আমদানি শুল্কে শীর্ষে আবুল খায়ের গ্রম্নপ

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

চট্টগ্রাম অফিস
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে এককভাবে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অয়েল গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল। আর বেসরকারি খাতে এককভাবে সর্বোচ্চ ৭৫০ কোটি টাকার রাজস্ব দিয়েছে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রম্নপ। তবে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার কারণে গত বছরের তুলনায় এ অর্থবছর রাজস্ব আয় কমেছে ১ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। মূলধনী যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ও কাঁচামালের ৩৭ শতাংশ শুল্ক। তৈরি পণ্য ৫৭ শতাংশ আর বিলাসী পণ্যের শুল্ক ৫৫০ শতাংশ। জানা গেছে, বেসরকারি খাতের শীর্ষে আবুল খায়ের গ্রম্নপের স্টিল, রড, সিমেন্ট, ঢেউটিন, টোব্যাকো, গুঁড়ো দুধ, চা পাতা ও সিরামিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭শ' কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে। বেসরকারি খাতে শীর্ষ পর্যায়ের রাজস্ব প্রদানকারী অপর প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, উত্তরা মোটরস ৩২২ কোটি, ওয়ালটন লিমিটেড ১৪৪ কোটি, মেঘনা এডিবেল অয়েল লিমিটেড ১২০ কোটি, মেনোকা মটরস ১১০ কোটি, টিকে গ্রম্নপের শবনম ভেজিটেবল অয়েলের ৮৩ কোটি, হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের ৬২ কোটি, বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশ ৬৩ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানই শীর্ষ রয়েছে। মূলত জ্বালানি পণ্য আমদানি থেকে সিংহভাগ রাজস্ব আদায় হয়। বেসরকারি খাতের শীর্ষ পর্যায়ের আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে আবুল খায়ের গ্রম্নপ, পিএইচপি গ্রম্নপ, মেঘনা গ্রম্নপ, বসুন্ধরা গ্রম্নপ, ট্রান্সকমসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আমদানি পণ্য থেকে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আদায় হয়। দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা পণ্যের শুল্ক আদায় করে এই কাস্টমস হাউস। এককভাবে দেশের ৭৩ শতাংশ শুল্ক আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গেল অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানিকারকদের তালিকা থেকে জানা যাচ্ছে সরকারি সাতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে শীর্ষ পর্যায়ে। বাকি ছয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে মোট ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ইস্টার্ণ রিফাইনারি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রগতি। এসব প্রতিষ্ঠান আমদানি করে জ্বালানি তেল, এলএনজি, নতুন গাড়ির যন্ত্রাংশ। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তুলনায় গেল অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কমেছে ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম। যাতে আমদানি মূল্য কমেছে ৫ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। ২৫ লাখ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হয়েছে গেল অর্থবছরে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাকে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের পণ্য ছাড় করার কাজে নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা কমে যাওয়ায় আমদানিও কমেছে। ঢাকার ইসলামপুর ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারসহ দেশের অন্যান্য খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। কাস্টমসের তালিকায় ২০টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টিই সরকারি। বাকি ১৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রম্নপ ১৯৫৩ সালে বিড়ি দিয়ে তাদের ব্যবসা শুরু করে। চট্টগ্রামভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি আমদানিকারকও। দেশের অর্থনীতিতে এসব আমদানিকারকরা বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে বলে মত দিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ২০টি শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রম্নপের মধ্যে ৭টি বিড়ি কোম্পানি থেকে উঠে এসেছে। এদের মধ্যে আবুল খায়ের গ্রম্নপ অন্যতম। এরা ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হয়ে উঠেছে। ব্যাংকের ঋণ সহায়তাগুলো তারা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পেরেছে। এদের বড় হওয়ার প্রক্রিয়াটা অতি দ্রম্নত এবং দিন দিন ত্বরান্বিত হচ্ছে।