কৃষকদের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ল

প্রকাশ | ২৩ জুলাই ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মহামারি করোনাভাইরাসের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকগুলো। যা গেল অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। বুধবার নতুন অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পলস্নী ঋণ এ নীতিমালা এবং কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ। নীতিমালায় বলা হয়, করোনা মহামারির আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এবং সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য তথা দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের উদ্দেশে পলস্নী অঞ্চলে ব্যাপকহারে কৃষি ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পলস্নী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। কৃষি ও পলস্নী ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ঋণ বিতরণ করবে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা কৃষি ও পলস্নী ঋণ বিতরণ করেছে, যা গেল অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বা এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা কম। গেল অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবেও সচল রয়েছে দেশের কৃষি খাতের উৎপাদন। তাই মহামারিতে ঋণ বেশি প্রয়োজন ছিল কৃষকের। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণ সহায়তার দেয়নি। ফলে প্রথমবারের মতো কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে মোট ৩০ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৬ জন কৃষি ও পলস্নী ঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিঙ্কেজের মাধ্যমে ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৭ জন নারী প্রায় ৮ হাজার ৩৫৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কৃষি ও পলস্নী ঋণ পেয়েছেন। আলোচিত সময়ে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৮ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৭ হাজার ১৭৯ জন কৃষক প্রায় ২১ কোটি ২১ লাখ টাকা কৃষি ও পলস্নী ঋণ পেয়েছেন। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং কৃষকদের নিকট কৃষি ঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বেশ কিছু সময়োপযোগী বিষয় যুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো-গয়াল ও তিতির পাখি পালনের জন্য ঋণ প্রদান এবং এ সংক্রান্ত ঋণ নিয়মাচার সংযোজন। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে ঋণ প্রদান। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় গরু মোটাতাজাকরণে ঋণ প্রদান। ঋণ নিয়মাচারে একর প্রতি ফসলের ঋণসীমা বাড়ানো হয়েছে। উলেস্নখ্য, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় তেল ও মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা ছাড়াও শস্য ও ফসল খাতে স্বল্প সুদে (৪ শতাংশ হারে) কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছর (২০২০-২১) জুড়ে বিদ্যমান থাকবে। তফসিলি ব্যাংকসমূহ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় প্রায় ১৭২ কোটি টাকা এবং সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় শস্য ও ফসল খাতে ২৮৬ কোটি কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।