পোশাকের ক্রয়াদেশ আছে, দাম নেই

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
দেশের পোশাক কারখানাগুলো বর্তমানে ক্রেতাদের কাছে নিয়মিত ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করেছে। ইউরোপের বেশিরভাগ শহরে লকডাউন শিথিল করায় এ ক্রয়াদেশের পরিমাণ ধীরে বাড়ছে। তবে পোশাকের জন্য অন্য সময়ের চেয়ে অনেক কম দাম অফার করছেন বায়াররা। এই বছর মার্চ থেকে মে লকডাউন চলাকালীন সুইডিশ ক্রেতা এইচ অ্যান্ড এম তাদের অধিকাংশ অর্ডার বাতিল করে। এখন অর্ডারগুলো ফের দেয়ার সময় পূর্বের তুলনায় কম দাম অফার করছে। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, বর্তমানে প্রায় সব ক্রেতা ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। তবে আগের চেয়ে ৫-১৫ শতাংশ কম মূল্যে তারা পোশাক বানিয়ে নিতে চান। কিছু ক্ষেত্রে এই মূল্য উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও অনেক কম। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদনকারীরা মহামারি চলাকালীন তাদের শ্রমিকদের কথা ভেবে এই ক্রয়াদেশ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান। পরিসংখানে দেখা যায়, জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানিকারীদের ধারণক্ষমতার প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশের অর্ডার ছিল। আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ অর্ডার রয়েছে। ডেনিম প্যান্ট রপ্তানিকারক সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা জনান, তারা সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও মহামারির ফলে তাদের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের মতোই প্রায় একই পরিমাণ অর্ডার রয়েছে, তবে এবার পরবর্তী দুই প্রান্তিকে কোনো প্রবৃদ্ধির আশা করছেন না। ডেনিম রপ্তানিকারকরা আশা করছেন যে, মহামারি পরিস্থিতি উন্নতি হলে চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক থেকে তাদের ব্যবসা ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে। এমবি নিট ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমইর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, একজন মার্কিন ক্রেতার কাছ থেকে মাত্র ১.২২ ডলার মূল্যে ৩.৫ লাখ ইউনিট টি-শার্টের অর্ডার বুকিং নিয়েছেন। শতভাগ উৎপাদনক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অক্টোবরের আগ পর্যন্ত সক্ষমতার মাত্র ৩০ শতাংশ অর্ডার রয়েছে তার। ডেনিম টেক্সটাইল খাত সূত্রে জানা গেছে, রপ্তানিকারকরা নিজেদের মধ্যে দাম কমানোর অসম প্রতিযোগিতাই কম দাম দেওয়ার অন্যতম কারণ। এজন্য ক্রেতাদের কেউ দোষ দিতে পারেন না। এ অবস্থায় মহামারি চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে নূ্যনতম দাম নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে ভারত এবং কম্বোডিয়া পণ্য বিভাগে নূ্যনতম দাম নির্ধারণ করেছে বলেও তারা জানান। এদিকে ২০১৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী, পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি করায় ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ ছিল। তাই কারখানা মালিকরা আশা করেছিলেন যে ক্রেতারা নিয়ম মেনে যথাযথ মূল্য প্রদান করবেন। ডেনিম টেক্সটাইল কর্মকর্তা মিলার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা স্বল্প হারে কিছু আদেশ নিয়েছেন। ক্রেতাদের সাথে আলোচনার পরে দাম কমাতেও বলেছিলেন। মহামারি পরিস্থিতি উন্নতির সাথে সাথে ক্রেতারাও নিয়মিত মূল্য পরিশোধ করতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ হয়েছেন। ডেনিম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এবং মার্চেন্ডাইজিং বিভাগের এক পরিচালক বলেন, বর্তমান অবস্থায় খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে সরবরাহকারী সবাইকে প্রভাবিত করছে। তারা সাধারণ সময়ে ৬ ডলার মূল্যের একটি পণ্যের প্রতি আইটেমে ০.৮০ ডলার হ্রাস করে তা তৈরি করতে রাজি হয়েছেন। তার পরে তাদের ফ্যাব্রিক সরবরাহকারীদের প্রতি গজে ০.১০- ০.১৫ ডলার কমাতে চাপ দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য আনুষঙ্গিক সরবরাহকারকদের একইভাবে রাজি করাতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক একটি জরিপে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) তথ্য মতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের যা অর্ডার রয়েছে তা আগস্ট-ডিসেম্বর সময়কালের জন্য তাদের উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৩৫ শতাংশ এবং দামের প্রবণতায় গড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সংস্থাটি তাদের সদস্য কারখানার প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে গত সপ্তাহে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিল। সমীক্ষায় প্রায় ২ হাজার অপারেশনাল কারখানার মধ্যে মাত্র ১০০ কারখানার তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সমীক্ষায় প্রসঙ্গে বিজিএমইএর মিডিয়া ও জনসংযোগ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম শুভ বলেন, তারা ২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি অনুমান করেছেন। পোশাক প্রস্তুতকারীরা অক্টোবর থেকে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত মৌসুম হিসাবে বিবেচনা করে যেহেতু তারা গ্রীষ্মের জন্য পোশাক তৈরি করে। তিনি বলেন, সাধারণত অর্ডারের ঘাটতির কারণে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারখানার কাজ কম থাকে। তবে মনিরুল আশা করছেন, বিশ্বব্যাপী মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেপ্টেম্বরের মধ্যে অর্ডার বুকিং আরও ভালো হবে। বেশ কয়েকটি শীর্ষ পোশাক ব্র্যান্ড ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, তারা মহামারি চলাকালীন পোশাক সরবরাহকারীদের নতনি অর্ডার দেবেন।