অসত্য দাবি বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ'র

কাজ না করে শ্রমিকদের বেতন নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনায় ছুটির পর পোশাক কারখানা চালু করে শ্রমিক সংকটে পড়েছে বলে দাবি করছেন কোনো কোনো রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি ৩০ শতাংশ শ্রমিক কাজ না করে বেতনের ৬৫ শতাংশ তুলে নিচ্ছে। এতে চরম সংকটে পড়েছেন মালিকপক্ষ। তবে এ ধরনের অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ। বিষয়টিকে চাতুরতা হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, এই ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এখন তো আর ছুটি চলছে না। আর সরকার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য যে ঋণ দিয়েছে সেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আর ওই টাকা দিয়ে যে তিন মাসের বেতন দেওয়ার কথা সেই বেতনও দেওয়া হয়ে গেছে। ফলে এ ধরনের অভিযোগ সঠিক না। এখন যারা কাজে যোগ দিবে তারাই বেতন পাবে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তলস্না মডেল গ্রম্নপের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে পোশাক শিল্পের ছুটি শেষ হলেও ৩০ শতাংশ শ্রমিক এখনো কাজে যোগ দিচ্ছে না। ফলে শ্রমিক সংকটে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা। এ কারণে উৎপাদন ব্যাহত তো হচ্ছেই, নির্ধারিত সময়ে শিপমেন্ট দেয়ার বিষয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে কাজে যোগ না দিয়েও ৩০ ভাগ শ্রমিক বেতনের ৬৫ শতাংশ টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছে। আর নতুন শ্রমিক নিয়োগের কথা চিন্তা করেও নিয়োগ দিতে পারছে না শ্রম আইনের কারণে। এ বিষয়ে বিকেএমইএ সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের কোনো সুযোগ নেই। এই সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। তিনিও সরকারের ঋণের টাকা নিয়ে শ্রমিকদের বেতন দিয়েছিলেন। এখন আগের নিয়মেই কারখানা চালাচ্ছেন বলেও জানান। সংবাদ সম্মেলনে মডেল গ্রম্নপের ডিজিএম অরূপ কুমার সাহা জানান, করোনার কারণে বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার, বিকেএমইএ, বিজিএমইএ'র সিদ্ধান্তে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে কারখানা চালু করা হয়। এর আগে এই গ্রম্নপের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করলে ১০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৯৫ ভাগ শ্রমিক ত্রাণ গ্রহণ করে। এখন শ্রমিকরা কারখানার আশপাশে থেকেও কাজে যোগ দিচ্ছে না। নোটিশ দিয়ে, ফোনে যোগাযোগ করার পরও ৩০ শতাংশ শ্রমিক এখনো কাজে যোগ দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা অন্য কোনো কাজ করছে এবং দুই জায়গা থেকে বেতন তুলে নিচ্ছে। শ্রম আইনের কারণে এই ৩০ শতাংশ শ্রমিককে কর্মচু্যতও করা যাচ্ছে না। আর নতুন নিয়োগের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ। ফলে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে যাচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ এ ধরনের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। পোশাক খাতের শীর্ষ এই সংগঠন দুটি থেকে বলা হয়েছে এখন কাজে যোগ না দিয়ে শ্রমিকদের ৬৫ শতাংশ বেতন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে মডেল গ্রম্নপ কেন এ ধরনের অভিযোগ করেছে তাও তাদের বোধগম্য হচ্ছে না বলে জানান। এই বিষয়ে মডেল গ্রম্নপের পরিচালক কানাই সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হঁ্যা শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়েই বেতন তুলে নিচ্ছে। কাজে যোগ না দিয়ে এখন আর বেতন তোলার সুযোগ নেই জানানোর পর তিনি বলেন, আসলে একটা সময় আমরা তাদের বিনা কাজে বেতন দিয়েছি। ত্রাণ দিয়েছি। এখন শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছে না, এটাই আমাদের কষ্ট। আমরা শ্রমিক সংকটে আছি। আমরা শ্রমিক পাচ্ছি না। তবে কাজ না করে বেতন দেওয়ার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। এ সময় তাদের কারখানা দেখে আসার আমন্ত্রণও জানান তিনি। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতনের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। বিশেষ এ তহবিল থেকে ঋণ চেয়ে ২ হাজার ৪৪টি শিল্প কারখানা আবেদন করে। ৪৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন দিতে ৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। জানা গেছে, এ তহবিল থেকে ঋণের জন্য আবেদনের শেষ সময় ছিল গত ২ মে। ওই সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক তাদের ঋণের চাহিদা বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩ মের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়। এর আগে সরকারের নির্দেশনায় ২ এপ্রিল করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সার্কুলারে বলা ছিল, ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবে উৎপাদনের নূ্যনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থ দিয়ে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে। সুদবিহীন এ ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সচল রপ্তানিমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ঋণ/বিনিয়োগ প্রদানের উদ্দেশ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ হতে আর্থিক প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিল হতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনা সুদে বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের চাহিদা মোতাবেক ঋণ/বিনিয়োগ হিসাবে অর্থ প্রদান করবে। কেবলমাত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ তিন মাস বেতন/ভাতা পরিশোধের জন্য ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহণ করতে পারবে। শুধু সচল রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা পাবে। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান মোট উৎপাদনের নূ্যনতম ৮০ শতাংশ রপ্তানি করে ওইসব রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান তাদের শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বিগত ডিসেম্বর ২০১৯, জানুয়ারি ২০২০ এবং ফেব্রম্নয়ারি ২০২০ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে তারা সচল শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে। বেতনের অর্থ শ্রমিক-কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে হবে। কোনো প্রকার নগদ লেনদেন করা যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের মালিক নিজ উদ্যোগে ব্যাংক হিসাব খুলে দেবে। এসব হিসাবে কোনো চার্জ আরোপ করতে পারবে না। ঋণ নেওয়ার পর ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২ বছরে ১৮টি সমান কিস্তিতে ব্যাংককে সার্ভিস চার্জসহ ঋণ পরিশোধ করবে। ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধিত না করলে প্রচলিত নিয়মে শ্রেণিকরণ করতে হবে এবং খেলাপি হিসেবে বকেয়া কিস্তির উপর ২ শতাংশ হারে দন্ড সুদ আরোপ করা যাবে।