রপ্তানির কালোছায়া কাটতে শুরু করেছে

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাস পণ্য রপ্তানির ওপর যে কালোছায়া ফেলেছিল, তা অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে। গত জুনে ২৭১ কোটি ডলারের পর জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়ে হয়েছে ৩৯১ কোটি ডলার। তাতে রপ্তানিকারকদের জন্য চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুটা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক হলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানটি প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে প্রথম মাসে ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশের অধিক। করোনার ধাক্কায় বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে তার আগের বছরের চেয়ে ৬৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি কমে গিয়েছিল। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫৮ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকার সমান। এতে করে সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি পাঁচ বছর আগের অবস্থানে চলে যায়। এ কারণে চলতি অর্থবছর পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। করোনায় একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় গত এপ্রিলে তৈরি পোশাকের রপ্তানি মাত্র ৩৭ কোটি ডলারে নেমে গিয়েছিল। পরের মাসে তা বেড়ে ১২৩ কোটি ডলার হয়। জুনে রপ্তানির প্রধান পণ্য পোশাক খাত বেশ ঘুরে দাঁড়ায়, ওই মাসে রপ্তানি হয় ২২৫ কোটি ডলারের পোশাক। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ৩২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশের মতো কম। তিন মাসের ব্যবধানে পোশাক রপ্তানিতে গতি এলেও বেশ কয়েক হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন পোশাকশিল্পের মালিকেরা। এপ্রিলে কারখানা বন্ধের সময় শ্রমিকেরা মজুরি পেয়েছেন ৬৫ শতাংশ। শ্রমিকের ঈদ বোনাসেও হাত দিয়েছেন মালিকেরা। যদিও এপ্রিল, মে ও জুনের মজুরি দেওয়ার জন্য মার্চে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল করেছিল সরকার। সেই তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানা তিন মাসের মজুরি দিয়েছে। গত জুলাইয়ের মজুরি দেওয়ার জন্য নতুন করে তহবিলের অর্থ পাচ্ছেন পোশাকমালিকেরা। বছরের পর বছর ধরে লোকসানের কারণে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তবে করোনায় অন্য বড় খাতের রপ্তানি কমলেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। জুলাইয়ে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া জুলাইয়ে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। এছাড়া ৪ কোটি ২৫ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ২১ শতাংশ। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বেশ কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'তিন মাসের ভেতরে আমাদের প্রধান রপ্তানি খাত নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরছে, এটা অবশ্যই ভালো খবর। এতে বিদেশি ক্রেতাদের কাছেও ইতিবাচক বার্তা যাবে। আশা করি, পরের মাসগুলোতেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।' খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, কয়েক মাস ধরে শ্রমিকদের সীমিত মজুরি ও কর্মঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। আশা করছি, পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই ধীরে ধীরে কারখানার মালিকেরা শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি দিতে পারবেন।