারিকুলামে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা না হলে কোভিড-১৯-পরবর্তী বাংলাদেশে শিল্প খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত 'কোভিড-১৯-পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্প খাতের প্রস্তুতি : বিনিয়োগ ও দক্ষতা' বিষয়ক অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে শিল্প খাতে আগামীর সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরেন বক্তারা। ওয়েবিনারে দেশের শিল্প খাত টিকিয়ে রাখতে এই খাতের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা কারিকুলাম যুগোপযোগী করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর (বিএমইটি) পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. শাখাওয়াত আলী সংযুক্ত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পাবে। ফলে আমাদের মতো দেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে যথাসম্ভব দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ না করা গেলে আগামীর পরিবর্তিত বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দুরূহ হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে এর আগের অর্থবছরের তুলনায় মোট রপ্তানি ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া পুঁজিস্বল্পতা ও বাজার সংকোচনের কারণে রপ্তানিমুখী শিল্প, এসএমই খাত এবং ইনফরমাল খাতে ব্যাপক বেকারত্বের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে দেশের মোট কর্মসংস্থানের ২০ শতাংশ শিল্প খাতকে ঘিরে, তবে পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও এখানে দক্ষ শ্রমিকের যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামীতে কল-কারখানা চালাতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে বলে মনে করেন তিনি। ডিসিসিআই সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির সংকট উত্তরণ ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিতে শিক্ষা কারিকুলামের সংস্কার ও শিল্প খাতে চাহিদামাফিক শিক্ষাব্যবস্থার যুগোপযোগীকরণের সময় এখনই। আরও আগে করতে পারলে ভালো ছিল, তবে এখন সেটা অত্যাবশ্যকীয় বলে মনে করেন তিনি। এ সময় তিনি চতুর্থ শিল্পবিপস্নব ও বিদেশি বিনিয়োগ সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য স্থানীয় অবকাঠামো খাত উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ শ্রমশক্তি সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেয়ার কথা বলেন। এ ছাড়া প্রবাস থেকে ফেরত আসা কর্মী এবং স্থানীয় শিল্প খাত থেকে কর্ম হারানো শ্রমিকদের শিল্প খাতে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য সহযোগিতা প্রদান এবং প্রণোদনা প্যাকেজ হতে এসএমই উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এরই মধ্যে সরকারি পলিটেকনিক্যালগুলোয় ভর্তি হওয়ার জন্য বিদ্যমান বয়সের যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, তা তুলে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন গ্র্যাজুয়েট এবং বিদেশফেরত কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে উলেস্নখ করেন তিনি। শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, দেশের বেসরকারি খাত ও বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিল্প খাতের সম্পর্ক আরও বাড়ানো দরকার। এর মাধ্যমে শিল্প খাতের চাহিদামাফিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু এবং দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত কলেজগুলোয় অধ্যয়নরত ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে শিল্প খাতে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে না পারায় নতুন এই গ্র্যাজুয়েটদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এ সময় তিনি জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শ্রমিকের দক্ষতার অভাব পূরণে 'স্কিল ম্যাপিং' নিয়ে কাজকে আরও বেগবান করার কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ উন্নয়নে সরকার দেশের বেসরকারি খাতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।