বড় উত্থানে পুঁজিবাজার

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কিছু পদক্ষেপে দেশের দুই পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এদিকে, টানা ১১ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সোমবার দেশের শেয়ারবাজারে ছোট মূল্য সংশোধন হয়। এই মূল্য সংশোধনের পর বুধবার শেয়ারবাজারে আবার বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এতে দুই বাজারেই সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সূচকের বড় উত্থানের সঙ্গে ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে সিএসইতে লেনদেন কিছুটা কমেছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার হাসান বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে দীর্ঘদিন ধরে অধিকাংশ শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত ছিল। নতুন কমিশন দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশকিছু ভালো উদ্যোগ নেয়ায় বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা ফিরতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ভালো মৌল ভিত্তি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। গুজবে পড়ে কিছুতেই দুর্বল জেড গ্রম্নপের শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। এক সময় ডিএসইর গবেষণা বিভাগে দায়িত্ব পালন করা এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, শেয়ারবাজারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যাদের প্রচুর পরিমাণে কালো টাকা আছে এবং যারা এইসব কালো টাকা বিদেশে পাচার করে থাকে, তারা করোনার কারণে এখন সেটি করতে পারছে না। ফলে, তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে তাদের কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা করছে। এছাড়া করোনার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব থাকায় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণদান কার্যক্রম কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ফলে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অলস তহবিল শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। সবমিলিয়ে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রায় দেড় মাস ধরে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। এর মধ্যে ঈদের আগের শেষ সপ্তাহ থেকে গত রোববার পর্যন্ত শেয়ারবাজারে টানা ১১ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৪৭৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এমন টানা উত্থানের পর সোমবার কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ১২ পয়েন্ট কমে। এই মূল্য সংশোধনের পর বুধবার (জন্মাষ্টমীর কারণে মঙ্গলবার লেনদেন বন্ধ ছিল) লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। প্রথম ১০ মিনিটের লেনদেনেই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং শেষ ঘণ্টায় এসে সূচকের উত্থান প্রবণতা আরও গতি পায়। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২৪ ফেরুয়ারির পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসল। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্‌ সূচক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। শেয়ারবাজারের এই উত্থান প্রবণতা সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সম্প্রতি বিএসইসি বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশি কিছু দুর্বল কোম্পানির আইপিও বাতিল করে দিয়েছে। আবার করোনার প্রকোপও কমে এসেছে। এর ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। যে কারণে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এর বাইরে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। এদিকে ম্যূল সূচকের এমন উত্থানের দিনে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ডিএসইতে ১৯৯ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৫টির এবং ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৭২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮১টির এবং ৩৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।